1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নুসরতের বড় ‘অপরাধ' দায় এড়ানো, ১৪৪-কে ১৭৪ বলা নয়

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত জাহান। সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলতেই তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নুসরত জাহান। ছবি: Subrata Goswami

নুসরত জাহান রুহি সিনেমার দুনিয়ার মানুষ, যে দুনিয়া আবার বাস্তব থেকে অনেক দূরে। বলা হয়, মানুষকে বাস্তব থেকে, প্রতিদিনের দুঃখ-কষ্ট থেকে ঘণ্টা কয়েকের জন্য সরিয়ে নিয়ে যান অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ছবির তারকারা। একটু স্বপ্নের দুনিয়ার বিচরণ করার সুযোগ করে দেন। সেলুলয়েডের পর্দায় সেটাই করে থাকেন নুসরত।

কিন্তু মুশকিল হলো, সেলুলয়েডের দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক অনেকখানি। আর নুসরত তো শুধু বিনোদনের দুনিয়ায় বিচরণ করেন এমন নয়, তিনি আবার রাজনীতির জগতেও ঢুকে পড়েছেন। ২০১৯ সালে সাংসদ হয়েছেন। বসিরহাটের সাংসদ। যে সন্দেশখালিতে এত কাণ্ড হচ্ছে, সেই জায়গাটা আবার তার নির্বাচনক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে।

শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, অজিত মাইতিদের নাম তিনি নিশ্চয়ই জানেন। নুসরত যে দলের সাংসদ, তারা সেই দলেই এতদিন ছিলেন, শেখ শাহজাহান এখনো আছেন। তারা সন্দেশখালিতে যে কীর্তি করেছেন, সেটাও নিশ্চয়ই তিনি শুনেছেন। মানুষের ক্ষোভ, বিশেষ করে নারীরা যেভাবে ঝাঁটা, লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন, অভিযুক্তদের দেখলে তাড়া করছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে সেসব ভিডিও বা রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলিও নুসরত পড়ে থাকবেন বা দেখে তাকবেন- এটুকু আশা করাই যায়।

তারপরও তিনি এতদিন চুপ করে বসেছিলেন। তার সন্দেশখালিতে অনুপস্থিতি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে, সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু নুসরত একটা কথাও বলেননি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনিও মুখ খুলেছেন। আর এটা করতে গিয়ে একটা কাণ্ড করে বসেছেন তিনি। নুসরত বলেছেন, ‘‘আমি এই কথাটা বুঝতে পারছি না আমার এলাকায় না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? সেখানে ১৭৪ ধারা আছে। আমি সেখানে গেলে সঙ্গে পাঁচ জনকে নিয়ে যাবো এবং এটা আইন-শৃঙ্খলার বিরোধী হবে। আমি এমন কিছু করবো না যা আইন-শৃঙ্খলার বিরোধী হয়। মনে রাখবেন, আমরা আইন-শৃঙ্খলার ওপরে নই। আমাদের সবাইকে প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে হবে। জনগণ ন্যায়বিচার পাবে।''

এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় উঠেছে। কারণ, নুসরত যাকে ১৭৪ ধারা বলেছেন, সেটা আসলে ১৪৪ ধারা।  তার এই ১৭৪ ধারা নিয়ে তাই হাসি, মজা, রঙ্গ সবই হচ্ছে। তবে আমরা এতটা নিষ্ঠুর হচ্ছি না। আমরা ধরে নিচ্ছি, নুসরত ওটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। এমনও হতে পারে, তিনি ওটাকে ১৭৪ ধারা বলেই জানতেন। মানুষমাত্রেরই ভুল হতে পারে। কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত এর আগে এরকম ভুলের অনেক মণিমুক্তো ছড়িয়ে আছে। মায় সত্যজিৎ রায় যেখানে থাকতেন, সেই রাস্তার নাম সত্যজিৎ রায় ধরণী করা পর্যন্ত।

আমরা বরং নুসরতের বলা অন্য কথার উপর একটু নজর দিই। তিনি বললেন, তিনি যদি সন্দেশখালিতে যেতেন তো পাঁচজনকে নিয়ে যেতেন। সেটা আইনি হতো না। প্রশ্ন হলো, কেন আরো পাঁচজনকে নিতেন? তিনি দুইজনের সঙ্গে গেলে বা একা গেলেই বা কী অসুবিধা হত? তার নির্বাচনকেন্দ্রের একটা অংশে যখনএতবড় ঘটনা ঘটছে, নারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে, মানুষের জমি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, মারধর করা, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে, তখন তিনি একবারও গিয়ে পরিস্থিতি দেখবেন না? বুঝতে পারছি, তিনি একলা চলোর নীতিতে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু সঙ্গে তো দুই জনকে নিয়ে যেতেই পারতেন তিনি।

এরপর তিনি বললেন, প্রশাসনের উপর সকলকে বিশ্বাস রাখতে হবে, জনগণ ন্যায়বিচার পাবেনই। এতদিন প্রশাসন কী করছিল তা তো সকলের চোখের সামনে চলে এসেছে। তাহলে কী করে এই বিশ্বাস সকলে রাখতে পারবেন? এতদিন পরেও তো শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না পুলিশ। তারপর কী করে তারা ন্যায়বিচার পবেন বলে বিশ্বাস করবেন?

সবচেয়ে বড় কথা, সাংসদ হিসাবে তার কি কোনো দায়িত্ব নেই? যারা তাকে জিতিয়েছে, তাদের সুখেদুঃখে, বিপদেআপদে দাঁড়ানোর কোনো দায় নেই। কতজন তার দেখা পান, জানি না, তবে সন্দেশখালি থেকে কলকাতায় এসে তার দেখা পাওয়াটা কি সম্ভব?

আসলে এই চিত্রতারকাদের রাজনৈতিক দল দাঁড় করায় তাদের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ভোট পাওয়ার জন্য। তারপর সম্ভবত তাদেরও আর কোনো দায় থাকে না। পিআরএস সাংসদদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে দেয়। তারা জানাচ্ছে, নুসরত সংসদের মাত্র ২৩ শতাংশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। দুইটি বিতর্কে তিনি অংশ নেন। সবমিলিয়ে তিনি ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। প্রাইভেট মেম্বার্স বিল আনেননি।

তৃণমূলের বাকি তারকা সাংসদের অবস্থাও তথৈবচ। আরেক তারকা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী মাত্র ২১ শতাংশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সাতটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। দেব যোগ দিয়েছিলেন ১২ শতাংশ অধিবেশনে, তিনি দুইটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। শত্রুঘ্ন সিনহা ৬৩ শতাংশ অধিবেশনে থাকলেও কোনো প্রশ্ন করেননি, কোনো বিতর্কে অংশ নেননি।

তারকা হলেও তো তারা সাংসদ। তারা কি সাংসদের কোনো দায়িত্ব পালন করেছেন? দেব আর দাঁড়াতে চাননি। তাকে আগামী নির্বাচনে জোর করে দাঁড় করাতে চান মমতা-অভিষেক। মিমি যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে তিনি আর দাঁড়াবেন না। শত্রুঘ্ন সিনহা অবশ্য এরকম কোনো ইঙ্গিত দেননি।

কোনো সন্দেহ নেই, এই তারকাদের সিনেমার জগতে অবদান আছে। অনেক পরিশ্রম করে, প্রতিভার কারণে তারা জনপ্রিয় হয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি তো নিছক অভিনয় নয়। এখানে মানুষের পাশে থাকতে হয়। এখানে জানতে হয় কোনটা ১৪৪ ধারা, কোনটা ১৭৪। নির্বাচনকেন্দ্রের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়। সবই যদি প্রশাসন ও পুলিশ করে দেবে, তাহলে তো সাংসদদের কোনো দরকারই ছিল না। আর যখন প্রশাসন ও পুলিশ দায়িত্ব পালন করে না, তখন তো সাংসদের দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়।

জনপ্রিয়তার কারণে, এখন তারকারা ভারতের লোকসভায় জিতে আসেন। দলগুলিও আসন বাড়াবার জন্য তাদের প্রার্থী করে। কিন্তু রাজনীতি তো মানুষকে বাদ দিয়ে করা যায় না। তাই সেই মানুষের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতাও কি দেখাতে পারেন না নুসরতরা? তারা কবে শিখবেন, ১৪৪ ধারা না ভেঙেও মানুষের কাছে যাওয়া যায়, তাদের কথা শোনা যায়, অন্তত তাদের কথা দলের, প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পৌঁছানো যায়।

আর মানুষই বা কখন বুঝবেন, সেলুলয়েডের নায়ক-নায়িকারা সচরাচর তাদের জগত নিয়ে থাকেন। মনোরঞ্জন করেই তো তাদের দায় শেষ হয়ে যায়। তাই তারা অনায়াসে ১৭৪ ধারার কথাও বলে যেতে পারেন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ