1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কীভাবে, কারা করছেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আসছেন৷ ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষক দল আসে৷

ছবি: bdnews24.com

এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র পর্যবেক্ষকরা আসছেন না৷ তবে তাদের দু'জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন৷ ২০০৮ সালে ইইউ-র ৮০০ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসেন৷ তারা তিন ধাপে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন তখনকার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াৎ হোসেন (অব.)৷ তারা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরেও পর্যবেক্ষণ করেন৷ তাদের মধ্যে দীর্ঘ, মাঝারি এবং স্বল্পকালীন পর্যবেক্ষক ছিলেন৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা৷ ফলে কয়েকটি দেশের বিদেশি পর্যবেক্ষ এলেও ইইউ পর্যবেক্ষকরা আসেনি৷ আরো কেউ কেউ আসার কথা বললেও শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বাতিল করে৷

‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনের আগে থেকেই শুরু হয়’

This browser does not support the audio element.

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২টি দেশের ২২৫ জন বিদেশি এবং দেশের ৬৯টি সংস্থার ২ লাখ ১৮ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন৷ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি ৫৯৩ জন এবং স্থানীয় ৭৫টি সংস্থার ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন পর্যবেক্ষক ছিলেন৷ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চারজন, ৩৫টি দেশীয় সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন৷ ফলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশে একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ 

এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং ভারত এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষক পাঠানো নিশ্চিত করেছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের ১১৮টি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তবে এবার অধিকার, ফেমা এবং ব্রতী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি পায়নি৷

নির্বাচন কমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠি লিখে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর আমন্ত্রণ জানালেও তারা তাতে রাজি হয়নি৷ ইইউ এবার পর্যবেক্ষক কেন পাঠাচ্ছে না সেই প্রশ্নের জবাবে গত মাসে বাংলাদেশে ইইউ-র হেড অফ ডেলিগেশন রেন্সজে তেরিংক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি কার্যকর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো বড় একটি কাজ৷ এতে অনেক সদস্য থাকেন এবং এর প্রস্ততি নিতে মাসের পর মাস সময় লাগে৷ এটা অনেক ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং এর জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু এটা এবার বাংলাদেশের জন্য আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি৷ এর মানে এই নয় যে, আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি না৷ আমাদের দু'জন প্রতিনিধি থাকবেন, তাঁরা দেখবেন৷ আপনাদের স্থানীয় পর্যবেক্ষক থাকবেন৷ তাঁরা হয়ত অনেক ভালো কাজ করবেন৷ তাঁরা দেখবেন, নির্বাচনের সময় আসলে কী ঘটে৷''

ইইউ কীসের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক পাঠায় – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আসলে আমাদের অগ্রাধিকার বিবেচনা করতে হয়৷ পৃথিবীর অনেক দেশে নির্বাচন হয়৷ আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, কোথায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো অর্থপূর্ণ হবে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই কাজটি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ থাকে আরো অনেক বিষয়৷'' 

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷ নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে  জানিয়েছেন, ‘‘পর্যবেক্ষকরা কোনো সংবাদ মাধ্যম বা লাইভ অনুষ্ঠানে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারবেন না৷ কোনো মন্তব্য করতে পাববেন না৷ তারা কোনো ছবিও তুলতে পারবেন না৷'' এছাড়া নির্বাচন কমিশনের দেয়া পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে যে কেউ বুঝতে পারেন যে, তিনি একজন পর্যবেক্ষক৷ 

পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে তাঁর যে কথা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে তা হলো – ‘‘ব্রিটেনের পুলিশের মতো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষকরা শুধু পর্যবেক্ষণ করবেন৷ আমাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবেন না৷'' এর ব্যতিক্রম হলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন বাতিল হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ৩ ডিসেম্বর  বাংলাদেশের পরাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে জানান, ‘‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷'' তিনি আবারো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবার ১২টি পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে৷ এছাড়া ঢাকায় মার্কিন মিশনের ৮ থেকে ১০টি টিম ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে৷

এছাড়া ইইউ-র দু'জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডেভিড ম্যাকলিস্টার ও লিন্ডা ম্যাকইভান ২৭ নভেম্বর ঢাকায় এসেছেন৷ তাঁরা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এরইমধ্যে বৈঠক করলেও নিয়ম মেনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বা কোনো মন্তব্য করেননি৷

‘‘ক্রেডিবল ইলেকশন' অবজারভারের ওপর নির্ভর করে না’

This browser does not support the audio element.

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব এতটুকই যে, তাঁরা যদি যঠিকভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এক ধরনের চাপ তৈরি হয়৷ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে কিনা, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে কিনা, সেটা তারা বুঝতে পারেন৷ কারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্বাচনের আগে থেকেই শুরু হয়৷ তাঁরা তাঁদের পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মহলে তুলে ধরলে ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়৷ এবার অবশ্য তাঁরা কোনো কথাই বলতে পারবেন না৷ সংবাদমাধ্যমেও কথা বলতে পারবেন না৷ তাহলে তো তাঁদের আসারই দরকার নেই৷ আমার মনে হচ্ছে, নিয়মের বেড়াজালে আটকে দিয়ে তাঁদের কাজ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে৷ আর এখানেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়৷'' 

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আর্থিক কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না – এটা আমার মনে হয় না৷ আমার মনে হয়, তাদের মধ্যে হয়ত এই সংশয় কাজ করেছে যে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না৷ প্রশ্ন উঠেছে তাদের নিয়মের বেড়াজালে আটকে ফেলা হবে কিনা৷ তাই হয়ত পণ্ডশ্রম হবে ভেবে তারা আসছেন না৷''

এবারের নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি ‘ক্রেডিবল ইলেকশন' অবজারভারের ওপর নির্ভর করে না৷ সেটা নির্ভর করে নির্বাচন প্রশাসন, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সরকার ও ভোটারদের ওপর৷ তবে অবজারভার থাকার গুরুত্ব হলো – নির্বাচনটা কেমন হলো, নির্বাচনে মানুষের মতামত কতটুকু প্রতিফলিত হলো, কতটুকু গ্রহণযোগ্য হলো – এসব ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষের একটা মতামত পাওয়া যায়৷'' 

‘আমাদের দু’জন প্রতিনিধি থাকবেন, তাঁরা নির্বাচন দেখবেন’

07:54

This browser does not support the video element.

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সবাই এলে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে একটা মতামত পেতে পারতাম৷ কিন্তু তাঁরা সবাই না এলে নির্বাচনের গুণগত মানে কোনো হেরফের হবে না, যদি না নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত অ্যাক্টরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে দু'টি নীতিমালা বা গাইডলাইন আছে৷ একটি দেশি পর্যবেক্ষক এবং আরেকটি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য৷ এখন এসে যদি নির্বাচন কমিশন বলে যে, তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না – এটা নির্বাচন কমিশনের গৃহীত নীতিমালার সঙ্গে যায় না৷''

তবে দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে আশাবাদী অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘১৯৯১ সাল থেকে আমাদের দেশীয় পর্যবেক্ষকরা বিাভন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আসছেন৷ তাঁদের মধ্যে একটা পেশাদারিত্ব গড়ে উঠেছে বলে আমার মনে হয়৷ তাঁরা যদি দলনিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ও স্বাধীভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, তাতেও নির্বাচন নিয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ আশা করতে পারি৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ