মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়৷ ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নির্দেশনা দেয়ার সময় সবাইকে নীতিমালা মেনে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন৷
‘‘আপনারা এমন কিছু করবেন না যেন নীতিমালা ভঙ্গ হয়, নীতিমালা ভঙ্গ করলে আপনাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে,'' বলেন তিনি৷
রাষ্ট্রীয় সংস্থার কোনো সদস্যকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার নির্দেশনা দেন তিনি৷ এছাড়া ভোট চলার সময় ও পরে পর্যবেক্ষকদের আচরণবিধি কী হবে তা-ও বিস্তারিত তুলে ধরেন হেলালুদ্দীন আহমদ৷
ইসি সচিব বলেন, পর্যবেক্ষকরা এমন কিছু করতে পারবেন না যাতে মনে হয়, তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন৷ সেজন্য গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়া বা লাইভ সম্প্রচারে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি৷
‘‘পর্যবেক্ষকরা কোনো লাইভ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, কোনো ইন্টারভিউ দিতে পারবেন না৷ এমন কিছু করতে পারবেন না যেন মনে হয় তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন৷ পর্যবেক্ষকদের আচরণ নিরপেক্ষ হবে৷''
ভোটের রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে কোনো মন্তব্যনা করার পরামর্শ দেন সচিব৷ ‘‘তিনি (পর্যবেক্ষক) শুধু দেখবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন,'' বলেন হেলালুদ্দীন৷ ‘‘(রিপোর্ট তৈরি) শেষ হলে প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন ও রিপোর্ট কমিশনে জমা দিতে পারেন৷''
নিজের দলের চাইতে বাংলাদেশে বহু রাজনীতিকরই আস্থা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে৷ তাই বড় দুই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যেতে চান এসব দলের নেতারা৷ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতীকের কারবার দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reutersনির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল৷ এর মধ্যে ২০টির সম্পর্ক আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জোটে৷ এদের অনেকেই দল দু’টির প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ কেউ কেউ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিজের প্রতীকেই নির্বাচন করতে চায়৷ আবার কোনো কোনো দলের নেতাদের একটি অংশ নিজের দলের প্রতীকে ও অন্য অংশ বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman১৫ নভেম্বর ছিল কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়, তা নিশ্চিত করার শেষ দিন৷ সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা চিঠিতে মোট ১৫টি দলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা আটটি৷
ছবি: Mustafiz Mamunহাসানুল হক ইনু বর্তমান আওয়ামী লীগের জোটের সরকারের মন্ত্রী৷ আগেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন৷ এবারও তাঁর দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নৌকায় নির্বাচন করবে৷ একই কথা প্রযোজ্য আরেক বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রেও৷
ছবি: privatএছাড়া নৌকায় আরো যেসব দল নির্বাচন করবে তারা হলো, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির তরিকত ফেডারেশন, দীলিপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, আরশ আলীর গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি৷
ছবি: bdnews24জাতীয় পার্টি নিজস্ব প্রতীক লাঙল নিয়ে নির্বাচনে করবে৷ বিকল্পধারা নিজস্ব প্রতীক কুলায় নির্বাচন করতে চায়৷ তবে তারা কিছু আসনে নৌকাও চায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ তাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টেরও মুক্তিজোট ও বিজেপি (মতিন) নামে দুটি নিবন্ধিত দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ (ফাইল ছবি)
ছবি: picture-alliance/dpaআওয়ামী লীগের প্রতীকে যেসব অনিবন্ধিত দলের নেতা নির্বাচন করবেন সেগুলো হলো, গণ আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি৷
ছবি: bdnews24.com৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১১টি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে৷ ১৫ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamunঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে যে, তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে৷ ঐক্যফ্রন্টের নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের দল জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ৷ অনিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও অংশ নেবেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে৷ সম্প্রতি জোটে যোগ দিয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া৷
ছবি: bdnews24.comবিএনপির জোটের নিবন্ধিত দল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, বিজেপি, জাগপা ও মুসলিম লীগ ধানের শীষে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে৷ জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় তাদের নেতারাও তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে৷
ছবি: bdnews24.comনিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ প্রায় অর্ধেক নিজের প্রতীকে অংশ নেবে নির্বাচনে৷ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘‘দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বাম দলগুলোর ব্যর্থতা৷ এছাড়া দুর্বৃত্ত ও কালো টাকার মালিকরা নির্বাচনে আসে দুই দলের হয়ে৷ তারাই জয়ী হয়৷ এখানে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই৷’’
ছবি: bdnews24.com ভোট চলাকালীন পর্যবেক্ষকদের কাজের পরিধি সম্পর্কে আরো বলা হয় যে, তাঁরা ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না, ছবি তুলতে, কোনো গোপন কক্ষে যেতে, কাউকে নির্দেশনা দিতে এবং প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারদের কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না৷
‘‘যদি কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হয়, সেটা তাঁরা কমিশনকে বা সংস্থার নির্বাহী ব্যক্তিকে অবহিত করতে পারেন,'' বলেন ইসি সচিব৷
সচিব জানান যে,নির্বাচনে ৪০ হাজার ২০০টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে পর্যবেক্ষক রাখার একটা নীতিমালা করা হবে৷ এছাড়া, পর্যবেক্ষকদের বয়স ২৫ বছরের নিচে হতে পারবে না এবং তাঁদের অন্তত এসএসসি পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে৷
পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় নিবন্ধিত ১১৮টি সংস্থাকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ইসিতে আবেদন করতে হবে৷
এছাড়া ইসি আশা করছে যে, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করবে৷ তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ২৫ নভেম্বর পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসবে কমিশন৷
এবারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবেবলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ৷
জেডএ/এসিবি (বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম)