1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যুদণ্ড বহাল কতটা স্বস্তির?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১০ জুলাই ২০১৮

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নির্ভয়ার মা আশা দেবি বলছিলেন, ‘‘দীর্ঘ ছয় বছর পর আমরা ন্যায়বিচার পেলাম৷ যে ঘৃ্ণ্য অপরাধ ওরা করেছে, তাতে মৃত্যুদণ্ডও যেন যথেষ্ট নয়৷'' কিন্তু ধর্ষণ রোধে মৃত্যুদণ্ডই কি শেষ কথা?

Symbolbild Todesstrafe Galgen
ছবি: picture-alliance/dpa

গতকাল ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করার আর্জি খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডই বহাল রেখেছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷ মোট ছয় জনের মধ্যে একজন নাবালক ছিল বলে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ বাকি পাঁচ জনের মধ্যে একজন জেলেই আত্মহত্যা করে৷

রায়ের পর নির্ভয়ার মা আরো বলেন, ‘‘ সুপ্রিম কোর্ট দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন৷ এটাই আশা করেছিলাম৷ দেশে বাড়তে থাকা নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রেও এইরায় একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি৷ এই রায়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এ দেশে ধর্ষণের কোনো ক্ষমা নেই৷ তবে যতক্ষণ না ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের স্বস্তি নেই, কারণ, এখনও রাষ্ট্রপতি ফাঁসির সাজা মকুব করতে পারেন৷''

‘‘আমাদের পাঠ্যসূচিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করার একটা জায়গা থাকা দরকার’’

This browser does not support the audio element.

২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের সেই দিনটার মর্মান্তিক স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি দেশের মানুষ৷ চলন্ত বাসে নির্মমভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল দিল্লির নির্ভয়াকে৷ ধর্ষণের পর চালানো হয়েছিল অত্যাচার৷ তারপর চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল নির্ভয়াকে৷ প্রথমে দেশে তারপর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে সব মিলিয়ে ১৬ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর নির্ভয়া মারা যান৷ তাঁর এই মরণপণ লড়াইয়ের নির্ভয়া নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর আসল নাম জ্যোতি সিং৷ উত্তরপ্রদেশের ২৩ বছরের এই তরুণী দিল্লিতে ফিজিওথেরাপি নিয়ে পড়তে এসেছিলেন৷ ধর্ষণের ঘটনার পর গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ ঝড় ওঠে সংসদের ভেতরে ও বাইরে৷

সোমবার নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি বহাল রাখার প্রসঙ্গেদুর্বার মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পদাধিকারী মহাশ্বেতা মুখার্জী ডয়চে ভেলেকে তাঁর অভিমত জানিয়ে বললেন, ভারতীয় কালচারে একটা বয়সের পর সেক্স বা সেক্সুয়েলিটি নিয়ে সুস্থ ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার কোনো জায়গা নেই৷ আমাদের যেমন খিদে পায়, ঘুম পায়, একটা বয়সের পর সেক্সটাও আসে৷ সেটা নিয়ে কোনো স্বচ্ছ আলোচনা হয় না৷ স্কুলের পাঠ্যসূচিতেও থাকে না৷ বিষয়টা নিয়ে যত বেশি ঢাক ঢাক গুড় গুড় থাকবে, ততই তা বাড়বে৷ মহাশ্বেতা দেবির মতে, ‘‘আমাদের পাঠ্যসূচিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করার একটা জায়গা থাকা দরকার৷ সেটা না করে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছি মোবাইল ফোন৷ এতে সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি৷ পর্ণো মার্কা ছবি দেখে তাঁদের শরীরে উত্তেজনা বাড়ছে৷ সেটা মেটাতে চায় কোনো-না-কোনোভাবে৷'' অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হয় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দুর্বার এনজিও'র মহাশ্বেতা দেবি বললেন, ‘‘একটা কারণ হলো, অপরাধী যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকে, তাহলে পুলিশি ব্যবস্থার ঢিলেমিতে তারা বেরিয়ে যেতে পারে৷ আর যে মেয়েটি ভিকটিম তাঁকে থাকতে হয় মুখ লুকিয়ে৷

দ্বিতীয়ত, নিগৃহীত মেয়েটিকে উলটোভাবে জেরা করেন আদালতের আইনজীবীরা৷ মেয়েটিকে দ্বিতীয়বার হেনস্থার শিকার হতে হয়৷ তাই অনেক মেয়ে আদালতমুখো হতে চায় না৷ দুর্বারের মতো কোনো বড় সংগঠন পেছনে না থাকলে পুলিশও এফআইআর করতে গড়িমসি করে৷ প্রান্তিক ঘরের মেয়েদের তো পাত্তাই দেওয়া হয় না৷ সেই সুযোগে অপরাধীরা গা ঢাকা দেবার সুযোগ পায়৷ নির্ভয়াকে নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়েছিল৷ পথেঘাটে মোমবাতির মিছিল বেরিয়েছিল৷ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছিল৷ নির্ভয়া যে প্লাটফর্মটা পেয়েছিল, অন্যরা তা পাচ্ছে না৷ তাই হয়ত প্রতিদিন ঘটে চলেছে একটার পর একটা নির্ভয়া কাণ্ড৷  মনে হয়, আমাদের কোথাও একটা ভুল থেকে যাচ্ছে৷ সেই ভুলটা গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে পারিনি৷''

আদালতে ‘রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার কেস' হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল ঐ ধর্ষণের ঘটনা৷ সাজা হয়েছিল ফাঁসির৷ দিল্লি হাইকোর্টের সেই সাজা বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য দোষীরা সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল৷ আবেদন ছিল ফাঁসির বদলে যেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ডিভিসন বেঞ্চ সেই সাজা বহাল রাখে৷ মোট ছয়জন দোষীর মধ্যে একজন ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ তার বয়স ১৮ বছরের নীচে৷ তাই তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ তিন বছর থাকার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ বাকি পাঁচজনের মধ্যে একজন দিল্লির তিহার জেলের ভেতরে বিচারাধীন অবস্থাতেই আত্মহত্যা করে৷ বাকি চারজনের মধ্যে তিনজন তাদের ফাঁসির সাজা পুনর্বিবেচনা করতে আর্জি জানায় শীর্ষ আদালতের কাছে৷ একজন আর্জি জানায়নি৷ তার রিভিউ পিটিশন এখনও তৈরি হয়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ