সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নির্ভয়ার মা আশা দেবি বলছিলেন, ‘‘দীর্ঘ ছয় বছর পর আমরা ন্যায়বিচার পেলাম৷ যে ঘৃ্ণ্য অপরাধ ওরা করেছে, তাতে মৃত্যুদণ্ডও যেন যথেষ্ট নয়৷'' কিন্তু ধর্ষণ রোধে মৃত্যুদণ্ডই কি শেষ কথা?
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
গতকাল ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করার আর্জি খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডই বহাল রেখেছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷ মোট ছয় জনের মধ্যে একজন নাবালক ছিল বলে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ বাকি পাঁচ জনের মধ্যে একজন জেলেই আত্মহত্যা করে৷
রায়ের পর নির্ভয়ার মা আরো বলেন, ‘‘ সুপ্রিম কোর্ট দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন৷ এটাই আশা করেছিলাম৷ দেশে বাড়তে থাকা নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রেও এইরায় একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি৷ এই রায়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এ দেশে ধর্ষণের কোনো ক্ষমা নেই৷ তবে যতক্ষণ না ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের স্বস্তি নেই, কারণ, এখনও রাষ্ট্রপতি ফাঁসির সাজা মকুব করতে পারেন৷''
‘‘আমাদের পাঠ্যসূচিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করার একটা জায়গা থাকা দরকার’’
This browser does not support the audio element.
২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের সেই দিনটার মর্মান্তিক স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি দেশের মানুষ৷ চলন্ত বাসে নির্মমভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল দিল্লির নির্ভয়াকে৷ ধর্ষণের পর চালানো হয়েছিল অত্যাচার৷ তারপর চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল নির্ভয়াকে৷ প্রথমে দেশে তারপর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে সব মিলিয়ে ১৬ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর নির্ভয়া মারা যান৷ তাঁর এই মরণপণ লড়াইয়ের নির্ভয়া নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর আসল নাম জ্যোতি সিং৷ উত্তরপ্রদেশের ২৩ বছরের এই তরুণী দিল্লিতে ফিজিওথেরাপি নিয়ে পড়তে এসেছিলেন৷ ধর্ষণের ঘটনার পর গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ ঝড় ওঠে সংসদের ভেতরে ও বাইরে৷
সোমবার নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি বহাল রাখার প্রসঙ্গেদুর্বার মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পদাধিকারী মহাশ্বেতা মুখার্জী ডয়চে ভেলেকে তাঁর অভিমত জানিয়ে বললেন, ভারতীয় কালচারে একটা বয়সের পর সেক্স বা সেক্সুয়েলিটি নিয়ে সুস্থ ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার কোনো জায়গা নেই৷ আমাদের যেমন খিদে পায়, ঘুম পায়, একটা বয়সের পর সেক্সটাও আসে৷ সেটা নিয়ে কোনো স্বচ্ছ আলোচনা হয় না৷ স্কুলের পাঠ্যসূচিতেও থাকে না৷ বিষয়টা নিয়ে যত বেশি ঢাক ঢাক গুড় গুড় থাকবে, ততই তা বাড়বে৷ মহাশ্বেতা দেবির মতে, ‘‘আমাদের পাঠ্যসূচিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করার একটা জায়গা থাকা দরকার৷ সেটা না করে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছি মোবাইল ফোন৷ এতে সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি৷ পর্ণো মার্কা ছবি দেখে তাঁদের শরীরে উত্তেজনা বাড়ছে৷ সেটা মেটাতে চায় কোনো-না-কোনোভাবে৷'' অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হয় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দুর্বার এনজিও'র মহাশ্বেতা দেবি বললেন, ‘‘একটা কারণ হলো, অপরাধী যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকে, তাহলে পুলিশি ব্যবস্থার ঢিলেমিতে তারা বেরিয়ে যেতে পারে৷ আর যে মেয়েটি ভিকটিম তাঁকে থাকতে হয় মুখ লুকিয়ে৷
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Tivony
7 ছবি1 | 7
দ্বিতীয়ত, নিগৃহীত মেয়েটিকে উলটোভাবে জেরা করেন আদালতের আইনজীবীরা৷ মেয়েটিকে দ্বিতীয়বার হেনস্থার শিকার হতে হয়৷ তাই অনেক মেয়ে আদালতমুখো হতে চায় না৷ দুর্বারের মতো কোনো বড় সংগঠন পেছনে না থাকলে পুলিশও এফআইআর করতে গড়িমসি করে৷ প্রান্তিক ঘরের মেয়েদের তো পাত্তাই দেওয়া হয় না৷ সেই সুযোগে অপরাধীরা গা ঢাকা দেবার সুযোগ পায়৷ নির্ভয়াকে নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়েছিল৷ পথেঘাটে মোমবাতির মিছিল বেরিয়েছিল৷ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছিল৷ নির্ভয়া যে প্লাটফর্মটা পেয়েছিল, অন্যরা তা পাচ্ছে না৷ তাই হয়ত প্রতিদিন ঘটে চলেছে একটার পর একটা নির্ভয়া কাণ্ড৷ মনে হয়, আমাদের কোথাও একটা ভুল থেকে যাচ্ছে৷ সেই ভুলটা গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে পারিনি৷''
আদালতে ‘রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার কেস' হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল ঐ ধর্ষণের ঘটনা৷ সাজা হয়েছিল ফাঁসির৷ দিল্লি হাইকোর্টের সেই সাজা বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য দোষীরা সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল৷ আবেদন ছিল ফাঁসির বদলে যেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ডিভিসন বেঞ্চ সেই সাজা বহাল রাখে৷ মোট ছয়জন দোষীর মধ্যে একজন ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ তার বয়স ১৮ বছরের নীচে৷ তাই তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ তিন বছর থাকার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ বাকি পাঁচজনের মধ্যে একজন দিল্লির তিহার জেলের ভেতরে বিচারাধীন অবস্থাতেই আত্মহত্যা করে৷ বাকি চারজনের মধ্যে তিনজন তাদের ফাঁসির সাজা পুনর্বিবেচনা করতে আর্জি জানায় শীর্ষ আদালতের কাছে৷ একজন আর্জি জানায়নি৷ তার রিভিউ পিটিশন এখনও তৈরি হয়নি৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷