আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আবারো মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল৷ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়েই এখন চলছে বাকযুদ্ধ৷ ফলে শেষ পরিণতি সংঘাতের আশঙ্কাই করছেন দেশের সাধারণ মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে হঠাত্ করে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান সংশোধন করেছেন৷ আমি সংবিধানে বিশ্বাস করি৷ আগামী নির্বাচন নিয়ে যা কিছু হওয়ার তা সংবিধান মোতাবেকই হবে৷ এর থেকে একচুলও নড়বো না৷''
জবাবে রবিবার মধ্যরাতে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘জনগণের আন্দোলনের মুখে তিনি নড়তে বাধ্য হবেন৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জাতির সঙ্গে রসিকতা, আপত্তিকর ও উসকানিমূলক৷''
হরতালের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহে হরতালের সূচনা করে জামায়াত-শিবির৷ এএফপির হিসেবে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে ৪ই মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ হরতালের কিছু ছবি নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বরিশালে অগ্নিসংযোগ
জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিন ৪ই মার্চ বরিশালে মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগ করছে দলটির সমর্থকরা৷ এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হরতালের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলায় অংশ নেয় জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা৷ উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা৷
ছবি: Reuters
সহিংসতায় নিহত কমপক্ষে ৮০
ঢাকায় ৪ মার্চ হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছাড়াও পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, নিরীহ পথচারী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকও রয়েছেন৷
ছবি: Reuters
ট্রেনে আগুন
ঢাকায় হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানরত একটি ট্রেনে আগুন লাগে৷ ছবিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন জনতা৷ ঢাকা থেকে নোয়াখালিগামী ট্রেনটির তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে৷ রেলমন্ত্রী মাজিবুল হক ট্রেনে অগ্নিসংযোগের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: Reuters
মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার
হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ ঢাকার একটি মসজিদ থেকে জামায়াত কর্মী সন্দেহে কয়েকজনকে আটকে করে পুলিশ৷ জামায়াতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংসতার তীব্রতা বেড়ে যায়৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি এই রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় ৪ মার্চ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters
অব্যাহত অগ্নিসংযোগ
হরতালের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে অগ্নিসংযোগ৷ রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, গাড়িতে আগুন, ট্রেনে আগুন, মার্কেটে আগুন – চলতি হরতালে সবই দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে এখন হরতালের সহিংসতার ভিডিও পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের সব প্রান্তে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৩ মার্চ রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করছে জামায়াতের সমর্থকরা৷
ছবি: Reuters
‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের...
জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নেমেছিলেন এই অটোরিকশা চালক৷ ২ মার্চ ঢাকায় জামায়াতের কর্মীদের ছোড়া ইটের টুকরায় গুরুতর আহত হন তিনি৷ অটোরিকশাও ভেঙ্গে গেছে৷ রাজনৈতিক সহিংসতায় এভাবেই ‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের৷
ছবি: Reuters
শরিক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি’র তাণ্ডব
দুই মার্চ ঢাকায় এভাবেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কর্মীরা৷ সেদিন ঢাকায় মিছিল করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা৷ পুলিশ অবশ্য বিরোধীদের কঠোর হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
রাবার বুলেট, বুলেট
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বন্দুকে রাবার বুলেট ‘লোড’ করছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেদিন সংঘর্ষ চলাকালে সত্যিকারের বুলেটও ব্যবহার করে পুলিশ৷ এছাড়া হরতাল চলাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ আত্মরক্ষায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চোখের সামনে জ্বলছে আগুন
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি সমর্থকরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ ছবিতে পুলিশ একটি জ্বলন্ত গাড়ি দেখছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷
ছবি: Reuters
একদিনে নিহত কমপক্ষে ৩৪
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনে সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি৷ এদের মধ্যের ২৩ জন পুলিশ এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদিনে এত সহিংসতা দেখেনি বাংলাদেশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই নেতার এমন বক্তব্যে সামনের সময়ে রাজনৈতিক পরিবেশ যে সংঘাতময় হয়ে উঠছে তা এক প্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়৷ তাছাড়া ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আন্দোলনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷ বৈঠকে অংশ নেতা ১৮ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, অক্টোবরের থেকে বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করবে বিরোধী দল৷ এর আগে চলতি মাসে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, সেপ্টেম্বরে ৭টি বিভাগীয় শহরে ৭টি মহাসমাবেশ করা হবে৷ অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটা সমাবেশ করা হবে৷ এরপর ঢাকায় সর্বশেষ মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে টানা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন৷ এর আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান বহির্ভূত নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় দেশে অসাংবিধানিক বা অগণতান্ত্রিক কোনো কিছু আসবে না৷ তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ৷ এই নির্বাচনে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন৷ নতুন সরকার প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা বিশ্বাসী৷ আশা করি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহ অরাজকতা পরিহার করে নির্বাচনমুখী হবে৷'' দেশ ও নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের স্বার্থেই জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে বিএনপি তাতে অংশ নেবে না৷ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করে বিএনপি৷ দলের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশ অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে৷ সরকার নিজেই এর অপচেষ্টা চালাচ্ছে৷'' তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালতের রায় বিএনপি মানে না, প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, আদালতের দু'টি রায় ছিল৷ সরকার একটি মেনেছে৷ আরেকটি চেপে গেছে৷ সরকার দেশকে অন্ধকার সুড়ঙ্গে নিক্ষেপ করছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল৷