বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আবারো ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে৷ বিএনপি নেতা ড. ওসমান ফারুক বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানালেও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু তাঁর বেতার টেলিভিশন ভাষণে দেশবাসীকে উত্সবমূখর পরিবেশে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
নির্বাচনের দু'দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক তাঁর গুলশানের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ এই নির্বাচনে দেশের মানুষের কোনো আগ্রহ নাই৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতিমধ্যে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ তারপরও প্রধানমন্ত্রী একগুঁয়েমির পথ থেকে ফিরে আসছেন না৷''
তিনি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘এখনো সময় আছে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য সংলাপের ব্যবস্থা নিন৷ এই প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মানবে না৷ কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবে না৷''
ড. ওসমান ফারুকের দাবি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে৷ আর সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে তার নীলনকশা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে দেশকে আজ দলীয় সন্ত্রাসের লীলাভূমিতে পরিণত করা হয়েছে৷ মানবতা পিষ্ট হচ্ছে যৌথবাহিনীর বুটের তলায়৷
তাই তিনি জনগণের প্রতি বিএনপির চেয়ারপার্সনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে ‘না' বলার আহ্বান জানান৷
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেতার ও টেলিভিশনে তাঁর নির্বাচনি ভাষণে বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম জনগণের ওপর আস্থা রেখে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে৷ কিন্তু আমাদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই৷'' তিনি বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের জন্য নানাভাবে চেষ্টা হয়েছে৷ তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে নিজে টেলিফোন করেছেন৷ শেষ পর্যন্ত মহাচিব পর্যায়েও বৈঠক হয়েছে৷ তারপরও বিএনপি নির্বাচনে আসেনি৷ দেশের সংবিধান সমুন্নত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহ রাখতে এই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটকে নির্বাচিত করেছিল৷ নির্বাচনে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ তা পূরণের চেষ্টা করেছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচনি ওয়াদার চেয়েও বেশি কাজ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবে৷'' এ জন্য দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন আশা করেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল আন্দোলনের নামে, হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে৷ ককটেল আর পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে৷ রাস্তা কেটে, রেললাইন উপড়ে ফেলে, কাছ কেটে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে৷
শেখ হাসিনা ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকার এবং উপ-নির্বাচনে আপনারা যেভাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছেন, সেভাবেই আগামী ৫ই জানুয়ারি উত্সবমূখর পরিবেশে ভোট দেবেন৷ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবেন৷''
উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৩৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি দল এই নির্বাবচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে৷
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷