জার্মানিতে এক নেকড়েকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারপর কংক্রিটের সাথে বেঁধে ফেলে দেয়া হয়েছে লেকের গভীর পানিতে৷ এ নিয়ে চলছে তোলপাড়৷ প্রাণি অধিকারকর্মীরা দাবি তুলেছেন, খুনিকে গ্রেপ্তারের৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের বাউৎসেন শহরের লেকে ১০ জুন ভেসে ওঠে ১ বছর বয়সি এক নারী নেকড়ের মরদেহ৷ বার্লিনের ওয়াইল্ড লাইফ রিসার্চ ইন্সটিটিউট নেকড়ের মরদেহ পরীক্ষা করেছে৷ তারা বলছে, খুব কাছ থেকে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে নেকড়েকে৷
জার্মান সংগঠন প্রটেকশন অব উলভস-এর প্রধান ব্রিগিটে যমার বলছেন, ‘‘এর মাধ্যমে আরো একবার প্রমাণিত হলো, নেকড়ে নয়, মানুষই আসলে বেশি পাশবিক৷''
মানুষ ও বন্যপ্রাণী
বন্যপ্রাণী নিধনে মানুষের রয়েছে সীমাহীন দায়৷ আবার একথাও ঠিক দায় থেকে, ভালোবাসা থেকে মানুষ দাঁড়িয়েছে সে বন্যপ্রাণী রক্ষায়৷ সেরকম কিছু ছবি দেখে আসা যাক-
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pardo
পাণ্ডার রক্তের নমুনা
জিনজিন নামের মেয়ে পাণ্ডার খাঁচার ভেতর থেকে রক্তের নমুনা নিচ্ছেন একজন পশু চিকিৎসক৷ ছবিটি মেক্সিকো সিটির একটি চিড়িয়াখানা থেকে তোলা৷
ছবি: Reuters/G. Riquelme
হাতির পা
তেরো বছর বয়সি সেলেনডাং নামের এ হাতিটির পা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ একজন মাহুত তার পায়ের পরিচর্যা করছেন৷ ছবিটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে তোলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
কুমির রক্ষার জন্য
ইন্দোনেশিয়ার পালু নদীতে থাকা এ নোনাপানির কুমিরটির ঘাড়ে গাড়ির চাকা আটকে গেছে৷ সেখানকার পশু কর্মকর্তারা বছর খানেক ধরে কুমিরটি ধরে তার ঘাড় থেকে রাবারের চাকাটি অপসারণের চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/ARFA
বাচ্চা
চিতা বাঘের এই বাচ্চাটি মেক্সিকোতে বন্দি অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল৷ এক দম্পতি বেআইনিভাবে মা চিতাকে ধরার পর সে দুটি বাচ্চা দেয়৷ পরে ওই দুই বাচ্চাকে মেক্সিকোর এক পরিবেশ কর্মী উদ্ধার করে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সমর্পণ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pardo
পিংক ফ্লেমিংগো
বুনো পিংক ফ্লেমিংগোটি চোরা কারবারিদের হাতে ধরা পড়েছিল৷ পাচারের সময় সে সহ ১০৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেন কলম্বিয়ার বন কর্মকর্তারা৷ পুনরায় বনে ফিরিয়ে দিতে তাকে পরিচর্যা করছেন একজন জীববিজ্ঞানী৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Robayo
দুই কচ্ছপ
পিংক ফ্লেমিংগোর মতো এই হিকোটিয়া গোত্রের কচ্ছপ দুটিও চোরাকারবারির হাত থেকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/U. Ruiz
6 ছবি1 | 6
যমারের সংগঠন, বাউৎসেন শহর কর্তৃপক্ষ এবং ‘উলভস: ইয়েস প্লিজ' নামের ফেসবুক গ্রুপ খুনিকে ধরতে পুরষ্কার ঘোষণা করেছে৷ পুরষ্কারের পরিমাণ ৭ হাজার ইউরো৷
যমার মনে করেন, ‘‘কেউ যদি এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছু জেনে থাকে, ৭ হাজার ইউরো তাঁর মুখ খোলার জন্য যথেষ্ট৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মান আইনে নেকড়েরা সংরক্ষিত৷ নেকড়ে হত্যাকে এখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ স্যাক্সনি স্টেট ক্রিমিনাল পুলিশ এই হত্যার তদন্ত করছে৷
জার্মান আইন অনুযায়ী, বন্য নেকড়ে হত্যার শাস্তি কয়েক হাজার ইউরো জরিমানা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৫ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে৷
‘উলভস ইন স্যাক্সনি' নামের বন্যপ্রাণি রক্ষা সংগঠনের তথ্য বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ৮টি নেকড়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ নেকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কিভাবে তাদের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া যায়, এ নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, রাজনীতিবিদরাও দ্বিধাবিভক্ত৷
নেকড়ে সম্পর্কে আমাদের যা জানা উচিত
নেকড়ের সম্পর্কে মানুষের আতঙ্ক দীর্ঘকালের৷ তাই নেকড়ে মারতে দ্বিধা নেই অনেকের৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নেকড়েরা বুদ্ধিমান এবং সামাজিক প্রাণী, যারা অনেক প্রতিকুলতা মোকাবিলা করে টিকে আছে৷
ছবি: Wolfscenter
অনন্ত ভালোবাসা?
নেকড়েরা তাদের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে বলে কথিত আছে৷ তবে এটাও স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় যে ‘আলফা মেল’ নেকড়েদের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
রক্তপিপাসু হিংস্রপ্রাণী?
নেকড়েরা এমন রক্তপিপাসু হিংস্র প্রাণী, যারা মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের হত্যা করতে পছন্দ করে বলে দীর্ঘদিন ধরে ধারনা করা হচ্ছে৷ তবে সংরক্ষণবাদীরা মনে করেন, নেকড়ে এবং মানুষের পাশাপাশি বসবাস করতে না পারার কোনো কারণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
চাঁদের দিকে তাকিয়ে গর্জন?
নেকড়েরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে গর্জন করে বলে শ্রুতি রয়েছে৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা ঠিক নয়৷ বরং নেকড়েরা মুখ উঁচু করে এভাবে ডাক দেয়, কেননা, এতে শব্দ অনেক দূর অবধি পৌঁছায়৷ নেকড়েরা বিভিন্ন কারণে এভাবে ডাক দেয়৷ এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, নিজের দলকে একত্রিত করা, একজন সঙ্গীর মনোযোগ আকর্ষণ, নিজের এলাকা ঘোষণা, শত্রুকে ঘাবড়ে দেয়া, সতর্ক সংকেত দেয়া বা নিজের অবস্থানের কথা জানানো৷
একসঙ্গে শিকার খোঁজা
নেকড়েরা শুধু একসঙ্গে বসবাসই নয়, তারা দলবদ্ধভাবে শিকারও করে৷ একক চেষ্টায় একটি নেকড়ে সর্বোচ্চ ছোট আকারের হরিণ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করতে পারে, কিন্তু দলবদ্ধভাবে অনেক বড় প্রাণীকেও কাবু করতে সক্ষম তারা৷
নিঃসঙ্গে নেকড়ে
একটি নেকড়ে, যেটি অসুস্থতা বা দুর্বলতা কিংবা একা জীবনযাপনের জন্য দলত্যাগ করে, সেটিকে ‘লোন ভোল্ফ’ বা নিঃসঙ্গ নেকড়ে বলা হয়৷ এমন নেকড়েরা নিজেদের অবস্থান আড়াল করতে কম গর্জন করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
সবসময় রাস্তায়
নেকড়েরা ভ্রমণ পিয়াসী৷ প্রতিদিন তারা গড়ে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে৷ খাবার না পেলে আরো বেশি পথ পাড়ি দেয় তারা৷ একেকটি নেকড়ের দল গড়ে দেড়শ’ থেকে তিনশ’ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখলে রাখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bernhardt
ছোট্ট সুন্দর ছানারা
একটি নেকড়ে ছয় থেকে আটটি বাচ্চার জন্ম দেয়৷ তাদের দলে নারীনেত্রী গর্ভবতী অবস্থায় বাচ্চা প্রসবের জায়গা নির্ধারণ করে৷ নেকড়ের গর্ভকালের মেয়াদ সাধারণত ৬৩ দিন হয়৷ আর জন্মের পর বাচ্চারা আট সপ্তাহ অবধি মায়ের দুধ পান করে৷
নিরাপদ সংখ্যা
একটি নেকড়ের দলে ছয় থেকে দশজন সদস্য থাকে৷ আর দলের মধ্যে নিয়মনীতি কঠোরভাবে পালন করা হয়৷ শুধুমাত্র দলনেতা নেকড়ে এবং তার সঙ্গী বাচ্চা নিতে পারে৷ দলের বাকি সদস্যরা সেসব বাচ্চা দেখাশোনা করে৷