৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলছে নববর্ষের প্রথম দিন বুধবার থেকে৷ তার ওপর শনিবার থেকে আবারো সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক তৃতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচির পর, শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ ফলে ৫ই জানুয়ারি ভোটের দিন বিরোধী দলের হরতাল এবং অবরোধ থাকছে একই সঙ্গে৷ তবে শুক্রবার দুপুর থেকেই বিভিন্ন জেলায় ভোটের দিন হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা আসছিল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে৷ ড. ওসমান ফারুক জানিয়েছেন, ‘‘নির্বাচন প্রতিহত এবং খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ করার প্রতিবাদে নতুন করে হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে৷''
অবরোধের সঙ্গে আবার হরতাল কেন? শুধু অবরোধে কি নির্বাচন প্রতিহত করা যাবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করতে অবরোধের সঙ্গে হরতালও দেয়া হয়েছে৷'' তিনি বলেন, দুটি কর্মসূচির প্রভাব দু'রকম৷ তাই অবরোধ আর হরতাল মিলিয়ে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা সম্ভব হবে৷ তিনি বলেন, এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় করতে এছাড়া আর কোনো পথ নেই৷
অবরোধে অবরুদ্ধ অর্থনীতি, স্থবির জনজীবন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করে, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৫ থেকে সাড়ে ৫ ভাগের বেশি হবে না – বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যা হবে একটি বড় ধাক্কা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অনিশ্চিত অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছেন এই মহিলা যাত্রী৷ অবরোধের কারণে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটায় কখন যে ট্রেন আসবে তার কোনো ঠিক নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিপর্যস্ত অর্থনীতি
অবরোধের কারণে সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ৷ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘকালীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে৷ তাই সহিংসতা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় সম্প্রতি সাদা পতাকা মিছিল করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ী৷
ছবি: DW/M.Mamun
নীরব বাস টার্মিনাল
মহাখালী বাস টার্মিনালে থেমে আছে দূরপাল্লার বাস৷ বিরোধী জোটের চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে বাসগুলো টার্মিনাল ছেড়ে যেতে পারেনি৷ এতে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি তো হয়েছেই, ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির হিসেব নেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
চারদিন ধরে কাজ নেই
আশি বছর বয়সি শুকুর আলীর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এই ঠেলাগাড়ি৷ গত চারদিন ধরে গাবতলীতে কোনো পণ্য না আসায় অলস বসে আছেন তিনি৷ এই কদিনে একটি পয়সাও হাতে না আসায় কিভাবে চলবে, তাই ভাবছেন এই বৃদ্ধ৷ আর ভাবছেন, নিজের প্রিয় দেশ আজ কোন পথে?
ছবি: DW/M.Mamun
ভোগান্তির শেষ কবে?
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে নিয়মিত জুতার পসরা সাজিয়ে বসেন শুভ৷ অন্য সময় টার্মিনালে বহু মানুষের আনাগোনা থাকায় ব্যবসা মন্দ চলে না৷ তবে অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ তার বিক্রিও৷ শুভ রাজনীতি বোঝে না, ওর মনে শুধু প্রশ্ন, ওদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের এই ভোগান্তির শেষ কবে?
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
মহিলা শ্রমিকদের কি হবে?
অবরোধের কারণে পরিবহণ সংকট ও সহিংসতার ভয়ে এই পোশাক শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে৷ না গেলে চাকরির ভয় , তাছাড়া সংসার চলবে কি করে,আছে সেই চিন্তাও? ছবিটি ঢাকার কল্যাণপুরের৷ টানা অবরোধের কারণে পোশাক খাতে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/M.Mamun
অলস সময়
অবরোধের কারণে ট্রাক শ্রমিকদের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকে৷ ঢাকার গাবতলীতে কাজের অপেক্ষায় আছেন এই শ্রমিকরা৷ দেশের রাজনীতিকরা কি চায় সেটা তারা জানতে চান না৷ তবে তাদের চাহিদা খুব বেশি নয় – শুধু পেট ভরে খাওয়া, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো আর নিশ্চিন্তে ঘুমানো৷
ছবি: DW/M.Mamun
আবারো শূন্য হাতে?
অবরোধের কারণে নৌকা চালকদের ব্যস্ততা নেই বললেই চলে৷ ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের এই নৌকা চালকদের মনে প্রশ্ন – কোনো যাত্রী আসবেন কি, নাকি শুধুই অপেক্ষা, অর্থাৎ আবারো খালি হাতে বাড়ি ফেরা?
ছবি: DW/M.Mamun
কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া বন্ধ নয়!
ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পণ্য কম আসায় কাজ নেই শ্রমিকদের৷ কাজ বন্ধ বলে তো আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ থাকতে পারে না! দু’বেলা যে খাওয়া চাই৷ খেতে বসে কেউ কেউ ভাবছেন ঘরে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যরা কি কিছু খেতে পেল? কারণ গত কয়েকদিন ধরে যে কোনো রোজগার নেই৷
ছবি: DW/M.Mamun
সাধারণ মানুষেরই কষ্ট
কারওয়ান বাজারে ভ্যান শ্রমিকদেরও কাজ নেই৷ শুয়ে বসে কতক্ষণ? আর খিদে পেলে? অবরোধের কারণে যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অবস্থা নিয়ে কি কেউ ভাবছেন?
ছবি: DW/M.Mamun
আড়ত শ্রমিকদেরও কাজ নেই
অবরোধের কারণে কারওয়ান বাজারের এই আড়ত শ্রমিকরা তাস খেলে সময় কাটাচ্ছেন৷ কিন্তু এভাবে ক’দিন চলে? সংসারের কথা মনে হলে তাস খেলে সময় কাটানোর সামান্য আনন্দটুকুও যে আর থাকে না!
ছবি: DW/M.Mamun
11 ছবি1 | 11
এর জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মরা গরুর দাঁত গুনে লাভ নেই৷ বিভ্রান্ত বিএনপি এখন পথ হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে৷ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা করে গণবিরোধী দলে পরিণত হয়েছে৷ তাই অবরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের মানুষ৷ আর হরতালেও কাজ হবে না৷''
টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, দুই দলের দায়িত্বহীন আচরণ দেশকে এখন সংকটের চরম সীমায় নিয়ে গেছে৷ একদল অবরোধের ওপর হরতাল ডাকছে৷ সহিংসতায় প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ আর আরেক দল একটি একপাক্ষিক নির্বাচন করছে, যেখানে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, এই অদ্ভুত সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর যত দ্রুত সম্ভব সব দলকে নিয়ে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে৷ নয়ত বিরোধী দল হরতাল এবং অবরোধের সঙ্গে আরো নতুন কোনো কর্মসূচি যোগ করতে পারে৷ আর সেটা হলে, সরকার তা দমাতে আরো কঠোর অবস্থানেও যেতে পারে৷
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেটে বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর আলোচনা সাপেক্ষে আরেকটি নির্বাচন হতে পারে৷ তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন হতেই হবে৷ তবে আরেকটি নির্বাচন কোন সময়ে হতে পারে, তা তিনি জানাননি৷