প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ নুসরত জাহান। সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুলতেই তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নুসরত জাহান রুহি সিনেমার দুনিয়ার মানুষ, যে দুনিয়া আবার বাস্তব থেকে অনেক দূরে। বলা হয়, মানুষকে বাস্তব থেকে, প্রতিদিনের দুঃখ-কষ্ট থেকে ঘণ্টা কয়েকের জন্য সরিয়ে নিয়ে যান অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ছবির তারকারা। একটু স্বপ্নের দুনিয়ার বিচরণ করার সুযোগ করে দেন। সেলুলয়েডের পর্দায় সেটাই করে থাকেন নুসরত।
কিন্তু মুশকিল হলো, সেলুলয়েডের দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক অনেকখানি। আর নুসরত তো শুধু বিনোদনের দুনিয়ায় বিচরণ করেন এমন নয়, তিনি আবার রাজনীতির জগতেও ঢুকে পড়েছেন। ২০১৯ সালে সাংসদ হয়েছেন। বসিরহাটের সাংসদ। যে সন্দেশখালিতে এত কাণ্ড হচ্ছে, সেই জায়গাটা আবার তার নির্বাচনক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে।
শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, অজিত মাইতিদের নাম তিনি নিশ্চয়ই জানেন। নুসরত যে দলের সাংসদ, তারা সেই দলেই এতদিন ছিলেন, শেখ শাহজাহান এখনো আছেন। তারা সন্দেশখালিতে যে কীর্তি করেছেন, সেটাও নিশ্চয়ই তিনি শুনেছেন। মানুষের ক্ষোভ, বিশেষ করে নারীরা যেভাবে ঝাঁটা, লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন, অভিযুক্তদের দেখলে তাড়া করছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে সেসব ভিডিও বা রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলিও নুসরত পড়ে থাকবেন বা দেখে তাকবেন- এটুকু আশা করাই যায়।
তারপরও তিনি এতদিন চুপ করে বসেছিলেন। তার সন্দেশখালিতে অনুপস্থিতি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে, সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু নুসরত একটা কথাও বলেননি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনিও মুখ খুলেছেন। আর এটা করতে গিয়ে একটা কাণ্ড করে বসেছেন তিনি। নুসরত বলেছেন, ‘‘আমি এই কথাটা বুঝতে পারছি না আমার এলাকায় না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? সেখানে ১৭৪ ধারা আছে। আমি সেখানে গেলে সঙ্গে পাঁচ জনকে নিয়ে যাবো এবং এটা আইন-শৃঙ্খলার বিরোধী হবে। আমি এমন কিছু করবো না যা আইন-শৃঙ্খলার বিরোধী হয়। মনে রাখবেন, আমরা আইন-শৃঙ্খলার ওপরে নই। আমাদের সবাইকে প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে হবে। জনগণ ন্যায়বিচার পাবে।''
সন্দেশখালি : তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য করলেন বিক্ষুব্ধ নারীরা
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অজিত মাইতিকে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করেন নারীরা। নারীদের হাত থেকে বাঁচতে এক বাড়িতে ঢুকে ভিতর থেকে তালা মেরে দেন অজিত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের তাড়া
অজিত মাইতি হলেন সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের কাছের মানুষ। তার বিরুদ্ধেও জমি জবরদখল করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। রবিবার তাকে দেখামাত্রই তাড়া করেন সন্দেশখালির নারীরা। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ঝাঁটা। তাদের দাবি ছিল, অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেই বাড়ি
প্রাণের ভয়ে অজিত এই বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। চার ঘণ্টা এ বাড়িতেই ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে সেখান থেকে আটক করে। সোমবার সকালে জানানো হয়, পুলিশ অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করেছে। এতদিন অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। নারীরা তাড়া করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অজিত মাইতির বাড়ি
এই বাড়িটি অজিত মাইতির। সকাল থেকে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ি ছিল পুরো শুনশান। পরে তাকে দেখতে পান নারীরা। দেখার সঙ্গে সঙ্গে অজিত মাইতি পালিয়ে গিয়ে একটা বাড়িতে লুকিয়ে পড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের বিক্ষোভ চলছে
সন্দেশখালির বেড়মজুরের নারীরা এবার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হলধপ আড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অজিত মাইতিকে সরিয়ে হলধরকেই অঞ্চল সভাপতি করে তৃণমূল। কিন্তু রাতে তার খড়ের গাদায় আগুন ধরানো হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাবেক পঞ্চায়েত সদস্য তপন সর্দার ও বর্তমান সদস্য শঙ্কর হালদারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনেক অভিযোগ
সন্দেশখালিতে একাধিক অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছে পুলিশ। সেখানে গিয়ে মানুষ তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানেই একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে। অধিকাংশই হলো জমি জবরদখল, অত্যাচার ও নারীনিগ্রহের। পুলিশ সব অভিযোগ লিখে নিচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং জবরদখল জমি ফেরত দেয়া হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
একজন অভিযোগকারী
এই অভিযোগকারী বেড়মজুরের। তার জমি জবরদখল করা হয়েছিল। এর জমি নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। টাকা চাইতে গেলেই মারধর করা হতো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হামলার শিকার এক গ্রামবাসী
এই মানুষটি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, শেখ শাহজাহানের নির্দেশে সিরাজ ও অজিত মাইতি মিলে তার বাড়িতে হামলা করে। ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার ছেলেরা এখনো ঘরছাড়া। তিনি আয়লা, আমফানের ত্রাণের টাকাও পাননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেখ শাহজাহান কোথায়?
সন্দেশখালি-কাণ্ডে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তার তিন সহযোগী উত্তম সর্দার, শিবু হাজরা ও অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু শেখ শাহজাহান এখনো ফেরার। তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ এখনো তার খোঁজ পায়নি। স্থানীয় মানুষের জানিয়েছেন, কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে বলা হতো, শাহজাহানের কাছে যেতে, শাহজাহানই নাকি বিচার করে দেবেন। বেড়মজুরে এই বিচার করত শাহজাহানের ভাই সিরাজ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেখানে এখন শুধু পুলিশ
বেড়মজুরে কাঠপোল এলাকায় চারপাশে শুধু পুলিশ। একসময় যেখানে পুলিশের দেখা পাওয়া যেত না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন সেখানে কিছুটা দূরদূর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সারাদিন ধরে টহল
পুলিশ সারাদিন ধরে এলাকায় টহল দিচ্ছে। তারা এখন অতি-সক্রিয়। কিন্তু তাই বলে বিক্ষোভ থামছে না। সমানে চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশি নজরদারি
এভাবে পুলিশ নজর রাখছে চারিদিকে। এলাকাবাসীর বক্তব্য- একসময় তারা চাইতেন পুলিশ আসুক এবং তাদের অভিযোগের সুরাহা করুক। কিন্তু তখন তাদের এখানে দেখা যেতো না। শেখ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
13 ছবি1 | 13
এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় উঠেছে। কারণ, নুসরত যাকে ১৭৪ ধারা বলেছেন, সেটা আসলে ১৪৪ ধারা। তার এই ১৭৪ ধারা নিয়ে তাই হাসি, মজা, রঙ্গ সবই হচ্ছে। তবে আমরা এতটা নিষ্ঠুর হচ্ছি না। আমরা ধরে নিচ্ছি, নুসরত ওটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। এমনও হতে পারে, তিনি ওটাকে ১৭৪ ধারা বলেই জানতেন। মানুষমাত্রেরই ভুল হতে পারে। কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত এর আগে এরকম ভুলের অনেক মণিমুক্তো ছড়িয়ে আছে। মায় সত্যজিৎ রায় যেখানে থাকতেন, সেই রাস্তার নাম সত্যজিৎ রায় ধরণী করা পর্যন্ত।
আমরা বরং নুসরতের বলা অন্য কথার উপর একটু নজর দিই। তিনি বললেন, তিনি যদি সন্দেশখালিতে যেতেন তো পাঁচজনকে নিয়ে যেতেন। সেটা আইনি হতো না। প্রশ্ন হলো, কেন আরো পাঁচজনকে নিতেন? তিনি দুইজনের সঙ্গে গেলে বা একা গেলেই বা কী অসুবিধা হত? তার নির্বাচনকেন্দ্রের একটা অংশে যখনএতবড় ঘটনা ঘটছে, নারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে, মানুষের জমি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, মারধর করা, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে, তখন তিনি একবারও গিয়ে পরিস্থিতি দেখবেন না? বুঝতে পারছি, তিনি একলা চলোর নীতিতে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু সঙ্গে তো দুই জনকে নিয়ে যেতেই পারতেন তিনি।
এরপর তিনি বললেন, প্রশাসনের উপর সকলকে বিশ্বাস রাখতে হবে, জনগণ ন্যায়বিচার পাবেনই। এতদিন প্রশাসন কী করছিল তা তো সকলের চোখের সামনে চলে এসেছে। তাহলে কী করে এই বিশ্বাস সকলে রাখতে পারবেন? এতদিন পরেও তো শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারলো না পুলিশ। তারপর কী করে তারা ন্যায়বিচার পবেন বলে বিশ্বাস করবেন?
সবচেয়ে বড় কথা, সাংসদ হিসাবে তার কি কোনো দায়িত্ব নেই? যারা তাকে জিতিয়েছে, তাদের সুখেদুঃখে, বিপদেআপদে দাঁড়ানোর কোনো দায় নেই। কতজন তার দেখা পান, জানি না, তবে সন্দেশখালি থেকে কলকাতায় এসে তার দেখা পাওয়াটা কি সম্ভব?
সন্দেশখালি: এবার বেড়মজুরেও বিক্ষোভেরও আগুন
সন্দেশখালিতে মেয়েদের বিক্ষোভ নতুন নতুন জায়গায় ছড়াচ্ছে। শুক্রবার বেড়মজুরে ভেড়ির আলাঘরে আগুন দেয়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন ভেড়ির আলাঘরে আগুন?
বেড়মজুরের কাছারিবাড়ি এলাকায় মাছের ভেড়িটি শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি ও তোয়াব মোল্লার। এলাকার মানুষের অভিযোগ, স্থানীয় মানুষের জমি জবরদখল করে এই ভেড়ি বানানো হয়েছে। যাদের জমি নেয়া হয়েছে, তাদের একটা পয়সাও দেয়া হয়নি। শেখ শাহজাহান এখনো ফেরার। তার দুই ঘনিষ্ঠ উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরা গ্রেপ্তার। এই অবস্থায় নারীদের বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখছে সন্দেশখালির একের পর এক এলাকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিঘের পর বিঘে জমি
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বিঘের পর বিঘে জমি জোর করে নিয়ে নেয়া হয়েছে। তারপর সেই জমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে শুরু করা হয়েছে মাছচাষ। প্রতিবাদ করলে বা টাকা চাইতে গেলে মারধর করা হয়েছে। শেষ শাহজাহান ও তার সঙ্গীদের বাইক বাহিনী এলাকা শাসন করেছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ শোনার কেউ ছিল না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে
গ্রামের নারীদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায়। তারপর তা ধুপখালিতে ছড়ায়। শুক্রবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বেড়মজুর। প্রতিটি জায়গাতেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে মেয়েরা। তারা অনেকে মুখ ঢেকে কথা বলছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তাদের ভয়, মুখ দেখালে তারা হয়রানির শিকার হবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বেড়মজুরেও মেয়েদের বিক্ষোভ
শুধু ভেডি়তে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়াই নয়, বেড়মজুরে বিক্ষোভ সমাবেশও করেন মেয়েরা। সেখানে তারা বলেন, দখল হওয়া সব জমি ফেরত দিতে হবে। শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। বিক্ষোভকারীরা অজিত মাইতির বাড়িও ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঘটনাস্থলে এডিজি
দক্ষিণবঙ্গে পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি সুপ্রতিম সরকার ঘটনাস্থলে যান। বিক্ষোভকারীদের তিনি বলেন, ''প্রশাসনের শিবির বসেছে। জেলাশাসকও সেখানে আছেন। কোনো অভিযোগ থাকলে সেখানে জানান। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সবাই জমি ফেরত পাবেন। তবে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে জমি ফেরতের প্রক্রিয়ায় দেরি হবে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিক্ষোভ থামেনি
পুলিশ-কর্তার প্রতিশ্রুতির পরেও বিক্ষোভ দেখান নারীরা। তারা দাবি করতে থাকেন, শেখ শাহজাহানসহ সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের প্রশ্ন, এখনো পর্যন্ত কেন শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না?
ছবি: Subrata Goswami/DW
১৪৪ ধারা জারি
এই বিক্ষোভ ও আগুনের পর বেড়মজুরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ছয়জনের প্রতিনিধিদল শুক্রবার সন্দেশখালিতে যান। তারা সেখানে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করেন। উপরের ছবিটি বেড়মজুরে ভেড়ির আলাঘর পোড়ানোর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজেপি-র পরিকল্পনা
বিজেপি এবার সন্দেশখালি নিয়ে কলকাতায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী ২৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি এই বিক্ষোভ হবে। সেখানে সন্দেশখালির নির্যাতিতা নারীদেরও আনার চেষ্টা করা হবে বলে বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
‘পুলিশের কোলে শাহজাহান দোলে’
কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রশ্ন, ''শাহজাহানকে কে গ্রেপ্তার করবে? পুলিশের কোলে শাহজাহান দোলে।'' অধীরের অভিযোগ, ''এখানে ক্ষমতার খেলা চলছে। পুলিশ, অপরাধী, তৃণমূল মিলেমিশে গরিব মানুষের উপর অত্যাচার করছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
আসলে এই চিত্রতারকাদের রাজনৈতিক দল দাঁড় করায় তাদের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ভোট পাওয়ার জন্য। তারপর সম্ভবত তাদেরও আর কোনো দায় থাকে না। পিআরএস সাংসদদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে দেয়। তারা জানাচ্ছে, নুসরত সংসদের মাত্র ২৩ শতাংশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। দুইটি বিতর্কে তিনি অংশ নেন। সবমিলিয়ে তিনি ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। প্রাইভেট মেম্বার্স বিল আনেননি।
তৃণমূলের বাকি তারকা সাংসদের অবস্থাও তথৈবচ। আরেক তারকা সাংসদ মিমি চক্রবর্তী মাত্র ২১ শতাংশ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সাতটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। দেব যোগ দিয়েছিলেন ১২ শতাংশ অধিবেশনে, তিনি দুইটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। ১০৬টি প্রশ্ন করেছেন। শত্রুঘ্ন সিনহা ৬৩ শতাংশ অধিবেশনে থাকলেও কোনো প্রশ্ন করেননি, কোনো বিতর্কে অংশ নেননি।
তারকা হলেও তো তারা সাংসদ। তারা কি সাংসদের কোনো দায়িত্ব পালন করেছেন? দেব আর দাঁড়াতে চাননি। তাকে আগামী নির্বাচনে জোর করে দাঁড় করাতে চান মমতা-অভিষেক। মিমি যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে তিনি আর দাঁড়াবেন না। শত্রুঘ্ন সিনহা অবশ্য এরকম কোনো ইঙ্গিত দেননি।
কোনো সন্দেহ নেই, এই তারকাদের সিনেমার জগতে অবদান আছে। অনেক পরিশ্রম করে, প্রতিভার কারণে তারা জনপ্রিয় হয়েছেন। কিন্তু রাজনীতি তো নিছক অভিনয় নয়। এখানে মানুষের পাশে থাকতে হয়। এখানে জানতে হয় কোনটা ১৪৪ ধারা, কোনটা ১৭৪। নির্বাচনকেন্দ্রের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়। সবই যদি প্রশাসন ও পুলিশ করে দেবে, তাহলে তো সাংসদদের কোনো দরকারই ছিল না। আর যখন প্রশাসন ও পুলিশ দায়িত্ব পালন করে না, তখন তো সাংসদের দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়।
জনপ্রিয়তার কারণে, এখন তারকারা ভারতের লোকসভায় জিতে আসেন। দলগুলিও আসন বাড়াবার জন্য তাদের প্রার্থী করে। কিন্তু রাজনীতি তো মানুষকে বাদ দিয়ে করা যায় না। তাই সেই মানুষের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতাও কি দেখাতে পারেন না নুসরতরা? তারা কবে শিখবেন, ১৪৪ ধারা না ভেঙেও মানুষের কাছে যাওয়া যায়, তাদের কথা শোনা যায়, অন্তত তাদের কথা দলের, প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পৌঁছানো যায়।
আর মানুষই বা কখন বুঝবেন, সেলুলয়েডের নায়ক-নায়িকারা সচরাচর তাদের জগত নিয়ে থাকেন। মনোরঞ্জন করেই তো তাদের দায় শেষ হয়ে যায়। তাই তারা অনায়াসে ১৭৪ ধারার কথাও বলে যেতে পারেন।