1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংখ্যালঘুরাই হয়রানির শিকার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতেনের ঘটনা নিয়ে কিছুদিন হইচই হলেও শেষ পর্যন্ত বিচারের নজির খুঁজে পাওয়া ভার৷ বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরাই ‘আইনি হয়রানির' শিকার হন৷

Bangladesch Proteste gegen Attacke auf Minderheiten
ছবি: bdnews24.com

৩০শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পল্লি এবং মন্দিরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০৫ জন গ্রেপ্তার হলেও, তাদের অধিকাংশই ছাড়া পেয়ে গেছে৷ অথচ রসরাজ ফেসবুকে তার মোবাইল ফোন থেকে কোনো পোস্ট দেয়নি – এ কথা প্রমাণ হওয়ার পরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না৷ দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে সে কারাগারে আটক আছে৷ তার বিরুদ্ধে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দিয়েছে, যা কিনা জামিন অযোগ্য৷

গত ৩রা জানুয়ারি রসরাজের জামিন শুনানি ছিল৷ কিন্তু আদালত পুলিশ প্রতিবেদন না পাওয়ায় তাকে জামিন দেয়নি৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ফেসবুক আইডি-টি রসরাসের৷ তাই তাকেই দায় নিতে হবে৷'’

একইভাবে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনায় ফেসবুক পোস্টের কথা বলে উত্তম বড়ুয়া নামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক যুবককে আটক করা হয়৷ পরে প্রমাণিত হয় যে সে কোনো পোস্ট দেননি৷ উত্তম বড়ুয়া পরে জামিন পেলেও সে এখন কোথায় আছে, তা কেউ জানে না৷ এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও না৷ অথচ হামলার জন্য যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায়ই আছে৷

রানা দাশ গুপ্ত

This browser does not support the audio element.

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসেই প্রায় তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ – এই তিন মাসে ৮২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে হত্যা, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, গণধর্ষণ, জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের ঘটনা রয়েছে৷

তারা জানায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ যাতে কিনা ১৫৬২টি প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কিন্তু ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর কমপক্ষে ৭৩২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৫৬৬টি,  যা আগের এক বছরের তুলনায় ছয়গুণেরও বেশি৷ এ সময়ে ১০ জন নিহত, ৩৬৬ জন আহত এবং ১০ জন অপহরণের শিকার হন৷ জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ আছে দু'টি৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আটজন৷ এছাড়া জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৬৫৫টি৷ উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়েছে ২২টি পরিবারকে৷

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বরিশাল, বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ এরপর থেকে একযোগে বিভিন্ন সংখ্যালঘু নির্যাতন কমে আসলেও তা থামেনি৷ ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়৷ সর্বশেষ গত ৩০শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের শতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়৷ এ সময় অন্তত ১০টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ বেধড়ক পেটানো হয় হিন্দু পল্লির নারী-পুরুষকে৷

নূর খান

This browser does not support the audio element.

এরপর সারাদেশে আরো অন্তত পাঁচটি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও, তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি৷

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯৯০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় মামলারই সুযোগ দেয়া হয়নি৷ শাহাবুদ্দিন কমিশন তদন্ত করে কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছিল ঠিকই, তবে এখনও সে মামলার বিচার হয়নি৷ আমার জানা মতে, মাত্র তিনটি ঘটনার বিচার হয়েছে – গোপলা মুহুরী হত্যা, জ্ঞানজ্যোতি মহাথেরো হত্যা এবং পূর্ণিমার ওপর নির্যাতনের ঘটনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘নাসিরনগরের রসরাজ আর রামুর উত্তম বড়ুয়া আটকের ঘটনাই প্রমাণ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বিচারের নমুনা৷ যারা নির্যাতনের শিকার তাদেরই আবার কারাগারে পাঠানো হয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে যখন ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকেন, তখন বিচার পওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷''

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিচার হয় না – এটা সত্য৷ এর পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণ৷ রাষ্ট্র বা সরকার তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না৷''

তাঁর কথায়, ‘‘সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে, সেক্ষেত্রে পুলিশ বেশ তৎপর থাকে৷ এই অবস্থার সহসা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না৷''

রানা দাসগুপ্ত মনে করেন, ‘‘প্রচলিত আইনে সংখ্যালঘুরা বিচার পাবে না৷ এ জন্য আলাদা আইন ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে৷''

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কখনোই হামলা, নির্যাতনের বিচার পায় না, বিচার চাইলে উল্টে তাদেরই হয়রানির শিকার হতে হয়৷ প্রিয় পাঠক, এই বিচারহীনতা কি আপনি সমর্থন করেন? 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ