মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৯৯ দিন আগে একটি মাত্র ঘটনার জের ধরে নাস্তানাবুদ রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ দলমত নির্বিশেষে তাঁর বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
‘‘মার্কিন সংবিধান কখনো পড়ে দেখেছেন? আপনাকে আমার কপি ধার দিতে পারি৷'' ইরাক যুদ্ধে নিহত এক মুসলিম সৈন্যের বাবার কাছ থেকে এমন চ্যালেঞ্জের পর ট্রাম্প নিজেকে আর সামলাতে পারেননি৷ নানাভাবে তিনি পালটা আক্রমণের চেষ্টা করছেন, যার অনেকগুলি বেশ নিম্ন রুচির পরিচয় বলে গণ্য করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, মার্কিন সমাজে যুদ্ধে নিহত কোনো ‘গোল্ড স্টার' সৈন্যের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ ফলে এমনকি রিপাবলিকান দলের অনেকেই ট্রাম্প-এর কড়া সমালোচনা করছেন৷ প্রাক্তন প্রার্থী জেব বুশ ট্রাম্প-এর বিবৃতিকে ‘চরম অসম্মানজনক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ ট্রাম্প-এর সঙ্গী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্স চাপের মুখে বলেছেন, ‘‘ক্যাপ্টেন খান অ্যামেরিকার হিরো৷ তিনি ও তাঁর মতো গোল্ড স্টার পরিবারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে৷''
রিপাবলিকান নেতা ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সৈন্য সেনেটার জন ম্যাককেন বলেন, এ বিষয়ে তিনি ট্রাম্প-এর বিবৃতির ঘোর বিরোধী৷ দলের মনোনয়ন পাওয়ার অর্থ এই নয়, যে তিনি আমাদের মধ্যে সেরা কোনো মানুষের সম্মানহানির ঢালাও লাইসেন্স পেয়ে বসে আছেন৷
অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যদের নানা গোষ্ঠীও ট্রাম্প-এর বিরুদ্ধে তোপ দাগছে৷ নির্বাচনের বছর সত্ত্বেও তারা কোনো গোল্ড স্টার পরিবারের অসম্মান বরদাস্ত করবে না বলে জানিয়েছে৷
মুখ খুলেছেন খোদ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ সরাসরি ট্রাম্প-এর নাম উল্লেখ না করেও তিনি বলেন, অ্যামেরিকার মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য গোল্ড স্টার পরিবারগুলির অবদানের কোনো তুলনা নেই৷ আমাদের মধ্যে কয়েকজনের সেই অবদানের মাত্রা বোঝার ক্ষমতাও নেই – বলেন ওবামা৷
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক খিজর ও গজলা খানের ছেলে আর্মি ক্যাপ্টেন হুমায়ুন ২০০৪ সালে ইরাকে এক আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ সামগ্রিকভাবে অ্যামেরিকার মুসলিম সমাজের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর বৈরি মনোভাব আর বরদাস্ত করতে পারেন নি খিজর খান৷
এদিকে খান পরিবার ও ট্রাম্প-এর বাকযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন সংবিধানের বিক্রি আচমকা বেড়ে গেছে৷ অ্যামাজনের জনপ্রিয় বইয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে সংবিধানের পকেট সংস্করণ৷
এই ঘটনার জের ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর প্রতি সমর্থন কমতে শুরু করেছে৷ অন্যদিকে জনমত সমীক্ষায় উঠে আসছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন৷
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড়রা
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে সে দেশের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড় কারা, জানতে চেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘ডেইলি নিউজ’ ১০ মুসলিম ক্রীড়াবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে৷
ছবি: Getty Images/N. Barnard
মুহাম্মদ আলী
হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০১ সালে আলীর হাতে ‘ইউনাইটেড সেরিব্রাল পলসি হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
করিম আব্দুল-জব্বার
এনবিএ বা ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন-র ইতিহাসে অন্যতম সেরা আইকনিক খেলোয়াড়৷ তিনি এনবিএ-র ২০ মৌসুম খেলে ছ’বারই ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Pizzello
মাইক টাইসন
মাত্র ২০ বছর বয়সে হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বে পরিচিতি পান টাইসন৷ ১৯৯২ সালে ধর্ষণের দায়ে জেলে থাকার সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ টাইসনকে জেল থেকে বের করায় সহায়তা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হাকিম ওলাজুওন
নাইজেরিয়ান-অ্যামেরিকান এই বাস্কেটবল খেলোয়াড় রোজা রেখেও ম্যাচ খেলতেন৷ বলা হয়, তিনি নাকি রোজার মাসে একটু বেশি ভালো খেলতেন৷ ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনবিএ-র ‘প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ অথচ সে বছর রোজা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Carter Smith
শাকিল ও’নিল
খ্রিষ্টান মা ও মুসলিম সৎ বাবার সন্তান ও’নিল (ডানে) একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি মুসলিম, আমি ইহুদি, আমি বৌদ্ধ, আমি সব কিছু, কারণ আমি একজন মানুষ৷’’ ডেইলি নিউজ-এর মতে, অন্যতম সেরা এই এনবিএ খেলোয়াড় মক্কায় গিয়েছিলেন হজ পালন করতে৷
ছবি: Getty Images/K. Winter
ব্যার্নার্ড হপকিন্স
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাকাতির মামলায় হপকিন্সের (ডানে) ১৮ বছরের জেল হয়েছিল৷ জেলে থাকার সময় তাঁর বক্সিং ও ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ তাই জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বক্সিং শুরু করেন৷ তিনিই প্রথম বক্সার যিনি চারটি বিশ্ব মিডলওয়েট শিরোপাই জয় করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
রশিদ ওয়ালেস
২০০৪ সালের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন ডেট্রয়েট পিসটনস-এর অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ওয়ালেস (বল হাতে)৷ তাঁর স্ত্রীর নাম ফাতিমা৷
ছবি: Getty Images/J. Daniel
মাহমুদ আব্দুল-রউফ
ক্রিস জ্যাকসন ১৯৯১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হয়ে যান মাহমুদ আব্দুল-রউফ৷ ১৯৯৩ সালে তিনি এনবিএ-র ‘মোস্ট ইমপ্রুভড প্লেয়ার’ খেতাব পেয়েছিলেন৷ তিনি এনবিএ-র নয়টি মৌসুমে খেলেছেন৷
ছবি: Getty Images/Allsport/D. Pensinger
শরিফ আব্দুর-রহিম
মা আমিনা ও বাবা উইলিয়াম আব্দুর-রহিমের ১২ সন্তানের একজন শরিফ৷ ২০০০ সালের অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/J. Jacobsohn
মুহাম্মদ উইলকারসন
২৬ বছর বয়সি এই অ্যামেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়ের মা হিজাব পরেন৷ ২০১১ সালে এক এগারোর দশ বছর পূর্তিতে তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ মুসলিম হওয়া মানে আল্লাহর শিক্ষা গ্রহণ করা, যিনি বলেছেন, তোমরা কখনও কারও ক্ষতি করো না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের৷’’