1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্যাতনের প্রতিবাদ, নাকি নারীরাই রাজনীতির হাতিয়ার?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জুলাই ২০২৩

নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পথে প্রতিবাদে যুযুধান শাসক ও বিরোধী। নাবালিকার মৃতদেহের দখল পেতে মরিয়া তারা।

তৃণমূলের নারী শাখার সদস্যরা মণিপুরের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করছেন।
মণিপুরে নারীকে বিবস্ত্র করার বিরুদ্দে রাজনৈতিক প্রতিবাদ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।ছবি: Payel Samanta/DW

এটা সত্যিই কি নির্যাতনের প্রতিবাদ, না রাজনৈতিক মুনাফা তোলার চেষ্টা?

দেহ নিয়ে 'টানাটানি'

কোচবিহারের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। নয় দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষে বুধবার সকালে সে মারা যায় কোচবিহার মেডিক্যালে। মৃত্যুর পর নাবালিকার দেহ কাদের দখলে থাকবে, তার পরিবার কোন শিবিরের অনুগত, এ নিয়ে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব। দুই পক্ষের টানাপোড়েনে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পুলিশের দাবি, নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, আপাতত গণধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলে পুরো ছবিটা ধরা পড়বে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু এসবের থেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়!

‘কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল কুরাজনীতি বা অপরাজনীতি করছে’

This browser does not support the audio element.

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ''অভিযুক্তেরা বিজেপির সঙ্গে জড়িত। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা বিজেপির পক্ষে প্রচার করেছে।'' গেরুয়া শিবিরের পাল্টা দাবি, ''পুলিশ অভিযুক্তদের আড়াল করেছিল। এর থেকে বোঝা যায়, অভিযুক্তদের পিছনে কোন দল রয়েছে।''

মণিপুর থেকে মালদহ

এই একই ছবি দেখা গিয়েছে বারবার। সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের ভাইরাল ভিডিও সামনে আসার পর দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষ সরব হয়েছেন। বিরোধীরাও স্বাভাবিকভাবেই সোচ্চার। এরই মধ্যে মালদহের ভাইরাল ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। কার্যত মণিপুর বনাম বাংলা, কার গায়ে কালি বেশি লাগলো, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে!

মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ নীরবতা ও সেই রাজ্যের বিজেপি সরকারের হিংসা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, এই দুটিই এখন বিরোধী শিবিরের হাতিয়ার। বুধবার তৃণমূলের মহিলা সংগঠন নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে মিছিল করে। আজ যুব তৃণমূল ব্লকে ব্লকে মিছিল করছে। মণিপুরের ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা চেয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনবে শাসক পক্ষ। ৩১ জুলাই তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

এর পাল্টা বিজেপি বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে পশ্চিমবঙ্গের নারী নির্যাতনকে হাতিয়ার করেছে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দুদিনের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে বিজেপির মহিলা মোর্চার। বৃহস্পতিবার সেখানে যাবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভায় একই বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপি। অনুমতি না মেলায় বুধবার বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী বিধায়করা। আজ সেই প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতিবাদ না অবমাননা?

রাজনীতির এই চাপানউতোর কি আর এক দফা নারী অবমাননা হয়ে উঠছে না? সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল কুরাজনীতি বা অপরাজনীতি করছে। অন্ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না। নারী, অর্থ, ছোট ছোট ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে সমাজের অসহায়, দুর্বল অংশকে ব্যবহার করছে। এই দলগুলি রাজনীতিকে নষ্ট করছে।''

চলতি ঘটনাক্রমে ক্রুদ্ধ সাহিত্যিক বাণী বসু। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''ইচ্ছে করছে সব লন্ডভন্ড করে দিই। কিন্তু আমার তো সেই ক্ষমতা নেই। যেটুকু মূল্যবোধ অবশিষ্ট ছিল, সেটাও রাজনীতির জন্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা লিখে প্রতিবাদ করি, কিন্তু তাতে কাজ হয় বলে মনে হয় না!''

রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা আয়োগের একটি দল আজ কোচবিহার গিয়েছে। আয়োগের চেয়ারপার্সন, চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''দেহ নিয়ে রাজনীতি এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি কালিয়াগঞ্জেও গিয়ে দেখেছি, কে কোন দলের সেটা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।''

মালদহের বামনগোলায় দুই নির্যাতিতাকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। অতএব আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে সমাজের গভীরে থাকা অসুখ প্রকাশিত হচ্ছে নারী নিগ্রহের ঘটনায়। কোন পথে বদল? বাণী বসুর মতে, ''সব স্তরের মানুষকে পথে নামতে হবে। প্রতিবাদ জোরালো করতে হবে। নইলে প্রতিকার নেই।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ