প্যারিসের বিখ্যাত ‘আইফেল টাওয়ার'-এর সিঁড়ির কিছু অংশ আগেই নিলাম হয়েছিল৷ গত মঙ্গলবার তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সংযোজক সিঁড়িটিও নিলাম হলো৷ সিঁড়িটি কিনেছেন মধ্যপ্রাচ্যের এক ক্রেতা৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বেড়াতে গিয়ে আইফেল টাওয়ার দেখেননি, এমন মানুষ পাওয়া বিরল৷ অধিকাংশ পর্যটকেরই আগ্রহ থাকে লিফটে চড়ে টাওয়ারের চূড়ায় উঠে প্যারিসের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার৷
কিন্তু ১৮৮৯ সালে যখন ফরাসী ডিজাইনার গুস্তভ ইফেলের নকশায়টাওয়ারটি নির্মিত হয়, তখন লিফট ছিল না, ছিল লোহার সিঁড়ি৷ ১৯৮৩ সালে পর্যটকদের সুবিধার জন্য লিফট চালু হলে ঐতিহ্যবাহী এই সিঁড়ির বেশ কয়েকটি অংশ কেটে ফেলা হয়৷ বর্তমানে এই সিঁড়ির অংশ রয়েছে ফ্লোরিডার ‘ডিজনিল্যান্ড', নিউ ইয়র্কের ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি'র পাশে ও জাপানের ইওইশি ফাউন্ডেশনের বাগানে৷
এতদিন নিলাম হওয়া ঐতিহাসিক এই সিঁড়ির অংশটি ক্যানাডার একটি ব্যক্তিগত সংকলনে রাখা ছিল৷ নিলামের আগে ২০ দিন ধরে প্যারিসের বিখ্যাত উদ্যান ‘শঁজেলিজে'-তে প্রদর্শিত হবার পর, সিঁড়িটি ১৬৯,০০০ ইউরো দামে বিক্রি হয়৷ লোহার তৈরি সিঁড়ির এই অংশে রয়েছে ২৫টি ধাপ ও মোট উচ্চতা ১৪ ফুট৷ আগাগোড়া লোহায় তৈরি হবার কারণেই স্থানীয় মানুষ এই টাওয়ারকে ‘আয়রন লেডি' বা লৌহমানবী বলে ডাকেন৷
জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় আইফেল টাওয়ারকে ঘিরে কর্মযজ্ঞ
২০১৫ থেকে কয়েকটি জঙ্গি হামলার কারণে ফ্রান্স খুব সতর্ক৷ তাই নিরাপত্তার মোড়কে ঘিরে রাখা হচ্ছে প্যারিস শহরকে৷ বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম আইফেল টাওয়ারকেও তাই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
ফ্রান্সের প্রতীক
১,০৬৩ ফুট উঁচু আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের অন্যতম প্রতীক৷ সম্ভাব্য জঙ্গি আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এর চারপাশে বেষ্টনি দেওয়ার জোরদার কাজ চলছে৷ মোটা বুলেট প্রুফ কাঁচ দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে চারপাশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
কাঁচে সুরক্ষা
বুলেটপ্রুফ কাঁচ ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার মোটা৷ টাওয়ারের অন্তত দু’দিকে এই কাঁচের বেড়া দেওয়া হবে– নদীর দিকের ব্রঁলি বুলেভার্ড এবং অ্যাভিনিউ গুস্তাভ আইফেল৷ এই বেষ্টনিই টাওয়ারটিকে একটি পার্ক থেকে আলাদা করছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
ধাতুর প্রাচীর
টাওয়ারের দুই দিক বাঁকানো ধাতুর কাঁটা দিয়ে বেড়া দেওয়া হচ্ছে৷ এই বেড়া ৩ দশমিক ২৪ মিটার উঁচু৷ .
ছবি: Reuters/B. Tessier
কঠোর নিরাপত্তা বলয়
একসময় পর্যটকরা কোনও বাধা ছাড়াই সরাসরি এই অত্যাশ্চর্য আইফেল টাওয়ারের কাছে পৌঁছাতে পারতো৷ কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে এসব ব্যাপারে ফ্রান্স এখন খুবই কঠোর৷ লাগাতার জঙ্গি হামলার ফলে ২৪০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন ফ্রান্সে৷ তাই এই কঠোর নিরাপত্তা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
নির্মাণের পথে
৩৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি সুরক্ষা প্রকল্পের অংশ হিসেবেই আইফেল টাওয়ারের একপাশের এই বুলেট প্রুফ কাঁচের বেড়ার কাজ চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
কঠোর পাহারা
নতুন বেড়ার যে কাজ চলছে, তাতে রীতিমতো নজরদারিও চলছে৷ নিরাপত্তা বাহিনী টাওয়ার এবং সংলগ্ন এলাকা সর্বদাই পাহারা দিয়ে চলেছে৷ টাওয়ারের নিচের আঙিনাকে ২০১৬ থেকে সাময়িক বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত রাখার কাজ চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
উৎসাহীর চাপ
অত্যুৎসাহী পর্যটকদের নিয়েই ভয়! তাঁদের উৎসাহ যেন কখনোই এই অত্যাশ্চর্য আইফেল টাওয়ারের প্রাচীরকে ক্ষতবিক্ষত না করে! এমনিতে সবসময়ই প্রচুর ভিড়ের চাপ সামলাতে হয় এই এলাকাকে৷ এই ২০১৮তে মোট ৭ মিলিয়ন পর্যটক আইফেল টাওয়ার দেখবেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
নিরাপত্তার প্রাচীর
আশা করা যায়, নিরাপত্তারক্ষীদের এই প্রাচীর গঠনের কাজ জুলাইয়ের মাঝখানে শেষ হবে৷ ৩০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে আইফেল টাওয়ার পুনর্গঠনের জন্য প্রকল্পের অংশ এটি৷ ২০২৪ সালে প্যারিসে আয়োজিত অলিম্পিকের সময় আশা করা যায় বেশিরভাগ কাজেই শেষ হয়ে যাবে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
গোড়ার কথা
গুস্তাভ আইফেলের নাম অনুসারে দেওয়া হয়েছে এই টাওয়ারের নাম ১৮৮৭-৮৯ সালে তাঁরই কোম্পানি এই টাওয়ারের নকশা করে এবং তৈরি করে৷ ফরাসী বিপ্লবের ১০০ তম বার্ষিকী চিহ্নিত করে এই আইফেল টাওয়ার৷
ছবি: Getty/The Paper Time Machine
9 ছবি1 | 9
নিলাম সংস্থা ‘আর্টক্যুরিয়াল' জানিয়েছে বিক্রি হওয়া সিঁড়ির অংশের ওজন ৯০০ কিলোগ্রাম৷ বিশেষজ্ঞরা যত দামে বিক্রি করার আশা করেছিলেন, তার তিনগুন দামে বিক্রি হওয়ায় এই সিঁড়ি ঘিরে বাড়ছে উত্তেজনা৷ উল্লেখ্য, এর আগে এই সিঁড়িরই আরেকটি অংশ বিশেষজ্ঞদের চমকে দিয়ে দশগুন দামে (৫২৩,৮০০ ইউরো) বিক্রি হয়!
অন্য কোনো পর্যটনস্থানের তুলনায় আইফেল টাওয়ার দেখতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক প্যারিসে যান৷ ফলে, এই স্থাপত্যের অংশ সিঁড়িটি যে নিলামে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হবে, তা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়৷