তৃণমূলের আর এক যুব নেতার বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলল। আদালতে ইডি-র দাবি, সবমিলিয়ে নিয়োগ দুর্নীতর অঙ্ক পৌঁছে গিয়েছে ৩৫০ কোটি টাকায়।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে স্কুল নিয়োগ দুর্নীতিতে একের পর এক নতুন নাম উঠে আসছে। এদের কেউ কেউ সরাসরি শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ। এবার জালে হুগলিরই আর এক তৃণমূল যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ।
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, ছোটখাটো মোবাইল দোকানের ব্যবসা ছিল শান্তনুর। দেড় দশক আগে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় চাকরি পান। প্রযুক্তিগত কাজের সহযোগী হিসেবে শান্তনুর মাসে অনধিক ৫০ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার কথা। তাই সাদামাটাই ছিল তার জীবনযাত্রা।
তৃণমূলে যোগ দেয়ার পর দ্রুত উত্থান হয় শান্তনুর। ইডি সূত্রের খবর, এখনো পর্যন্ত তার ২০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ, একাধিক বহুমূল্যের ফ্ল্যাট ও জমি, অতিথি নিবাস।
কলকাতার রাস্তায় কেন দণ্ডি কাটলেন নারীরা?
নারীদিবসের দিন কলকাতার রাস্তায় দণ্ডি কাটতে দেখা গেল এই মেয়েদের। কেন এই কাজ করলেন তারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিনব প্রতিবাদ
গত ৭২৫ দিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতামান পেরোনোর পরেই দুর্নীতির জন্য তারা চাকরি পাননি বলে অভিযোগ। নারীদিবসে নারীদেরকেই সামনে রেখে তাদের প্রতিবাদ মিছিল এগিয়ে চলে। কালো পোশাক পরা নারীরা দণ্ডি কাটতে কাটতে এগিয়ে যান। কেউ ভেঙে পড়েন কান্নায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুইটি সংগঠনের ডাকে
এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল দুইটি সংগঠন। একটি হলো ময়দানে গান্ধী-মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসা নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদে চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন। তারা শিয়ালদহ থেকে রওয়ানা হয়ে এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে মঞ্চে ফেরেন। অন্যটি সরকারি কর্মীদের সংগঠন, যারা ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধর্মতলায় দণ্ডি কাটা
ধর্মতলায় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয় মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের দণ্ডি কাটা। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই জন্য রাস্তায় জল ছেটাচ্ছিলেন পুরুষ কর্মপ্রার্থীরা। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘শুনেছি দণ্ডি কাটলে ভগবানও প্রার্থনা পূরণ করেন। নারীদিবসে আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কানে কি এই কাতর আবেদন পৌঁছচ্ছে না?”
ছবি: Subrata Goswami/DW
'দয়া চাই না, চাকরি চাই'
কারও কারও দাবি, তারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকার দয়া চান না, চান স্বনির্ভর হতে। বুধবার তিলোত্তমার রাজপথ সাক্ষী ছিল এমনই এক মিছিলের যার পুরোভাগে ছিলেন এসএলএসটি ২০১৬’র বঞ্চিত চাকরিপার্থী নারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সঙ্গী পুরুষরাও
নারীরা একা ছিলেন না। ছিলেন পুরুষ বিক্ষোভকারীরাও। নারীরা যখন দণ্ডি কাটছিলেন, তারা র্সাতয় জল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। নারী সহযোদ্ধাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে সর্বত্রই ছিলেন পুরুষ কর্মপ্রার্থীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঘুম ভাঙবে কবে?
মিছিলে এক চাকরিপ্রার্থীকে কুম্ভকর্ণ সাজানো হয়। কুম্ভকর্ণ ঘুমিয়ে আছেন আর তাঁর কানের কাছে সমানে শাঁখ ও কাঁসর বাজাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চিৎকার করে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘কুম্ভকর্ণ সরকার, এ বার জাগা দরকার।’ কুম্ভকর্ণ হলেন রামায়ণের চরিত্র ও বারণের ভাই, যিনি ছয় মাস ঘুমাতেন, ছয় মাস জাগতেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতীকী মরদেহ
মিছিলে ছিল কর্মপ্রার্থীদের প্রতীকী মরদেহও। তাদের দাবি এই রাজ্যে যোগ্য কর্মপ্রার্থীদের মৃত্যু হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সফল হননি
তাদের আর্জি নিয়ে বহুবার নানা উপায়ে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা, কিন্তু এখনো তারা সফল হননি। উল্টে তারা পেয়েছেন পুলিশের মার আর জেলে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা। এবার তারা অভিনব প্রতিবাদ দেখালেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
এর মধ্যে কয়েকটি সম্পত্তি রয়েছে স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ মালিকানায়। প্রিয়ঙ্কাকে চলতি সপ্তাহে তলব করেছে ইডি। সামান্য চাকরি করে কীভাবে শান্তনুর এই বিপুল সম্পত্তি হল, তার তল পেতে চান তদন্তকারীরা। সোমবার শান্তনুকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠিয়েছেন।
শান্তনুকে ইডি আদালতে পেশ করার সময় তার দলেরই নেতা কুন্তল ঘোষের দিকে আঙুল তুলেছেন। শান্তনুর দাবি, ''তদন্তকে বিপথে চালানোর চেষ্টা করছে কুন্তল। ও এই দুর্নীতির 'মাস্টারমাইন্ড'। কুন্তল যে টাকা তুলেছে তা বাইরে পাচারের চেষ্টা করছে।''
কুন্তল আবার দাবি করেছিলেন, তিনি শান্তনুকে এক কোটি টাকা দেন। যদিও শান্তনু সেকথা খারিজ করে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, ''আমি কোনো টাকা নিইনি কুন্তলের কাছ থেকে।'' তৃণমূলের দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় অস্বস্তি বেড়েছে শাসক দলের।
নতুন বছরের আনন্দ নেই, আছে শুধু আন্দোলনের পথ
কলকাতা-সহ পুরো দেশ যখন নতুন বছরের খুশিতে মাতবে, তখনো এই মানুষগুলি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে যাবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিবাদে, প্রতিরোধে
তারা কেউ ছয়শ দিন ধরে, কেউ ১৭০ দিন ধরে, কেউ ১৩৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। সরকার তাদের দাবি মানেনি। তা সত্ত্বেও আশায় বুক বেঁধে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, চাকরি পাওয়ার আন্দোলন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শহিদ মিনারের পাশে
“দাবি মোদের একটাই, যোগ্য লোকের চাকরি চাই” এমন নানান স্লোগানে মুখরিত ধর্মতলার শহিদ মিনারের পাশের এলাকা। আপার প্রাইমারি, গ্রুপ-ডি, মাদ্রাসার শিক্ষাকর্মী নিয়োগ, এরকম নানান ক্ষেত্রের চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান করছেন। ২০২২-কে বিদায় ও ২০২৩-এর শুরুও তারা দেখবেন এই অবস্থানে বসে থেকেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কবে মানা হবে দাবি?
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সাড়ে ছয়শো দিনেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করে আসছেন এসএসটির চাকরিপ্রার্থীরা। অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের প্রতিবাদে তারা আন্দোলনের পথ দেখিয়েছিলেন। তাদের দাবি মানা হয়নি। তাদের আন্দোলনও চলছে। চলবে নতুন বছরেও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
লড়াই করে বাঁচা
সেই পথ অনুসরণ করে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নিচে ১৯০দিন ধরে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কলকাতা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত আন্দোলনের শহর বলে। কলকাতার সেই আন্দোলনের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
১৩৫ দিন ধরে
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনও ১৩৫ দিন অতিক্রান্ত। সাধারণ মানুষ যখন বর্ষশেষের উৎসবে মাতোয়ারা, সেইসময় চাকরির দাবিতে জীবনযাপনকে উৎসর্গ করেছেন এই চাকরিপ্রার্থীরা। প্রথম প্রথম মিডিয়া খবর করে। তারপর তারা থেকে যান খবরের বৃত্তের বাইরে। তখন শুধু দিন যোগ হয়। সামনের বছর কি এই সময়ে পাঁচশ দিন ধরে আন্দোলন করতে দেখা যাবে তাদের!
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু আশা নিয়ে
মাতঙ্গিনী হাজরার মুর্তির নীচে ৩২ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন সুন্দরবনের প্রেমাংশু হালদার। কিছুদিন হলো বাবার ব্লাডক্যান্সার ধরা পড়েছে। আপার প্রাইমারির প্রার্থী, আটবছর ধরে চাকরির আশায় থেকে থেকে দিন মজুরের কাজ শুরু করেছিলেন। এখন অনশন-প্রতিবাদ চলছে। যদি তার কথা পৌঁছয় কর্তাদের কানে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই, না হলে আব্দোলন
বিকেল গড়াতে না গড়াতেই মশার উপদ্রবে বসা দুষ্কর হয়ে ওঠে। তবু হাল ছাড়েননি এই আন্দোলনকারীরা। এসএসসি আন্দোলনকারীদেরই একজন শহিদুল্লাহ জানালেন, নিয়োগপত্র হাতে পেলে সেটাই হবে আমাদের উৎসব। যতক্ষণ না হাতে পাচ্ছি, বড়দিন, নতুন বছর সবই আমাদের কাছে অর্থহীন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আসা-যাওয়ার মাঝখানে
নদীয়ার হরিনঘাটা অঞ্চলে বাড়ি মেহেবুবা খাতুনের। চার বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল এগারোটায় এই ধর্ণামঞ্চে এসে পৌঁছনোর জন্য বাড়ি থেকে সকাল সাতটায় রওনা দেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বাজে। এভাবেই চলছে। জানেন না আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে। তার জীবনে কোনো উৎসব নেই। আছে শুধু যাওয়া-আসা এবং প্রতিবাদ জানানো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আশার আলো নিভে গেলো
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েও আপার প্রাইমারিতে একবার নিয়োগ বাতিল। এক নিয়োগে দু-দুবার ইন্টারভিউ সম্পন্ন করেও আজ নিয়োগ অধরা। অবস্থানকারীদের দাবি- তারা বঞ্চিত, ইন্টারভিউয়ের ডাক পাননি। দীর্ঘ আট বছরে শূন্যপদ বৃদ্ধি হয়নি। গেজেট মেনে ইন্টারভিউ ১৫ দিন আগে পর্যন্ত সমস্ত শূন্যপদ বৃদ্ধি করে তাদের ইন্টারভিউ ডাকতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অন্য পথ নেই
গ্রুপ-ডির আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ঘোষিত শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী অধীনে দপ্তর, তবুও তারা আজ নিয়োগের দাবিতে রাজপথে অবস্থানে। এছাড়া তাদের কাছে আর কোনো রাস্তা নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন বছরে
তাদের এই মরিয়া প্রয়াস কি নতুন বছরে সফল হবে? তাদের কি দাবিপূরণ হবে? রাজপথে আন্দোলনের জীবন থেকে তারা কি পৌঁছতে পারবেন চাকরির জীবনে? নতুন বছর তাদের জন্য কী খবর নিয়ে আসবে তা জানা নেই, তবে তারা একটা কথা জানেন, বছর ঘুরে যায়, তবু দিন বদলায় না। তবু, সফল হওয়ার আশাটুকু নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, যাবেনও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
তৃণমূলপন্থী পর্যবেক্ষক ভাস্কর সিংহরায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''কোর্টে পেশ করার সময় কে কী বলছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। তদন্তকারী সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সাক্ষ্যপ্রমাণ সহ আদালতে পেশ করলে তা গুরুত্ব পাবে।''
কুন্তল ও শান্তনুর বিরোধ সম্পর্কে সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''নিজের অপরাধ লঘু করতে অন্যের নাম বলতে পারেন। কিন্তু তাতে অপরাধ ঢাকা যাবে না। কাদের আশ্রয়ে এই বাড়বাড়ন্ত সেটা দেখতে হবে।''
শান্তনুর কাছ থেকে চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা, ছবি মিলেছে। তার দুটি মোবাইল ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। ইডির দাবি, মোবাইলে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা 'সোনার খনি'। কিন্তু যে চ্যাট হিস্ট্রি শান্তনু মুছে দিয়েছেন, সেই তথ্য উদ্ধার করতে চাইছে ইডি।
সোমবারের শুনানিতে ইডির আইনজীবী বলেছেন, ''দুর্নীতির অঙ্ক সাড়ে ৩০০ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। পুরুলিয়ার ছোট টিলা থেকে এই দুর্নীতি পৌঁছে গিয়েছে এভারেস্টের চুড়োয়।''
এই প্রসঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''যে সম্পত্তি আপনারা দেখছেন, তা শান্তনুর নয়। তিনি এখানে শিখণ্ডী। এই সম্পত্তি আর এক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের।''