মঙ্গলবার মিয়ানমারে সাগরে নৌকা ডুবে নয় শিশু সহ কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ এদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা এবং তাদের সাগরপথে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ জানায়, ডুবে যাওয়া নৌকাটি পাওকাও থেকে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে-তে যাচ্ছিল৷ পাওকাও এলাকায় সিন টেট মাও নামের একটি কেন্দ্র রয়েছে যেখানে রোহিঙ্গারা বাস করে৷ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে বাধ্য হয়ে ঐ কেন্দ্রে বসবাস করতে হচ্ছে৷
মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল ব়্যাপোটিয়ার ইয়াংহি লি ‘শিশু সহ রোহিঙ্গা'দের মৃত্যুতে ‘দুঃখ' প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘অবশ্যই সমাধান' বের করতে হবে৷
কাও হালা অং নামের এক রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘অনিরাপদ পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে৷ কারণ আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধ কিনতে সিটওয়ে যাওয়ার জন্য সড়কপথ ব্যবহার করতে পারি না৷''
একই কথা বলেছেন আরেক রোহিঙ্গা টিন হালা৷ ডুবে যাওয়া নৌকায় তাঁর ছেলেও ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যখন সিটওয়েতে যাওয়ার দরকার হয় তখন অনিরাপদ (সাগর দিয়ে) পথে যেতে হয়৷''
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের চলাফেরা ও সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধানিষেধ রয়েছে৷ দেশটিতে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে দেখা হয় না৷ সেখানকার কর্তৃপক্ষ প্রায়ই রোহিঙ্গাদের ‘বেঙ্গলি' অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে৷ ২০১২ সালে রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধদের মধ্যে দাঙ্গায় শত শত লোক প্রাণ হারিয়েছিল৷
রোহিঙ্গাদের ‘যুদ্ধের’ যেন শেষ নেই
ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ অনেক বাংলাদেশিও আছেন তাঁদের মাঝে৷ থাইল্যান্ডে গিয়ে কবরেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের! আজকের ছবিঘরটি তাঁদের নিয়েই৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আটকে পড়া
গত ১০ মে চারটি নৌযানে করে ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশে প্রবেশ করে ৬০০ রোহিঙ্গা৷ একই সময়ে লাংকাওইতে প্রবেশ করে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা৷ সমুদ্র থেকে স্থলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে৷ ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়া মানুষগুলো এখনো মুক্ত নয়৷
ছবি: Reuters/R. Bintang
ক্লান্ত
মানবপাচারকারীরা তাঁদের ছেড়ে যাওয়াতে সমুদ্রবক্ষে বিপদেই পড়েছিলেন রোহিঙ্গারা৷ আনুমানিক সপ্তাহ খানেক সমুদ্রপথে ঘুরে অবশেষে ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত অবস্থায় তাঁরা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছান৷ দীর্ঘ অর্ধাহার, অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে৷ তাঁদের চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা
প্রতিবছর এভাবেই মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও থাকেন সব সময়৷ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলায় অনেক নৌযান ডুবে যায় সাগরে, সলিলসমাধি হয় অনেকের৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি৷
ছবি: Asiapics
ওদের কোনো দেশ নেই!
বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারে ৮ লক্ষের মতো রোহিঙ্গা মুসলমানের বাস৷ তবে সংখ্যাটা দ্রুতই কমছে৷ বৌদ্ধদের সঙ্গে দাঙ্গার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই৷ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না৷ তাদের মতে, রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’৷ আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে ঐতিহাসিক কারণেই তাঁদের মিয়ানমার থেকে আগত বহিরাগতের মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ৷
ছবি: Reuters/R: Bintang
আধুনিক দাস-বাণিজ্য
মানবপাচারকারীদের কাছে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ছাড়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা যেন ক্রীতদাস৷ মাত্র ২০০ ডলারের বিনিময়ে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নৌযানে তুললেও যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়৷ খেতে না দেয়া, ছোট্ট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা, শারীরিক নির্যাতন – বলতে গেলে সব ধরণের অত্যাচারই চলে তাঁদের ওপর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Yulinnas
থাইল্যান্ড নিয়ে আতঙ্ক
রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ডেও যান৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে আড়াই লাখ মানুষ অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য থাইল্যান্ড অবশ্য একেবারেই নিরাপদ ঠিকানা নয়৷ মানবপাচারকারীরা সে দেশে নিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে৷ মুক্তিপণ না দিলে মেরেও ফেলা হয়৷ সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বেশ কিছু গণকবরের সন্ধান পেয়েছে থাই সরকার৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
পরিত্যক্ত
থাইল্যান্ড সরকারের অভিযান শুরুর পর অনেক রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিকে গভীর জঙ্গলে ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়৷ মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে এ পর্যন্ত অন্তত শ’ খানেক অভিবাসন প্রত্যাশীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে থাই কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/Getty Images/Str
7 ছবি1 | 7
মিয়ানমারে এখন ক্ষমতায় নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল৷ রোহিঙ্গাদের অধিকার বিষয়ে সু চির ভূমিকার সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন৷
নৌকাডুবির খবর পরিবেশনের সময় জাতিসংঘের ‘রোহিঙ্গা' শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়টি টুইটে উল্লেখ করেছেন এএফপির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেদক জেরোমে টেলর৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷