আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো হুমকি দিয়েছে৷ এদিকে চীন ও রাশিয়ার আপত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবের খসড়া আরও নরম করতে হচ্ছে অ্যামেরিকাকে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার উপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপাতেজাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উপর চাপ দিচ্ছে৷ সোমবার সব সদস্য সম্মত হলে এবার উত্তর কোরিয়ায় পেট্রোলিয়াম সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে৷ সেই সঙ্গে সে দেশ বস্ত্র রপ্তানিও করতে পারবে না৷ সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন-এর বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও তাঁর বিদেশ সফর বন্ধ করারও উদ্যোগ নিচ্ছে অ্যামেরিকা৷
গত ৩রা সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে৷ কিন্তু এ পর্যন্ত চীন ও রাশিয়ার আপত্তিতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অনেক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ এই দুই ভেটো শক্তির সম্মতি পেতে সাম্প্রতিক মার্কিন প্রস্তাবেও কিছু রদবদল করতে হচ্ছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত বস্ত্র রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা ছাড়া অন্য পদক্ষেপগুলি সম্ভবত দুর্বল অথবা পুরোপুরি বাতিল করা হতে পারে৷
নিরাপত্তা পরিষদে নতুন মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে উত্তর কোরিয়া৷ সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘বেআইনি' প্রস্তাব অনুমোদন করাতে পারে, সে ক্ষেত্রে সে দেশকে উপযুক্ত মূল্য চুকাতে হবে৷ অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে এমন একাঝাঁক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যা তারা কখনো ভাবতে পারেনি৷ গোটা বিশ্ব সেই পরিণতি দেখতে পাবে বলে হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
এদিকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপের জন্য কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন৷ তবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতির আওতায় সমরসজ্জা বাড়িয়ে চাপের মুখে পড়ছে সৌল৷ বিশেষ করে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন করায় চীন সে দেশের উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে৷ এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছে চীন৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷