1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছবি, পরিচয় প্রকাশে আইন মানছে না সংবাদমাধ্যম

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ জানুয়ারি ২০২১

অপরাধের শিকার নারীর পরিচয় ও ছবি প্রকাশে আইনগত বাধা থাকলেও তা মানছে না বাংলাদেশের অনেক সংবাদমাধ্যম৷ সম্প্রতি ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ও-লেভেলের একজন শিক্ষার্থীর ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায়ও এমনটা ঘটেছে৷

Dhaka Bangladesch 7 von 19
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক৷ এই ঘটনায় দায়ে মেয়েটির এক বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়৷ পুলিশ জানায়, আটক ছেলেটি ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন৷ বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম অভিযুক্ত ছেলেটিরও ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ করেছে৷ অথচ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে যে আদালত কর্তৃক কেউ অভিযুক্ত প্রমান হওয়ার আগে তার ছবি সংবাদপত্রে প্রচার করা যাবে না৷  শুধু সংবাদপত্র বা অনলাইন নয়, টেলিভিশনগুলোতেও এক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় দেখা গেছে৷

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১৪ (১) ধারায় সংবাদমাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘এই আইনে অপরাধের শিকার হয়েছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তৎসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদপত্রে বা অন্য কোন সংবাদমাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়৷ (২) উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করা হইলে উক্ত লংঘনের জন্য দায়ি ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷’’

শাহদীন মালিক

This browser does not support the audio element.

সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘এটাকে আমি দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা বলব৷ শুধু দায়িত্বহীন নয়, হলুদ সাংবাদিকতাও বলা যায়৷ অনেকেই তো এটা মানছে না৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাতো নেওেয়া হচ্ছে না৷ মেয়েটি মারা গেলেও তার পরিচয় বা ছবি প্রকাশ করা যাবে না৷’’

আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হওয়ার আগে কী প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ছেলেটির ছবি বা পরিচয় প্রকাশ করা যায়? জবাবে জনাব মালিক বলেন, ‘‘না, এখানেও আদালত কর্তৃক দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ছেলেটির পরিচয় বা ছবি প্রকাশ করা যাবে না৷ ছেলেটি যদি নাবালক অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলেতো প্রকাশ করা যাবেই না৷ তবে ১৮ বছরের বেশি হলেও তার পরিচয় বা ছবি প্রকাশ না করাই ভালো৷ আর এখন তো বিচারকরাও সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট দেখে প্রভাবিত হন৷ যেটা কোনভাবেই উচিৎ না বলেই আমি মনে করি৷’’

অনেক সংবাদমাধ্যম কেন আইন মানছে না? এটা না মানলে কী ধরনের ব্যবস্থা হতে পারে? জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমাদের সংবাদমাধ্যমে এখন জানাশোনা লোকের চেয়ে না বোঝা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে৷ ফলে তাদের অনেকই জানেন না, এই ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করে তারা ভুল করেছেন৷ এমনকি এগুলো বিশ্লেষণ করে ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোন সংগঠনও নেই৷  আমি মনে করি, আদালত কর্তৃক কেউ অভিযুক্ত প্রমাণ হওয়ার আগে তারও পরিচয় বা ছবি প্রকাশ করা ঠিক নয়৷ পরিচয় প্রকাশ না করেও অনেক সময় বর্ণনার মধ্যে এমনভাবে লেখা যায় যাতে মানুষ অভিযুক্ত সম্পর্কে বুঝতে পারে৷ শুধু তাই না, সরকারি কোন অফিসের বা কোন অফিসারের দুর্নীতি সম্পর্কে তার নাম প্রকাশ না করেও লেখা যায়৷ এমনভাবে লিখতে হবে যাতে তদন্তকারীরা খুব সহজেই তার কাছে পৌঁছাতে পারে৷ কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এগুলো বলা বা দেখার লোক দিন দিন কমে যাচ্ছে৷’’

মেয়েটির ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করেছে এমন একটি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘‘যেখানে মেয়েটি মারা গেছে, তাহলে তার পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়? বেঁচে থাকলে ভিন্ন কথা ছিল৷ পাশাপাশি মেয়েটি তো কোন অপরাধ করেনি৷ সে অপরাধের শিকার৷ ফলে তার ছবি ছেপে ভুল হয়েছে এমনটি আমি মনে করি না৷’’

এদিকে ঢাকার কলাবাগানে মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে৷ মামলায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করেছেন তার বাবা৷ মেয়েটির মা প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ ইচ্ছে করে তার মেয়ের বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কুষ্টিয়ায় মেয়ের লাশ দাফনের পর তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে সুরতহাল প্রতিবেদন করাসহ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়৷ বিকাল পাঁচটায় ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ লাশ গ্রহণ করে৷ এসময় সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা বয়স নিয়ে আমরা আপত্তি তুললে পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মর্গে লাশ ফেলে রাখে৷ মেয়ের জন্মের পর ইস্যুকৃত টিকা কার্ড,  স্কুল কার্ড এবং পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর লেখা আছে৷ সে হিসেবে, মৃত্যুর সময় বয়স হয় ১৭ বছর ৩ মাস৷ তাহলে পুলিশ তার বয়স ১৯ বছর বয়স কোথায় পেল?’’

নাঈমুল ইসলাম খান

This browser does not support the audio element.

মেয়েটির পরিবার অভিযোগ তোলার পর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘‘বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়৷ হাসপাতালের রেজিস্টারে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার সময় হাসপাতালে যে বয়স দেখানো হয়, সেখানে ১৯ বছর বয়স লেখা ছিল৷ হাসপাতালের কাগজপত্রেও ছাত্রীর স্বজনের স্বাক্ষর আছে৷ এটা পুলিশের প্রাথমিক সূত্র৷ এখান থেকে পুলিশ বয়সের তথ্য নিয়েছে৷ এছাড়া তার বয়স নির্ধারণের জন্য নমুনাও নেওয়া হয়েছে৷ এটার রিপোর্ট পাওয়া গেলে তার সঠিক বয়স কত তা জানা যাবে৷’’

মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘‘মেয়েটির শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে৷ এ থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার হয়েছে৷ এতে অতিরিক্ত রক্তরণে তার মৃত্যু হয়েছে৷’’

মেয়েটিকে ধর্ষণ, মৃত্যু ও পরবর্তী ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই আমরা আন্দোলন শুরু করি, নির্যাতিত মেয়ের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না৷ এর ফলশ্রুতিতে কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ পাশ হয়৷ এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে৷ কিন্তু দেশের সংবাদমাধ্যম যদি এটা না মানে তাহলে দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের৷ আমি তো মনে করি, সংবাদ মাধ্যমের উচিত দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করা৷ মেয়েটি মারা গেলেও তার ছবি বা পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না৷ কারণ মেয়েটির পরিবার বা তার ভাই বোন তো আছে৷ সমাজে তাদের চলাফেরায় এর প্রভাব পড়ে৷ পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও নানা কথা হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ