1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই আঙুলের পরীক্ষা নিষিদ্ধ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ এপ্রিল ২০১৮

ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত যে রায় ও নির্দেশনা দিয়েছেন, তা কার্যকরে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা বলছেন, রায় ভালো হলেও কার্যকর না হলে সুফল পাওয়া যাবে না৷

Indien Frauen Protest Slutwalk Delhi sexuelle Gewalt
ছবি: AP

ধর্ষণের শিকার নারীর ভার্জিনিটি বা ‘সতীত্ব’ পরীক্ষার নামে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ শুধু নিষিদ্ধই নয় আদালত অনুসরনীয় আট ধরনের নির্দেশনাও দিয়েছে৷ সরকার ঘোষিত ‘হেলথ কেয়ার প্রটোকল’ পুরোপুরি অনুসরণের কথাও বলা হয়েছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্র ( আসক)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথম কাজ হলো এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা৷ সবাইকে জানিয়ে দেয়া৷ যাঁরা ধর্ষণ মামলার শারীরিক পরীক্ষা এবং তদন্তের সঙ্গে জড়িত, তাঁরাই যদি এটা না জানেন, তাহলে দেখা যাবে পুরনো আইনেই তাঁরা কাজ করছেন৷ আর এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক৷ না নিলে আদালতকে আবার ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’

২০১৩ সালে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও নারীপক্ষ ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বাতিলের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে৷ শুনানির পর তখন আদালত ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচিবকে নারী ও শিশুধর্ষণ ঘটনার পরীক্ষার বিষয়ে নীতিমালা প্রনয়ণ করে তিন মাসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়৷ এ নির্দেশের পর সরকার হেলথ কেয়ার প্রটোকল নামে একটি গাইডলাইন তৈরি করে৷

প্রথম কাজ হলো এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা: সুলতানা কামাল

This browser does not support the audio element.

বৃহস্পতিবার আদালত রুল নিষ্পত্তি করে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করে রায় দেন৷ বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের সঙ্গে আট ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন৷ তার মধ্যে রয়েছে:

ক. ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরীক্ষা একজন নারী চিকিৎসক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে করাতে হবে৷ এ সময় একজন নারী গায়নোকোলজিস্ট, একজন নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ভিকটিমের একজন নারী আত্মীয়, একজন নারী পুলিশ সদস্য ও নারী সেবিকা রাখতে হবে৷

খ. ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যে সনদ দেবেন, তাতে অভ্যাসগত যৌনতা বলে কোনও মন্তব্য করা যাবে না৷ পরীক্ষার পর ধর্ষণের শিকার নারীর যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে৷ বিচারাধীন মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে নারীকে অমর্যাদাকর কোনও প্রশ্ন করা যাবে না৷

গ. যদি ধর্ষণের শিকার নারীর আঘাত বা ক্ষত গভীর থাকে, সেক্ষেত্রে একজন গায়নোকোলজিস্টের কাছে তাঁকে পাঠাতে হবে৷ এক্ষেত্রে ঠিক কোন কারণে ওই গভীর ক্ষতের পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, তা লিখতে হবে৷ কোনও আঘাত বা ক্ষত না থাকলে ধর্ষণের শিকার শিশু ও নারীর ক্ষেত্রে স্পার্স স্পেক্যুলাম দিয়ে (এক ধরনের যন্ত্র, যা দিয়ে যৌনাঙ্গ এলাকায় পরীক্ষার করা হয়) পরীক্ষা করা যাবে না৷

টু ফিঙ্গার টেস্ট করা হতো ভার্জিনিটি পরীক্ষার জন্য: শারমিন আক্তার

This browser does not support the audio element.

ঘ. হেলথ কেয়ার প্রটোকল ব্যাপকভাবে প্রচার এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে, বিশেষ করে চিকিৎসক, আদালত, পাবলিক প্রসিকিউটর (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল), ধর্ষণ মামলায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা, আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করতে হবে৷ একইসঙ্গে হেলথ কেয়ার প্রটোকল বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেমিনার করতে হবে৷

ব্লাস্টের আইনজীবী শারমিন আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই আইনটি আগে ছিল না৷ কিন্তু ১৯৭০ সালে কিভাবে যে আইনটি ঢুকে যায় তা আমরা জানি না৷ হাইকোর্টের আদেশে একদম সুনির্দিষ্ট করে বলে দেয়া আছে, কিভাবে পরীক্ষা এবং তদন্ত করতে হবে৷ কী ধরণের কিট ও ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করতে হবে৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাতে এটা কার্যকর করা যায় তারও বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে৷ যদি নারী গায়নোকলজিস্ট না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে পুরুষ গায়নোকলজিস্টের সহায়তা নেয়া যাবে৷ কিন্তু সরকারের উচিত হবে গত বছর তারা যে হেলথ কেয়ার প্রটোকল করেছে, তা পুরোপুরি অনুসরণ করা৷ সেটা করতে যা যা করণীয়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘টু ফিঙ্গার টেস্ট করা হতো ভার্জিনিটি পরীক্ষার জন্য৷ এটার আসলে কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ কারণ, ধর্ষণের সঙ্গে ভার্জিনিটির কোনো সম্পর্ক নাই৷ একজন বিবাহিত নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারেন৷ একজন যৌনকর্মীও ধর্ষণের শিকার হতে পারেন৷ এটা ছিল নারীর জন্য এক অবমাননাকর পরীক্ষা৷’’ তিনি বলেন, ‘‘ভারতে ২০১৩ সালে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করা হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে ছিল৷ আর এটার মাধ্যমে প্রমাণের চেষ্টা চলতো নারী হেবিচুয়েটেড কিনা৷ এখন আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা বিলোপ হলো৷ এটা নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য বড় প্রয়োজন ছিল৷’’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘আমরা এই অমর্যাদাকর ও মধ্যযুগীয় আইন বাতিলে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে সফল হয়েছি৷ এটা একটা যুগান্তকারী রায়৷ এখন এটা কার্যকরে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ