নর্তকী পেশায় নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক
২১ জুলাই ২০১৩আট বছর পর মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের জারি করা বার-ড্যান্সার বা নিশি-আলয়ের নর্তকীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা রদ হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে৷ এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ২,৫০০ নিশি-আলয়ের মালিক, অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, গ্রাম ও আধা শহর থেকে আসা প্রায় ৭৫,০০০ পেশাদার নর্তকী এবং এই পেশার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় এক লাখ অন্যান্য ব্যক্তি৷ এই আট বছরে তাঁদের বেশির ভাগের জীবন তছনছ হয়ে গেছে৷ কর্মচ্যুত মেয়েদের পুনর্বাসন দেবার কথা ছিল রাজ্য সরকারের৷ কিন্তু তা দেয়া হয়নি৷ চরম দারিদ্র্যের জ্বালা থেকে বাঁচতে অনেককে নামতে হয় দেহ ব্যবসায় ও অন্যান্য অবৈধ কাজে৷
এই রায়ে উৎসাহিত হয়ে ড্যান্স-বারগুলির এই ব্যবসাকে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, অর্থাৎ এফডিআই অধিনিয়মের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মুম্বই বার অ্যাসোশিয়েশন৷ বলেছে, এই বিশ্বায়নের যুগে স্থানীয় মেয়েদের রাখাটা ব্যবসার দিক থেকে যথেষ্ট লাভজনক নয়৷ ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে বিদেশিনীদের নিয়ে আসা দরকার৷ কারণ ২০০৫ সাল আর ২০১৩ সালের চাহিদার মধ্যে ফারাক অনেক৷
পর্যটন ভারতের এক বড় শিল্প৷ আগে পর্যটকরা চিত্ত বিনোদনের জন্য চলে যেতেন থাইল্যান্ড বা লাস ভেগাস৷ এবার তাঁরা একই জিনিস পাবেন ভারতে – অবসর যাপনের সঙ্গে চিত্ত বিনোদন৷ আর্থিক মন্দাবস্থার কারণে বিদেশের অনেক বার-গার্ল এবং ড্যান্সার ভারতে আসতে আগ্রহী৷ আইপিএল-এর চিয়ারলিডাররাও এ দেশে আসার জন্য এক পায়ে খাড়া৷ কারণ ওদের দেশের ক্লাব ও বারে ভিড় কমে গেছে আগের তুলনায়৷
এই উদ্যোগে ভারতীয় বার-গার্লদের মনে ভয় ঢুকেছে, সাদা চামড়ার মেয়েরা এসে ভিড় করলে তাঁদের কাজের পরিসর কমে যাবে৷ সাদা চামড়ার প্রতি ভারতীয়দের দুর্বলতা সর্বজনবিদিত৷ এই ইস্যুতে ভোট-ব্যাংকের গন্ধ পেয়ে স্থানীয় মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি, শিবসেনা ও এমএনসি-র মতো রাজনৈতিক দলগুলি৷
মোদ্দা কথা হচ্ছে, বার-ড্যান্সারদের এতদিনের পেশা হঠাৎ বন্ধ করার পেছনে সরকারের যুক্তি কী ছিল? নিশি-আলয়গুলি সমাজ-বিরোধী কাজকর্মের আখড়া হয়ে উঠছে এবং দেহ ব্যবসা, অশ্লীলতা ও নারী পাচারের গন্তব্যস্থলে পরিণত হচ্ছে৷ মহারাষ্ট্রের শাসক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত বিজেপি, শিবসেনা ও এমএনসি৷
সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি হলো, বড় বড় তারকা চিহ্নিত হোটেল এই একই জিনিস চলছে অবাধে ধনী ও উচ্চবর্গীয়দের জন্য৷ তাতে সামাজিক অবক্ষয় না হয়ে থাকলে নিম্নবিত্ত, নিম্নবর্গীয়দের ক্ষেত্রে সেটা হলে গেল গেল রব তোলা অযৌক্তিক, আপত্তিকর৷ পেশাগত গণতান্ত্রিক অধিকার সবার ক্ষেত্রে সমান৷ শীর্ষ আদালতের রায়ের নিহিতার্থ, নৈতিক দিক থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা অনেক বেশি দোষী৷
সামাজিক স্বয়ংসেবী সংস্থাগুলি মনে করে, পতিতালয় বেআইনি৷ কিন্তু চলছে৷ সমাজের শুচিতা রক্ষায় জোর করে বন্ধ করতে গেলে ভালোর থেকে যেমন খারাপ হবে বেশি, এক্ষেত্রেও সেটা সত্য৷