খালেদাকে কি বিদেশে পাঠানো সম্ভব?
১০ মে ২০২১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয় গত ভছরে ২৫ মার্চ৷ শর্ত হলো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না অথবা তাকে দেশেই থাকতে হবে৷
এই ধারা বলে কারো দণ্ড মওকুফও করতে পারে সরকার৷ আর খালেদা জিয়াকে বিদেশে না যাওয়ার শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হলেও ওই আইনেই শর্তহীনভাবেও মুক্তি দেয়ার বিধান আছে৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন বলেন," ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে কারুর দণ্ড স্থগিত, পুরো বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে মুক্তি দিতে পারে৷ শর্ত সাপেক্ষে দিতে পারে আবার শর্তহীনভাবেও দিতে পারে৷ ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যেহেতু দণ্ডিত তাই সরকার এই আইনেই তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে৷ তাকে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্ত তুলে শর্তহীন করার ক্ষমতা এই আইনেই সরকারকে দেয়া হয়েছে৷”
তার মতে, এটা আবার শর্ত দিয়েও সরকার করতে পারে৷ শর্তে বলে দেয়া হবে যে, খালেদা জিয়া কত দিনের জন্য বিদেশে অবস্থান করতে পারবেন৷ আইনে কোনো বাধা নাই৷
তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেশের বাইরে যেতে পারবেনা এটা সাধারণ নিয়ম৷ খালেদা জিয়া তো আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পাননি৷ তিনি নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন৷ তার অভিযোগ, সরকার যা করেছে তা অনৈতিক এবং অমানবিক৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, যারা এখন খালেদা জিয়ার বিষয় নিয়ে আদালতে যেতে বলছেন তারা আসলে ঠিক বলছেন না৷ কারণ এটা তো আদালতের সিদ্ধান্ত নয়৷ খালেদা জিয়াকে তো নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ আর সেই আইনে শর্ত দেয়া বা না দেয়া সরকারের ইচ্ছা৷ এখন শর্ত তুলে নিলেই তো খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে পারেন৷
তিনি মনে করেন," এটা রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে৷ আইনমন্ত্রী , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি ৪০১ জানেন না! এখানে কোনো সিগন্যাল ছিলো তাই তারা প্রথমে সহানুভূতির সাথে বিবেচনার কথা বলেছেন তারা৷ পরে হয়তো কোনো কারণে তারা উল্টে গেছেন৷ আমাদের দেশের মন্ত্রীরা কি স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন?”
কিন্তু দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম বলেন," খালেদা জিয়া যেহেতু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাই তিনি ৪০১ ধারা অনুযায়ী দেশের বাইরে যেতে পারেন না৷”
অন্য কোনো আইনে তিনি বিদেশ যেতে পারেন কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন," আমি জানি না৷”
সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিএনপি ক্ষুব্ধ এবং হতাশ৷ সরকারের সিদ্ধান্তের পর রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়ায় বলেন,"সরকার মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের মুক্তি দিয়ে দিচ্ছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে৷'
সোমবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন," সরকার খালেদা জিয়াকে ৪০১ ধারা অনুযায়ী বাসায় পাঠিয়েছে৷ ওই ধারায়ই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে৷ ”
তিনি বলেন," তার পরিবার তো কোর্টের কাছে যায়নি, সরকারের কাছে গিয়েছে৷ এখন আমরা আদালতে যাব কেন? সরকারের কাছ থেকেই সিদ্ধান্ত চাই৷”
পরবর্তী করণীয় নিয়ে তিনি বলেন,"এখন আমরা স্ট্যান্ডিং কমিটিকে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মনে করেন, বিএনপি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে চায় না৷ তারা আসলে এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ তিনি বলেন," গতকাল(রবিববার) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নাকি খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই তাকে বাইরে পাঠাচ্ছেনা৷ তার মানে হলো, বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তারা বাইরে পাঠাতে চায় না৷ তারা এজন্য যা করছে তা রাজনীতি করার জন্য করছে৷ বেগম জিয়াকে যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হয় তা মেডিকেল বোর্ড বলবে৷ তারা যে আবেদন করেছে তাতে কোন রোগের জন্য, কোন দেশের কোন হাসপাতালে, কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন তার কোনো উল্লেখ নাই৷”
তিনি বলেন," তাকে কেন বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন৷ তাতে কোনো অস্পষ্টতা নাই৷ এখন বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছে৷”