ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অনেকেই বলছেন এ নির্বাচনে তিনি জিততে পারবেন না, বা তাকে জিততে দেয়া হবে না৷
বিজ্ঞাপন
তারপরও তিনি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নূর জানিয়েছেন, ‘‘আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি৷ সামনে যেহেতু ঢাকার দুটি সংসদীয় উপনির্বাচন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের অবস্থানটাকে আরও ক্লিয়ার করতে চাই৷ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে চাই৷ ঢাকা-৫ আসনেও আমরা তরুণ প্রার্থী দেব৷’’
এরই মধ্যে দল গঠনের কাজ শুরু করেছেন নূর৷ চলতি বছরের মধ্যেই এই দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে৷ সে লক্ষ্যে দলের চারটি সহযোগী শাখা- ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ গঠনের কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন পেশাজীবী পরিষদ গঠনের কাজ চলছে বলে বিডিনিউজকে জানিয়েছেন তিনি৷
নূরের উপনির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণার কারণে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে৷ কারণ নূর এক অন্যরকম চরিত্র৷ একদিকে তিনি নিজেকে সরকারবিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন, অন্যদিকে একসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ছোটবেলায় হারানো তার মায়ের চেহারা ‘খুঁজে পান' বলে মন্তব্য করেছিলেন৷ যদিও এমন মন্তব্য তাকে ছাত্রলীগের কাছে নিয়মিত মার খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি৷
এত মার খেয়েও অনেকের মতো দমে যাননি নূর৷ এ কারণে অবশ্য অনেকে মনে করেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যেহেতু বর্তমান সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না, তাই সরকারই রাজনীতি করে নূরকে সরকারের বিরোধিতা করার সুযোগ দিচ্ছে৷ এমনকি এই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই তিনি ডাকসু ভিপি হয়েছেন এমনও ভাবছেন অনেকে৷ এর মাধ্যমে সরকার দেখাতে চায়, এখনও দেশে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ আছে!
অবশ্য সরকার নূরকে এভাবে বিরোধিতা করার সুযোগ আর কতদিন দেবে, সামনে তা বোঝা যাবে৷ এতদিন যেহেতু নূর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনীতি করেছেন তাই সরকার তাকে সহ্য করেছে৷ এখন তিনি জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখতে চাইছেন, নতুন দল গঠন করতে চাইছেন, তাই তাকে নিয়ে সরকার এখন কী করবে, তার একটা আঁচ পাওয়া যাবে ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনকে ঘিরে৷ ভয় পেয়ে নূরকে কি যেনতেন একটা কারণ দেখিয়ে আগেভাগেই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে, নাকি প্রচারণা চালানোর সময় বিভিন্ন স্থানে তাকে নিয়মিত মারধর করা হবে- সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে৷
অন্যদিকে সরকার সমর্থকেরা অনেক দিন থেকেই অভিযোগ করছেন যে, নূরের আপাত নিরীহ কোটা সংস্কার আন্দোলন বা ছাত্র রাজনীতির পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে৷ নির্বাচনের মাঠে নূর তাদের কেমন সমর্থন পান বা বিএনপি-জামাতের পক্ষে প্রার্থী দেওয়া হয় কিনা তাও নিশ্চয়ই দেখা যাবে৷
সবমিলিয়ে এই উপনির্বাচন যে আর পাঁচ সাতটা উপনির্বাচনের চেয়ে বেশি আলোচিত হতে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই৷ তাই আমার মতো আপনারাও যারা এই আসনের ভোটার নন, তারা দূর থেকে নূর বনাম সরকার খেলা দেখে মজা নেয়ার চেষ্টা করতে পারি, এই আর কী!
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
একনজরে কোটা সংস্কার আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়৷ দেখে নেয়া যাক আন্দোলনের খণ্ডচিত্র...
ছবি: bdnews24.com
পদযাত্রা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা কমর্সূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷
ছবি: bdnews24.com
অবস্থান কর্মসূচি
পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনরতরা৷
ছবি: bdnews24.com
দিনব্যাপী বিক্ষোভ
রোববার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকে৷ এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদেরকে বেশ কয়েকবার উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকে৷
ছবি: bdnews24.com
পুলিশের অ্যাকশন
রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে অবরোধকারীদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ৷ অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাঁদের উপর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: bdnews24.com
সংঘাত
শাহবাগ ছাড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় রাতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ চলে; পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে৷ দু’পক্ষের সংঘাত ছড়িয়ে পরে৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের বাড়িতে ভাংচুর
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুর হয়৷ বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুরের পাশাপাশি দুটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ ভাংচুর শুরুর আগে সব সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের অভিযোগ
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর প্রাণনাশের জন্যই বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ তবে তিনি আরো বলেন, এমন হামলা সাধারণ ছাত্ররা চালাতে পারে তাঁর কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷
ছবি: bdnews24.com
সমঝোতা
সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ মীমাংসাও হয়৷ ফলে আলোচনায় অংশ নেয়া নেতারা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন৷ তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলনে থাকে৷
ছবি: bdnews24
নারী অংশগ্রহণ
সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ নারী কোটা থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রচুর নারী অংশ নেন৷
ছবি: bdnews24
স্থবিরতা
ঢাকা তো বটেই পুরো দেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একে একে অচল হয়ে পড়ে৷ রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করেন৷
দেশব্যাপী আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়৷ আন্দোলনরতরা ছাত্রলীগের একাংশের নির্যাতন এবং সরকারের দুই মন্ত্রীর ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: bdnews24.com
হেনস্থার শিকার পুলিশ ও সাংবাদিক
আন্দোলন চলার সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ হেনস্থার শিকার হন৷ এখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার আন্দোলনকারীদের হাতে নাজেহাল হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
অপেক্ষা
কোটা বৈষম্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবি করে আন্দোলনকারীরা৷ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে কথা বলছেন জানালে শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর৷
ছবি: bdnews24.com
অবশেষে অপেক্ষার অবসান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরতরা তাঁর এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আনন্দ মিছিল করে৷