1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিয়োগে কড়াকড়ি, নেওয়া যাবে না যৌতুক

৫ জুলাই ২০১৮

পণ বা যৌতুক দেওয়া-নেওয়া রুখতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করেছে৷ গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের এমন শর্ত কি আদৌ ফলপ্রসূ হবে?

Indien Philantrop sponsort Massen-Hochzeit
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Solanki

পণ দেওয়া বা নেওয়া আইনত দণ্ডনীয়৷ সচেতনতা বৃদ্ধি, ক্যাম্পেন, কড়া আইন প্রণয়ন সত্ত্বেও নিরুপমার সেই ‘দেনা পাওনা'র যুগ থেকে আজকের যুগেও এই সামাজিক অসুখ বহাল তবিয়তে টিকে আছে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই অসুখ নির্মূল করতে সম্প্রতি শর্ত চাপিয়েছে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে৷

খুব তাড়াতাড়িই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অশিক্ষক' কর্মচারী পদে নিয়োগ শুরু হচ্ছে্৷ রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে যথাক্রমে ২৬০ ও ৩৩১ জনের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে বেশ পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে, বিয়েতে যৌতুক দেওয়া-নেওয়ার গন্ধ থাকলে চাকরি জুটবে না৷ এহেন কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিন্ডিকেট৷ এমন উদ্যোগ আগে দেখা যায়নি৷ কিন্তু সত্যিই কি এই উদ্যোগ কোনও কাজের?

আইনে কাজ হয়নি, চাকরির শর্তে হবে?

অনেকেই মনে করছেন, এ উদ্যোগ হাস্যকরভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হবে৷ বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই অবাস্তব৷ কোনো ব্যক্তি লিখিতভাবে পণ দেওয়া-নেওয়ার কাজটি করেন না৷ কেউ স্বীকারও করবেন না পণ নেওয়ার কথা৷ তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করবে?''

তাঁর মতে, আইন তো ছিলই, তা সত্ত্বেও যদি পণ বা যৌতুক টিকে থাকে, তাহলে চাকরির শর্ত কি খুব কাজে আসবে? সমাজকেই এ রোগ নির্মূল করতে হবে৷ শর্ত চাপিয়ে লাভ হবে না৷

বোলান গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬১ সালের যে পণ বিরোধী আইনের কথা বলছেন, তাকে আপাতত শীতঘুমে পাঠিয়ে বধূ নির্যাতনে এ রাজ্য বিশিষ্ট স্থান দখল করেছে৷ এমনকি ‘প্রোটেকশন উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ২০০৫' অ্যাক্ট বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩০৪বি ও ৪৯৮এ ধারাতে পণ নেওয়া বেশ গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য৷

শুধু ‘অশিক্ষক' কেন?

২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ফুলবাগানের পিঙ্কি মালিককে পণের দাবিতে খুন করা হয়৷ উল্লেখ্য, পিঙ্কির স্বামী ছিলেন গ্রুপ ডি কর্মী৷ আবার গত মাসে বাঁশদ্রোণীতে পায়েল চক্রবর্তীর মৃত্যুর কারণও সেই পণ৷ মৃতার স্বামী একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক৷ কাজেই পণ দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রটা কোনও নির্দিষ্ট গ্রুপে সীমাবদ্ধ নেই৷ সে ক্ষেত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই শর্ত শুধুমাত্র গ্রুপ সি বা গ্রুপ ডি স্তরে আবদ্ধ রাখল কেন?

এমনই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অরণি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সবার জন্য আইন সমান হওয়া উচিত৷ গ্রুপ সি বা ডি শুধু পণ নেয় না, অনেক ওপরতলাতেও পণ নেওয়ার চল আছে৷

তাঁর মতে, ব্যাপারটা ধোঁয়াটে৷ আইডিয়া হিসেবে এটা শুনতে ভালোই লাগছে৷ কিন্তু সংশয় রয়েছে এর প্রয়োগ নিয়ে৷ পণ দেওয়া নেওয়া প্রমাণ হবে কী করে? কেউ অভিযোগ না করলে এটা তো জানাই যাবে না৷ এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার পন্থা না হয়ে দাঁড়ায়৷

Arani - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তবে চাকরিতে এমন শর্ত নিঃসন্দেহে কর্মী মহলে পণ দেওয়া নেওয়ায় ভীতি প্রদর্শন করবে। এমনটাই মনে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান সনৎ নস্কর৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে ভীষণভাবেই স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘পণের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা সীমিত৷ কিন্তু চাকরি থাকলে ওই টাকা রোজগার করে ফেলা যায়৷ তাই চাকরি বাঁচাতেই সবাই পণ থেকে দূরে থাকবেন৷''

কিন্তু এতরকমের আইন থাকতেও যেখানে অবাধে পণপ্রথা চলে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কড়াকড়ি কতটা সফল হবে? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নস্কর জানান, আসলে বি্শ্ববিদ্যালয়ের পরিসর অনেক বড় নয়৷ কিন্তু, সামাজিকভাবে কে কী করছে জানার অবকাশ থাকে না৷ এখানে তো সহকর্মীরাই সব জানিয়ে দেবে কর্তৃপক্ষকে৷ আইনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা দায়বদ্ধতা বা বাধ্যতামূলক স্তরে পৌঁছায় না, এখানে সেটা পৌঁছাবে আশা করা যায়৷

অধ্যাপক নস্কর মনে করেন, পুরো বিষয়টিতে যথেষ্ট স্বচ্ছতার দরকার৷ তবেই এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে৷

বিহারের নীতিশ কুমারের সরকার পণের দাবি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে অনেকটা এমনই পথ নিয়েছে৷ বিহারে কোনও সরকারি কর্মচারী বিয়ের সময় যৌতুক নিলেতাকে চাকরি খোয়াতে হবে৷ এমনকি, বিহারে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে সবাইকে শপথ নিতে হয় যে, বিয়ের সময় তারা কোনও যৌতুক নেবে না৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কি এবার সেই পথে হাঁটতে চলেছে? এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক অরণি বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, বিহারেও বহু সরকারি স্তরে কর্মীরা পণ নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে৷ তাদের ক'জনের শাস্তি হচ্ছে? তাই এখানেও পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া দরকার৷

প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কোনও চাকরিপ্রার্থী নিজেকে পণ-গ্রহীতা হিসেবে কেনই বা স্বীকারোক্তি দেবে? চাকরির মতো মহার্ঘ বিষয়ে কেন আবেদনকারী স্বেচ্ছায় নিজের নাক কেটে নিজেরই যাত্রা ভঙ্গ করবেন, এটা কার্যত অসম্ভব বলেই শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছে৷

মোট কথা, কেবল প্রগতির শর্ত চাপিয়েই আপাতত স্বস্তি নেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ সেটা ঠিকঠাক পালন হলো কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে৷ নইলে বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা অনুযায়ী বলতে হবে, ‘‘পদক্ষেপ তো নেওয়াই যায়, কিন্তু তাতে পণপ্রথা বন্ধ করা যায় না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ