ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতার্তে আগামী বছরে অনুষ্ঠেয় দেশটির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ২০২২ সালে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট থাকার তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইন্সের ৭৬ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ মে মাসের নির্বাচনে সিনেট পদে লড়বেন না৷ যদিও তিনি একমাস আগে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ দেশটির নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন এই তথ্য৷
কমিশনের মুখপাত্র জেমস হিমেনেজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘সিনেট নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন প্রেসিডেন্ট৷''
ফিলিপাইন্সের সংবিধান অনুযায়ী, দুতার্তের পক্ষে আরও এক মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব নয়৷ তার ছয় বছরের মেয়াদকাল আগামী জুনে শেষ হবে৷
নিজের দেশে ‘‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'' ঘোষণা করে বিপুল বিতর্কের জন্ম দেন দুতার্তে৷ সেসময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেকে প্রাণ হারান৷ বিষয়টি নিয়ে দুতার্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তদন্ত হচ্ছে৷ অনেকে মনে করেছিলেন এই তদন্ত চলাকালে সিনেট পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজনীতিতে থাকবেন তিনি৷
অবশ্য, দুতার্তে কেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন সে বিষয়ে তিনি নিজে, তার কার্যালয় থেকে কিংবা তার দলের পক্ষ থেকে কোনো কারণ জানানো হয়নি৷ এর আগে শুরুতে তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দেন৷ পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানান৷ কিন্তু তারপর আবার সিনেট পদে লড়ার ঘোষণা দিলেও শেষমেষ সেখান থেকেও তিনি সরে দাড়াচ্ছেন বলে ঘোষণা আসলো৷
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ফিলিপাইন্স
নতুন সন্ত্রাসবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ম্যানিলাসহ ফিলিপাইন্সের বেশ কয়েকটি শহরে৷ করোনা মহামারির মধ্যেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী৷ কী আছে এই বিলে?
ছবি: Reuters/E. Lopez
নতুন আইন
২০০৭ সালের হিউম্যান সিকিউরিটি অ্যাক্টের উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ২০২০ সালের অ্যান্টি টেররিজম বিলটিকে৷ ফিলিপাইন্সের সেনাবাহিনী বলছে, পুরোনো আইনের অধীনে আধুনিক যুগের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ ফলে অনলাইনে নতুন সদস্য রিক্রুটমেন্ট ও সন্ত্রাসী পরিকল্পনার মতো অপরাধকে এর আওতায় আনা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
কী আছে নতুন আইনে?
নতুন আইনে নিরাপত্তা বাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের না করে বা আদালতে হাজির না করে দীর্ঘসময় হেফাজতে রাখতে পারবে, এমনকি ৯০ দিন নজরদারিও চালাতে পারবে৷ এছাড়া এই আইনে একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে৷ এই কাউন্সিলই সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিতর্ক কেন?
প্রস্তাবিত আইনটিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ব্যাপক ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা৷ তাদের দাবি, এর ফলে সরকারের বিরোধিতা করলেই হেনস্থার সুযোগ তৈরি হবে৷ আইনটির বিভিন্ন ধারায় মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হবে বলে অভিযোগ তাদের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
পক্ষের কথা
বিলটির সমর্থকেরা বলছেন, মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধারা রাখা হয়েছে আইনটিতে৷ দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ডেলফিন লরেঞ্জানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করবে, তারা সন্ত্রাসী নয়৷ আমাদের সংবিধানই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে৷’’
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিপক্ষের মন্তব্য
দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য আইনটি মানতে নারাজ৷ তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমনিতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে৷ এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও প্রায়ই এ নিয়ে সমালোচনা করেছে৷ এই আইনের ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের সুযোগ আরো বাড়বে বলে দাবি তাদের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
মুসলিমবিদ্বেষ বাড়ার শঙ্কা
দক্ষিণের মিন্দানাও প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি৷ প্রদেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদেরও বাস৷ প্রদেশের আইনপ্রণেতারাও মনে করছেন, নতুন আইন পাস হলে তা সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিক্ষোভ-আন্দোলন
বিলটিতে শিগগিরই সই করার কথা প্রেসিডেন্ট দুতার্তের৷ এরপরই আইনে পরিণত হবে সেটি৷ তবে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারও সুযোগ থাকছে৷ কিন্তু আইন পাসের আগেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছেন বিরোধীরা৷ করোনা সংক্রমণের মধ্যেও রাজধানী ম্যানিলায় জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/A. Ayacan
স্বাধীনতা দিবস
শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজনেই বিক্ষোভের ডাক দেন বিরোধীরা৷ দেশটির আইনে সমকামীদের অধিকার স্বীকৃত হলেও সরকারের বিরুদ্ধে নানা সময়েই অভিযোগ উঠেছে সমকামী অধিকারকর্মীদের হেনস্তা করার৷ নতুন আইনে তাদেরও হয়রানির সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
হংকংয়ের চেয়েও জটিল পরিস্থিতি
অধিকারকর্মীরা বলছেন, হংকং নিয়ে চীনের পাস করা নতুন আইনের চেয়েও বেশি ‘নির্যাতনমূলক’ হতে পারে ফিলিপাইন্সের এই আইন৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
মহামারিতে বিক্ষোভ
বিক্ষোভের ঘোষণার পর ম্যানিলা পুলিশ ঘোষণা দেয় সামাজিক দূরত্ব না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার৷ তাই বলে বিক্ষোভ বন্ধ রাখেননি আন্দোলনকারীরা৷ বরং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রেখে মিছিল বের করেছেন তারা৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
পোষা কুকুরও সঙ্গী
ছবিতে এক আন্দোলনকারী তার প্রিয় পোষা কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে এসেছেন৷ কুকুরের গায়েও ঝুলছে প্ল্যাকার্ড, দাবি জানানো হয়েছে বিতর্কিত বিল বাতিলের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
আন্দোলনে সৃষ্টিশীলতা
প্রেসিডেন্ট দুতার্তের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ এই অভিযানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন বলে ধারণা বিভিন্ন অধিকার গ্রুপের৷ এছাড়া বিরোধীমত দমনেও দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ছবিতে এক আন্দোলনকারীকে মরদেহের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে৷ তার পাশের কাগজে লেখা, ‘‘দুতার্তেকে উচ্ছেদ করো৷’’
ছবি: Reuters/E. Lopez
12 ছবি1 | 12
নির্বাচননাকরারকারণকীহতেপারে?
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দুতার্তের এই সিদ্ধান্তের অর্থ তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাড়াচ্ছেন এমন নাও হতে পারে৷ ম্যানিলার দে লা সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আন্থনিও কন্ত্রেরাস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি খুবই বিভ্রান্তিকর৷ তিনি সম্ভবত এমন কাউকে নিশ্চিত করেছেন যিনি তাদের পক্ষে কাজ করবেন এবং তাদের স্বার্থরক্ষা করবেন৷''
ফিলিপাইন্সে মে মাসের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট থেকে পৌরসভা অবধি ১৮ হাজার রাজনৈতিক পদে বেশ কয়েকহাজার মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন৷
দুতার্তের মেয়ে সারা ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে এবং ছেলে সেবাস্তিয়ান ডেভো শহরের মেয়র পদে লড়বেন৷ দুতার্তে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এই শহরের মেয়র ছিলেন৷