1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নৃশংসতার রাজনীতির শেষ কোথায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

টানা অবরোধ-হরতালে অর্থনীতি, শিক্ষাসহ সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বাংলাদেশে৷ বোমা আর আগুনে প্রতিদিনই মরছে মানুষ৷ ঝলসে যাচ্ছে কারুর মুখ, হাত-পা বা পুরো শরীর৷ গোটা দেশই যেন পরিণত হয়েছে বার্ন ইউনিটে৷

Bildergalerie Opfer politischer Gewalt in Bangladesch 2015
ছবি: DW/M. Mamun

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার টমেটো ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী এবার টমেটো চাষে ভালো লাভের আশা করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে৷ তিনি জানান, ‘‘উঠানে পড়ে আছে কমপক্ষে ৫০ মণ পাকা টমেটো৷ ক্রেতা নেই৷ অপেক্ষা পচনের, প্রতিদিনই পচছে৷ ফেলে দেওয়াও হচ্ছে৷ কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না৷ কে কিনবে? কিনে তো বাজারে পঠাতে হবে? তার তো উপায় নেই৷'' তাঁর কথায়, ‘‘আর কিছুদিন এ রকম চলছে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোষ থাকতে হবে৷''

যশোরের ফুল চাষী সাহেব আলী জানান, ‘‘বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে টার্গেট করে এক একর জমিতে গোলাপের চাষ করেছিলাম৷ কিন্তু এখন আমি হতাশ৷ কেউ ফুল কিনতে আসছে না, তাই গাছের ফুল গাছেই শোভা পাচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আশা করেছিলাম ১২ এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফুলগুলো পাঠাতে পারবো৷ তাতে কমপক্ষে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হত৷ কিন্তু লাগাতার অবরোধ-হরতালে সেই ইচ্ছা ভেস্তে গেছে৷''

ফলচাষিদের কি হবে?ছবি: DW/M. Mamun

এই অবস্থা দেশের প্রায় সব চাষী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বড় ব্যবসায়ীদের৷ যাঁদের জমানো টাকা আছে, তাঁরা এখনো সচল আছেন৷ কিন্তু যাঁদের নেই, তাঁরা পথে বসছেন৷

বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের হিসাব অনুযায়ী, গত ৬ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবরোধ-হরতালে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা৷ এর মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতির খাত তৈরি পোশাক শিল্প৷ এখানে ক্ষতির পরিমাণ মোট ক্ষতির শতকরা ৩৬ ভাগ৷ এরপর যথাক্রমে পাইকারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় শতকরা ১৮, কৃষি ও পোল্ট্রিতে ১২, পরিবহনে ১২, আবাসন ৯ এবং পর্যটন শিল্পে শতকরা ৮ ভাগ ক্ষতি হয়েছে৷ এছাড়া মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে শতকরা ৭০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে৷

হরতাল-অবরোধে এসএসসি পরীক্ষার রুটিন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ এখন শুধু শুক্র ও শনিবারে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে৷ তার ওপর নতুন বছরে কোনো ক্লাসই শুরু করা যায়নি৷ শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে আছে৷ বাইরেও বের হতে পরছে না৷

সর্বশেষ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সোমবার প্রাথমিকের বই বোঝাই ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এ হামলায় ট্রাকচালক আহত হন৷ ঢাকা থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের বইগুলো নিয়ে ট্রাকটির লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগতি, কমলনগরে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল৷

আর যারা পথে ফুল বেচে?ছবি: GMB Akash

এবারের অবরোধ-হরতালে অবরোধের ৩৫ দিনে বোমা, পেট্রোল বোমা, আগুন আর সহিংসতায় নিহত হয়েছেন মোট ৮৫ জন৷ এর মধ্যে পেট্রোল বোমা আর আগুনে নিহত হয়েছেন ৫১ জন৷ যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে ৯৯০টি৷ পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ১২৪ জন৷ তাঁদের মধ্যে ৬২ জন এখনো চিকিত্‍সাধীন৷ রেলে নাশাকতা হয়েছে ১১ বার৷ আর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ১৮ জন৷

সবচয়ে ভয়াবহ খবর হলো, এবার আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থাও রেহাই পাচ্ছে না৷ রবিবার পাবনায় ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী টেনে হামলা হয়েছে৷ ছোঁড়া হয়েছে পেট্রোল বোমা৷ আগুন আর পেট্রোল বোমার কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রাতে এখন আর দূর পাল্লার বাস তেমন চলছে না৷

দেশের এই বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশে এখন রাজনীতির নামে নির্মমতা, ধ্বংস এবং সহিসতার রাজনীতি চলছে৷ এর দায়-দায়িত্ব কার, তার চেয়ে বড় কথা হলো সাধারণ মানুষ কেন এই ক্ষতি মেনে নেবে৷ মানুষ পুড়ছে, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হচ্ছে, অর্থনীতি পড়ছে হুমকির মুখে৷ এই অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না৷ এই রাজনীতি একটি জাতিকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ৷''

তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির নামে, আন্দোলনের নামে এখন দেশে সন্ত্রাসবাদ বিস্তৃত হচ্ছে৷ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসছে৷ এর দায়-দায়িত্ব কিন্তু দুই নেত্রীকেই নিতে হবে৷ তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশ ও দেশের মানুষকে ধ্বংস করার এই রাজনীতি বন্ধের৷''

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা সংলাপের কথা বলছি৷ কিন্তু সংলাপের পরিবেশ এখন নেই৷ আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে৷ খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী তত্‍পরতার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধ এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাতে হবে৷ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে সহিংসতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে৷ মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি চলতে পারে না৷''

ডয়চে ভেলে দেশের সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলামের সঙ্গেও৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী এবং বোমা ও আগুনের শিকার যাঁরা তাঁরা৷

তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষা পেছানোর কারণে পরীক্ষার্থীরা মানসিক চাপে রয়েছে৷ তাদের ভিতর কাজ করছে অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা হীনতা বোধ৷ এটা তাদের পরবর্তী শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ তারা চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাবে৷ পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে৷ গড়ে উঠবে দুর্বল এবং অদক্ষ নাগরিক হিসেবে৷ আর যারা ক্লাসে যেতে পারছে না, তারা হতাশ হয়ে লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে৷ এমনকি মাদকাসক্ত হয়েও পড়তে পারে৷ শিশুর মনে চরম আঘাত তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করবে৷''

ডা. তাজুর ইসলাম বলেন, ‘‘যাঁরা বোমা বা পেট্রোল বোমায় আহত হচ্ছেন, তাঁরা পরবর্তী জীবনও বিভীষিকাময় হতে পারে৷ তাঁরা শারীরীকভাবে সুস্থ হয়ে ফিরে গেলেও, মানসিকভাবে সুস্থ নাও হতে পারেন৷ তাঁদের স্মৃতিতে বার বার ফিরে আসতে পারে দুঃসহ স্মৃতি৷ তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না৷ তাঁদের সারা জীবন মানসিক অসঙ্গতি বয়ে বেড়াতে হবে৷''

ডা. তাজুল ইসলাম আরো জানান, ‘‘দেশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বোধ বাড়ছে৷ এটা স্থায়ী হলে তা মানসিক ট্রমায় রূপান্তরিত হতে পারে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে সহিংসতার খবর যেভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে, তাও ক্ষতিকর৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ