নির্বাচন, সংস্কার, বিচারে গুরুত্ব সরকারের, দলগুলোর সাথে বৈঠক
২৪ মে ২০২৫
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেছে একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা৷
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে শনিবার এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে যে, এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷
‘‘দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ,'' লেখা হয়েছে বিবৃতিতে৷
শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকের পর এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়৷ এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে৷ কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে৷
এদিকে, ঢাকায় সন্ধ্যায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বেঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস৷ বিএনপির প্রতিনিধি দল বৈঠক শেষে এক লিখিত বক্তব্য সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথম থেকেই সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবী করছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে৷''
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার প্রসঙ্গে হোসেন বলেন, ‘‘বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এজন্য আওয়ামীলীগ এর বিচারের দাবী সবচেয়ে বেশি বিএনপির৷ এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারের দায়িত্বে গেলে বিচারের আওতায় এনে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে৷''
এসময় তিনি আরো উল্লেখ করেন যে ‘‘বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরঞ্চ প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে৷''
শনিবার রাতে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা৷
নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দরকার উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হতে হবে৷ সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না৷ আবার সব সংস্কার এই সরকার করতে পারবে না৷ মাত্র পাঁচটি সংস্কারে সরকার হাত দিয়েছে৷ সেগুলো সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত৷’’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সব নির্বাচন (জাতীয় ও স্থানীয়) আনুষ্ঠিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘বিগত সময়ে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন করেছিল, যেখানে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে৷ রাতের ভোট ও ডামি প্রার্থীর ভোট হয়েছে৷’’
এদিকে, তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম৷ বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিএনপি নির্বাচন চেয়েছে বলে জানান তিনি। আলম বলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের যে সময়সীমার কথা বলেছেন, সেটিকে সমর্থন করেছে জামায়াত ও এনসিপি৷ একই সঙ্গে দল দুটি মনে করছে, ইসি সংস্কার না করলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত হবে না৷’’
এআই/আরআর (ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)