নিয়োগ দুর্নীতি: এক বিচারকের বেঞ্চ থেকে সরালো সুপ্রিম কোর্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নিয়োগ মামলার বিচার করতে পারবে না, জানিয়ে দিলো সুপ্রিম কোর্ট।
বিজ্ঞাপন
এর ফলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিচারপতি অমৃতা সিনহা পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার বিচার করতে পারবেন না। বৃহস্পতিবারই হাইকোর্টের তরফে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বেঞ্চ থেকে নিয়োগ মামলা সরিয়ে দেয়া হবে। ফলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার বিচার এবার ডিভিশন বেঞ্চ করবে।
রাজ্য়ের অ্য়াডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সম্পর্কে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইঞাঁর বেঞ্চে মামলাটি উঠেছিল। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্য়ায় সেখানে বলেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন কিশোর দত্ত কার জুতো চেটে অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছেন তা তিনি জানেন। তার জবাবেই বিচারকেরা জানান, এই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।
পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী ও এক কাউন্সিলারের বাড়িতে এবার ইডি তল্লাশি
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই তল্লাশি। পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সূত্র ধরে এই তল্লাশি চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুজিত বসুর বাড়িতে
সুজিত বসুর বাড়িতে সকাল সাতটা নাগাদ ইডি কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রচুর সশস্ত্র জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে যান। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মন্ত্রীর বাড়ি কার্যত ঘিরে ফেলেন। তারপর থেকে তার বাড়িতে তল্লাশি চলছে। দুপুরেও তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির কর্মকর্তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্দেশখালি থেকে শিক্ষা নিয়ে
সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি কর্মকর্তারা। শ্রীভূমিতে সুজিতের বাড়ির সামনের রাস্তায় টহল দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। জটলা হলেই তারা সরিয়ে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে রুট মার্চ করছেন। বন্দুক, লাঠি ছাড়াও তাদের কাছে কাঁদানে গ্য়াসের সেল আছে। বোঝা যাচ্ছে, তারা সবদিক চিন্তা করে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে এসেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জানানো হয়েছে পুলিশকেও
সন্দেশখালির ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশকে না জানিয়ে কেন সেখানে গিয়েছিল ইডি। এবার তারা পুলিশকে জানিয়েই গিয়েছে। সুজিতের বাড়ির কাছে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির কাছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী অভিযোগ?
সুজিত বসুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে কিছু নথি পেয়েছে ইডি। সেই সূত্র ধরেই মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রধান ছিলেন সুজিত বসু। তখনই দুর্নীতি হয়েছিল বলে মনে করছে ইডি-র তদন্তকারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রভাবশালী সুজিত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের মধ্যে সুজিত বসুকে যথেষ্ট প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। দমকলমন্ত্রী সুজিত এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, তার সাবেক আপ্তসহায়ক নিতাই দত্তকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত
গত মার্চে অয়ন শীলকে জেরা করতে গিয়ে এই কেলেঙ্কারির কথা জানতেপারে ইডি। বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের বিনিময়ে দুইশ কোটি টাকা তোলার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শ্রীভূমির পুজো থেকে মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহো
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো হলো সুজিত বসুর পুজো। প্রতিবছর এই পুজো দেখতে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হন। কোনোবার সেখানে লেজারের চমকপ্রদ শো থাকে, কোনোবার উঠে আসে ডিজনিল্যান্ড। ভিআইপি রোড ধরে উল্টোডাঙ্গা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে বাঁদিকে শ্রীভূমির সামনে রয়েছে বিগ বেনের অনুকরণে স্তম্ভ। সেটাও সুজিত বসুর উদ্যোগেই হয়েছে। মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহোরা যখন কলকাতায় এনেছিলেন তখনও তাদের পাশে দেখা গিয়েছিল সুজিতকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের বাড়িতে
সুজিত বসুর পাশাপাশি রাজ্যের আরেক মন্ত্রী তাপস রায়ের বাড়িতেও তল্লাশি করছে ইডি। বৌবাজারে তাপস রায়ের বাড়ি ও নিজের অফিস পাশাপাশি। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস ও তৃণমূল করছেন তাপস। ইডি সূত্রে জানা গেছে, তাপস রায়ের নির্বাচনকেন্দ্র বরাহনগরে পুরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তা নিয়ে তদন্ত করার সূত্রেই তারা তাপস রায়ের বাড়িতে তল্লাশি করছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের পরিচিতি
তাপস রায় সোজাসাপ্টা কথা বলেন। অনেক সময় তার কথার সূত্রে দলের মধ্যেই বিতর্ক হয়। বৌবাজারের বাসিন্দা তাপস রায়ের নামে এতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো অভিয়োগ ওঠেনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আরো তল্লাশি
সুজিত বসু, তাপস রায় ছাড়াও উত্তর দমদম পুরসভার কউন্সিলার সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও ইডি-র তল্লাশি চলছে। সুবোধ তৃণমূলের কাউন্সিলার। তার বিরুদ্ধেও পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সূত্রেই তদন্ত হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
চাকুরিরত প্রাথমিক শিক্ষকরা সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট দুইটি নির্দেশ দিয়েছে। প্রথমত, যারা চাকরি পাননি, তারা তাদের কথা জানাতে পারবেন। সেজন্য তাদের নোটিশ দেয়া হবে। আর আপাতত প্যানেলের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ থাকবে।
মামলা সরলো
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতি সেনের বেঞ্চ থেকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, বিচারপতি, তপোব্রত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ''মামলা সিঙ্গল না দুই বিচারপতির বেঞ্চে হবে তা আমরা জানি না। আমরা জানি ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তার বিচার চাই। শাস্তি চাই। পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে। পুলিশের কাজ সিবিআইকে করতে হচ্ছে।''
বিক্ষোভকারী কমেছে, তাও প্রতিবাদ চলছে
কলকাতায় শহিদ মিনারের কাছে একধিক প্রতিবাদ চলছে। একটি তো প্রায় নয়শ দিন ধরে। এখন কেমন সেই প্রতিবাদের চেহারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সবচেয়ে বেশিদিনের প্রতিবাদ
২০১৬ সালে তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তারপরেও চাকরি পাননি। কারণ, নিয়োগ-দুর্নীতি। অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। প্রায় ৮৮০ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আগে এই বিক্ষোভে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র একজনকে। কোনো দিন আরো কিছু বিক্ষোভকারী আসেন। কিন্তু আগের মতো প্রতিদিন এক-দেড়শ মানুষের বিক্ষোভ হয় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ আদায়ের দাবিতে
একই হাল বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ আদায়ের জন্য গঠিত সংগ্রামী যৌঘ মঞ্চের। সেখানে কয়েকজন বসে-শুয়ে আছেন। একটা সময় এই মঞ্চও গমগম করত। প্রচুর মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে আসতেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিল। এখন আর সেই ছবি নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভি ক্যামেরা
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। কারা আসছেন, কী করছেন, তার উপর নজর রাখার জন্য। বিশেষ করে বহিরাগতরা যাতে ঢুকে কিছু করতে না পারে, তার জন্য বেশি করে এই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্থ চাই
এই আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থের আবেদনও জানানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে মানুষ পয়সা দিতে পারবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টেট-বিক্ষোভের একই হাল
যারা টেট পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি, তারা আলাদা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। যা পাস করলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায়। এখানেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এই অবস্থা?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরাই তাদের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আসতেন। এখন স্কুল খুলে গেছে। পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্র থেকে খাতা দেখার কাজ আছে। তাই শিক্ষকরা সেভাবে আসতে পারছেন না। অন্য অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি
অনিরুদ্ধের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। অগাস্টে তারা দুইটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। ১৪ অগাস্ট তাদের বিক্ষোভের দুইশ দিন পূর্ণ হবে। তখন একটা কর্মসূচি হবে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও একটা কর্মসূচি নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, সকলের একইরকমভাবে লেগে থাকার মানসিকতা থাকে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসাহ কমছে
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের উৎসাহ কমেছে। আগের মতো তাই বিক্ষোভকারী আসছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এভাবে কতদিন?
কল্যানীর তনয়া বিশ্বাস বললেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়? পেট তো চালাতে হবে। কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনে আর প্রতিদিন আসা যায় না। সবকিছু ছেড়ে যারা আন্দোলনে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন, তারা এখন এই কঠোর বাস্তবের সামনে পড়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু প্রতিবাদ চলছে
মানুষ আগের মতো আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ থেমে যায়নি। চলছে। প্রতিটি প্রতিবাদমঞ্চে অল্প হলেও মানুষ আসছেন। আগের মতো রোজ প্রত্যেকে আসতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নিভে যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ''সিবিআই তদন্তে এদিক ওদিক করছে। সেজন্য আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত হওয়াটা জরুরি। নির্দিষ্ট সময়ে শুনানি শেষ করতে হবে। যাতে সময়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তার থেকেও জরুরি, ছয় মাসের মধ্য়ে যোগ্য ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের শিক্ষক পদে নিয়োগ করা।''
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''এটা পুরোপুরি আইনি বিষয়। সুপ্রিম কোর্ট এখানে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে। তাই দলের কোনো বক্তব্য রাখার অবকাশ নেই।''