বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায় ভারত৷ মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের উত্থান তারা দেখতে চায় না৷ বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং বলেছেন নির্বাচনে যত বেশি দল অংশ নেয় ততই ভালো৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই খোলাখুলি মন্তব্যকে স্বাভাবিক মনে করেন বাংলাদেশ নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ৷ কারণ তিনি মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে৷
বুধবার ঢাকা সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷
এরমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি এখন সবচেয়ে আলোচিত৷ সুজাতা সিং-এর সঙ্গে বৈঠকের পরই এরশাদ সংবাদ মাধ্যমকে তাঁর দলের মন্ত্রীদের নির্বাচনকালীন সরকার থেকে পদত্যাগের নির্দেশের কথা জানান৷ তিনি দাবি করেন সুজাতা সিং তাঁকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেছেন৷ এরশাদের ভাষায় সুজাতা বলেছেন, ‘‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না গেলে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান হবে৷ তারা ক্ষমতায় আসবে৷''
এদিকে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বলেছেন৷ খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী জানান, সুজাতা সিং বলেছেন বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যা যা করা দরকার, তা করবে ভারত৷ ভারত চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক৷
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও সুজাতা সিং বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন৷ বলেছেন নির্বাচনে যত বেশি দল অংশ নেবে ততই ভালো৷ তাঁর দেশ চায় বাংলাদেশের নির্বাচনে অধিক সংখ্যক দল অংশগ্রহণ করুক৷
এদিকে বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চায় ভারত৷ বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে কারা ক্ষমতায় যাবে, কিভাবে নির্বাচন হবে৷ তবে ভারত চায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক, অব্যাহত থাকুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷''
জানিপপ-এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেক জানান, সুজাতা সিং-এর সফরে স্পষ্ট হয়েছে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান, সেটা বেশ খোলাখুলি বলে মনে করেন ড. কলিমুল্লাহ৷ তিনি বলেন ভারত বাংলাদেশে একটি নির্বাচন চায়, চায় ধারাবাহিকতা৷ আর অবস্থানগত কারণেই ভারত বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানকে নিরুৎসাহিত করবে, চাইবে মৌলবাদ বা উগ্রবাদের উত্থান যাতে বাংলাদেশে না ঘটে৷ এটা হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে৷
হরতালের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহে হরতালের সূচনা করে জামায়াত-শিবির৷ এএফপির হিসেবে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে ৪ই মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ হরতালের কিছু ছবি নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বরিশালে অগ্নিসংযোগ
জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিন ৪ই মার্চ বরিশালে মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগ করছে দলটির সমর্থকরা৷ এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হরতালের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলায় অংশ নেয় জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা৷ উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা৷
ছবি: Reuters
সহিংসতায় নিহত কমপক্ষে ৮০
ঢাকায় ৪ মার্চ হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছাড়াও পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, নিরীহ পথচারী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকও রয়েছেন৷
ছবি: Reuters
ট্রেনে আগুন
ঢাকায় হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানরত একটি ট্রেনে আগুন লাগে৷ ছবিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন জনতা৷ ঢাকা থেকে নোয়াখালিগামী ট্রেনটির তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে৷ রেলমন্ত্রী মাজিবুল হক ট্রেনে অগ্নিসংযোগের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: Reuters
মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার
হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ ঢাকার একটি মসজিদ থেকে জামায়াত কর্মী সন্দেহে কয়েকজনকে আটকে করে পুলিশ৷ জামায়াতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংসতার তীব্রতা বেড়ে যায়৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি এই রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় ৪ মার্চ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters
অব্যাহত অগ্নিসংযোগ
হরতালের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে অগ্নিসংযোগ৷ রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, গাড়িতে আগুন, ট্রেনে আগুন, মার্কেটে আগুন – চলতি হরতালে সবই দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে এখন হরতালের সহিংসতার ভিডিও পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের সব প্রান্তে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৩ মার্চ রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করছে জামায়াতের সমর্থকরা৷
ছবি: Reuters
‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের...
জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নেমেছিলেন এই অটোরিকশা চালক৷ ২ মার্চ ঢাকায় জামায়াতের কর্মীদের ছোড়া ইটের টুকরায় গুরুতর আহত হন তিনি৷ অটোরিকশাও ভেঙ্গে গেছে৷ রাজনৈতিক সহিংসতায় এভাবেই ‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের৷
ছবি: Reuters
শরিক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি’র তাণ্ডব
দুই মার্চ ঢাকায় এভাবেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কর্মীরা৷ সেদিন ঢাকায় মিছিল করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা৷ পুলিশ অবশ্য বিরোধীদের কঠোর হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
রাবার বুলেট, বুলেট
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বন্দুকে রাবার বুলেট ‘লোড’ করছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেদিন সংঘর্ষ চলাকালে সত্যিকারের বুলেটও ব্যবহার করে পুলিশ৷ এছাড়া হরতাল চলাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ আত্মরক্ষায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চোখের সামনে জ্বলছে আগুন
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি সমর্থকরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ ছবিতে পুলিশ একটি জ্বলন্ত গাড়ি দেখছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷
ছবি: Reuters
একদিনে নিহত কমপক্ষে ৩৪
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনে সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি৷ এদের মধ্যের ২৩ জন পুলিশ এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদিনে এত সহিংসতা দেখেনি বাংলাদেশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
কলিমুল্লাহ বলেন ভারতকে বাংলাদেশের অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না৷ কারণ ভারত মনে করে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক আত্মীয়ের৷ আর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ঐতিহাসিক দিক রয়েছে৷ তাই ভারত বাংলাদেশ নিয়ে একটু খোলাখুলি কথাই বলছে৷
নির্বাচন যথাসময়ে হবে
বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবে৷ কোনো কারণে নির্বাচনের তারিখ পেছানো মানবে না তারা৷ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন৷
এদিকে রাতেই জাতীয় পার্টির মুখপাত্র রহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন সর্বদলীয় সরকার থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপদেষ্টারা বৃহস্পতিবারই পদত্যাগ করবেন৷