হালকা কংক্রিটের ভেতরে আলোর ছটা – এমন অভিনব নির্মাণের উপকরণ আজ বাস্তবেই দেখা গেছে৷ পরিবেশবান্ধব উপায়ে সস্তায় উৎপাদনের মাধ্যমে এমন উপকরণের প্রয়োগ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে৷
বিজ্ঞাপন
কার্বন বেকারিতে ক্যারিয়ার সুতাগুলির সঙ্গে কার্বন টেপ মিলিয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জুড়ে দেওয়া হয়৷ ২ থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কার্বনের সঙ্গে প্লাস্টিকের সুতো ফিউজ করে মিশ্র ফাইবার তৈরি করা হয়৷ দেখতে কার্বন ফাইবারের মতে হলেও এটি এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী শক্তপোক্ত হতে পারেনি৷
১,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বেকিং-এর দ্বিতীয় প্রক্রিয়ার পর অবশ্য হীরার মতো শক্ত হয়ে যায় সেটি৷ এই প্রক্রিয়ার সময় কার্বনের পরমাণুগুলি নতুন করে বিন্যস্ত হয়৷ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার গুনার সাইডে বলেন, ‘‘আমরা জ্বালানির আরও সাশ্রয় করে কার্বন ফাইবার তৈরির চেষ্টা করছি৷ তাতে শুধু টাকা বাঁচে না, মেটিরিয়াল আরও বহুমুখী হয়ে ওঠে৷ অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব উপায়ে সস্তায় উৎপাদন করলে প্রয়োগের ক্ষেত্রও বেড়ে যায়৷''
এখনো আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে৷ কার্বন ফাইবার বোনা খুব কঠিন কাজ, কারণ তার বিশেষ সুতা কাপড়ের তুলনায় বেশি নাজুক৷ এই যন্ত্র অবশ্য উপকরণের দুর্বলতা দূর করতে পারে৷ রিইনফোর্সিং মেটিরিয়াল নিখুঁতভাবে বোনা প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ এক স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের কাজ চলছে৷ ম্যাগনিফায়ার দেখিয়ে দিচ্ছে, কোথায় মেটিরিয়াল রিইনফোর্স করা হচ্ছে৷ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার ড. বেনেডিক্ট ভেন্ডলান্ড বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে খাঁচা ও কাঠামোর অনেক অংশ হালকা হয়ে যায়৷ স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার কারণে ব্যয়ও কমে যায়৷''
পরিবেশ বাঁচাতে পারেন আপনিও
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে এবং পৃথিবী ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে৷ এই পরিস্থিতি বদলাতে অবদান রাখতে পারি আমি, আপনি, আমরাও৷ কিভাবে? সেটাই জানাচ্ছে এই ছবিঘরটি৷
ছবি: Lightcycle.de
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে করণীয়
জ্বালানি উৎপাদন এবং ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে৷ প্রকৃতির দুর্দশার পেছনে এটি ছাড়াও আরও কিছু বিষয় কাজ করে৷ যেমন খাদ্য তৈরির সময়ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়৷ এর জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপরাধী৷ এসব নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তি পর্যায়ে কিংবা রাষ্ট্র কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে?
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন ধরনের লাইট বাল্ব
জ্বালানি সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে আপনিও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন৷ এজন্য প্রথমেই বাড়িতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাঁচটি পুরনো বাল্ব বদলে ফেলুন৷ নতুন লাইট বাল্বগুলোর স্থায়ীত্বও পুরনোগুলোর চেয়ে দশ থেকে পঞ্চাশ গুণ বেশি৷ যার অর্থ হচ্ছে, এগুলো আপনার টাকাও বাঁচাতে পারে৷ আর দয়া করে, ঘর থেকে বেরুবার আগে বাল্ব বন্ধ করতে ভুলবেন না৷
ছবি: Lightcycle.de
পানির ব্যবহার কমিয়ে জ্বালানি বাঁচান
প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা পানি ব্যবহার করি এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এক অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে পানি৷ সুতরাং পানি সংরক্ষণ ছাড়াও এর ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারেন আপনি৷ কেননা পানি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে তুলতে, তা পরিশোধন এবং গরম করতে অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ আপনি এর ব্যবহার কমালে তাই জ্বালানিও সাশ্রয় হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
মাঝে মাঝে গাড়িকে ছুটি দিন!
সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নিজের গাড়িটিকে ছুটি দেয়ার মাধ্যমে বছরে দুই টন পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ রোধ করতে পারেন আপনি৷ আর গাড়ি ব্যবহারের সময় এর সাশ্রয়ী দিকটি বিবেচনা করুন৷ গাড়ি চালানোর সময় অনর্থক গ্যাস এবং ব্রেক প্যাডেল চাপবেন না৷ হঠাৎ করে গাড়ির গতি ব্যাপক আকারে বাড়ানোর প্রয়োজন নেই এবং গাড়ির ভেতরে যেসব অপ্রয়োজনীয় জিনিস আছে সেগুলো সরিয়ে অথবা নামিয়ে নিন৷
ছবি: AP
নতুন গাড়ি খুঁজছেন?
আপনি একটি হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক গাড়ি কিনছেন না কেন? ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানির রাস্তায় দশ লাখ ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর লক্ষ্য স্থির করেছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, ই-কার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, তবুও সেপথে এগোতে বিশেষ আগ্রহী হচ্ছে না জার্মানরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
কারিগরি অবকাঠামো আর সাশ্রয়ী গণপরিবহন
ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগ ছাড়াও শহর, রাজ্য এবং জাতীয় সরকারকেও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে৷ বার্লিনের মতো বড় শহরগুলোতে সাশ্রয়ী গণপরিবহন চালু এবং পুরনো ভবনগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করে নতুনভাবে গড়ে পরিবেশ রক্ষায় বড় অবদান রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture alliance/dpa
সবুজ ভবন
পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ গ্রিনহাউস নির্গমন ঘটে ভবনগুলো থেকে৷ নতুন করে তৈরি করা ভবনগুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে৷ যেমন, ভবন তৈরির সময় সেটার সঙ্গে সোলার প্যানেল জুড়ি দিলে এবং তাতে জ্বালানি সাশ্রয়ী বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব৷ একই সঙ্গে নতুন ভবনে জানালা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং রুম হিটার বা কুলিং সিস্টেমও সাশ্রয়ী উপায়ে তৈরি করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্থানীয় খাবার গ্রহণ করুন
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধের আরেক উপায় হচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য গ্রহণ৷ এর ফলে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে খাদ্য পরিবহনের ফলে যে কার্বন নির্গমন হচ্ছে তা কমবে৷ পাশাপাশি, খাদ্য তালিকা থেকে মাংস পরিহার করলেও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনও কমবে ব্যাপক হারে৷
ছবি: PATRICIA DE MELO MOREIRA/AFP/Getty Images
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করুন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ভবিষ্যতে তেল, কয়লা বা গ্যাস নির্ভর জ্বালানির বদলে নবানয়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে উৎসাহী হচ্ছে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ ২০০০ সালে জার্মানির মোট জ্বালানি শক্তির ৬.৩ শতাংশ এসেছিল নবায়নযোগ্য উৎস থেকে৷ আর গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে৷
ছবি: Fotolia/Schlierner
কম সিও২, বেশি চাকুরি
জার্মানিতে এখন অনেক ‘উইন্ড টার্বাইন’ বিষয়ক সংস্থা রয়েছে এবং এই দেশ সৌরশক্তির মাধ্যমে বিস্ময়করভাবে ব্যাপক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে৷ এছাড়া বায়োম্যাস, বায়োওয়েস্ট এবং হাইড্রো পাওয়ার ব্যবহার করেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে জার্মানিতে৷ এছাড়া, সবুজ জ্বালানি শিল্পও ক্রমশ বড় আকার ধারণ করছে এবং সেখাতে চাকুরির সম্ভাবনাও বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংরক্ষণের জন্য অর্থ প্রদান?
ব্যাপক জীবাশ্ম জ্বালানির আধার আছে যেসব উন্নয়নশীল দেশে, তারা যাতে সেসব জ্বালানি ব্যবহার না করে, সেজন্য তাদেরকে অর্থ প্রদানের একটি উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ এতে করে অনেক অঞ্চলে গাছ কাটা বন্ধ হতে পারে৷ ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিতে অবদান রাখতে পারবে সেগুলো৷ ইকুয়েডরের সরকার আশা করছে, এভাবেই তাদের ইয়াসুনি অঞ্চলকে কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ইয়াসুনিতে যদি খনি খনন করা হয়, তাহলে তেল থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জন করবে ইকুয়েডর৷ কিন্তু একই সঙ্গে এই উদ্যোগ উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের ব্যাপক ক্ষতি করবে৷ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত জীবনযাত্রাকে আরো নিরাপদ করতে পারি৷ ভবিষ্যত প্রজন্মের কথাও তো ভাবতে হবে আমাদের৷ তাই নয় কী?
ছবি: DW / Michael Altenhenne
12 ছবি1 | 12
বোনা কাপড় নির্মাণের উপকরণেও ব্যবহার করা হচ্ছে৷ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের এই দেওয়ালে আলোকিত কংক্রিট রয়েছে৷ তার মধ্যে যে ফাইবার রয়েছে, তা কংক্রিটের মধ্য দিয়ে আলো বহন করে৷ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার ড. আন্দ্রেয়াস রয়ে বলেন, ‘‘স্থপতিদের চাহিদা পূরণ করতেই আলোকিত কংক্রিট তৈরি হয়েছিল৷ শক্ত, কালো ও ম্লান কংক্রিটে আলো বহনের ক্ষমতা যোগ করে তার ব্যাপ্তি বাড়ানো হয়েছিল৷ ৮০ বছর ধরে উন্নতির কাজ চলছে৷ আজ আলো ও কংক্রিটের মেলবন্ধন বাজারে ছাড়ার সময় এসে গেছে৷''
নতুন এই মেটিরিয়াল দিয়ে অলঙ্কার ও খোদাইয়ের কাজও করা যায়৷ এলইডি এলিমেন্ট থেকে আলো আসে৷ প্রথম প্রকল্প হিসেবে আবু ধাবির এক মসজিদে আখেন-এ তৈরি লাইট কংক্রিট বসানো হবে৷