জর্জিয়ার মাঠেপ্রান্তরে এখনও মেষপালকরা তাদের ভেড়ার পাল নিয়ে ঘোরেন৷ নেকড়ের হাত থেকে ভেড়া, আর মানুষের হাত থেকে নেকড়েকে বাঁচাতে গেলে কী করতে হয়, এ হলো তার কাহিনি৷
বিজ্ঞাপন
যতদূর চোখ যায়, ভেড়ার পাল৷ একটা দু'টো নয়, সতের'শ৷ তাদের খেয়াল রাখতে দশটা রাখালিয়া কুকুর হিমশিম৷ দিনে তারা ঘাসের উপর পড়ে ঘুমোয়, রাখালের কথা শোনে না৷ সব চেষ্টাই বৃথা৷ কুকুররা সবাই ক্লান্ত৷
ভেড়ার পালের মালিক ওতার ফারেউলিদসে বলেন, ‘‘রাত্রে কুকুরদের অনেক কাজ থাকে৷ সারাক্ষণ পাহারা দিতে হয়৷ এই এলাকায় অনেক নেকড়ে আছে৷ ওরা এখানে ঘোরাফেরা করে, কাজেই কুকুরদের খুব সতর্ক থাকতে হয়; প্রয়োজনে নেকড়েদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিতে হয়৷ কাজেই যতটা সহজ মনে হয়, ওদের জীবন ততটা সহজ নয়৷''
গত গ্রীষ্মে একটা ভাল্লুক ওতার-এর ১৩টা ভেড়া মেরেছে৷ এ বছর এসেছে নেকড়েরা, প্রতিবছরই যেমন হয়, যখন রাখালরা হাজার হাজার ভেড়া নিয়ে এখানে আসে৷
নেকড়ে, ভেড়া, কুকুর
05:27
‘নেকড়ে মানুষ'
টেমো পপিয়াশভিলি ‘নাক্রেস' বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সংগঠনের হয়ে কাজ করেন৷ রাখালরা তাঁকে বলেন ‘নেকড়ে মানুষ'৷ রাখালরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, ভেড়া চরানোর জায়গা কীভাবে কমে আসছে৷ ক্রমেই আরো বেশি রাস্তা, আরো বেশি বেড়া, এখন আবার নেকড়েদের কথাও ভাবতে হবে, কুকুরদের ধরে রাখতে হবে, নেকড়েদের দিকে গুলি চালালে চলবে না৷
‘নাক্রেস' বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সংগঠনের টেমো পপিয়াশভিলি বলেন, ‘‘ওরা আমার সম্পর্কে কী ভাবেন, তা জানি না৷ আশা করি, ওরা আমাকে বুঝতে পারেন; বুঝতে পারেন যে, আমাদের সংগঠন ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আমরা যখন শিকারি জীবজন্তুদের নিয়ে কথা বলি, তারা যে জর্জিয়ার প্রকৃতি ও পরিবেশের অঙ্গ, তখন মাঝেমধ্যে বিতর্ক হয় বৈকি৷''
বিষ্ঠা কিন্তু ‘ব্যাজার' কৈ?
হেমন্তে পরিস্থিতি গ্রীষ্মের চেয়ে একটু সহজ৷ তখন নাকি উঁচু ঘাসের মধ্যে দিয়ে গেলে অন্তত সাপের কামড় খাবার ভয় থাকে না – বলেন রাখালরা৷ গবেষকরা কিন্তু সাপের বদলে খুঁজে পেলেন পশুর বিষ্ঠা৷ তা থেকে এই ন্যাশনাল পার্কে যে সব জীবজন্তু থাকে, তাদের শনাক্ত করা যায়৷ ‘নাক্রেস'-এর গেয়র্গে গরগাদসে বলেন, ‘‘আমরা সবসময় বিষ্ঠার আকার আর তার গন্ধ দেখি৷ সব জীবজন্তুর একটা নিজস্ব গন্ধ আছে৷ এটা যেমন একটা ইউরোপীয় ব্যাজার-এর বিষ্ঠা৷''
পোষা প্রাণী মানুষের সুখ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
হোক কুকুর, বেড়াল কিংবা খরগোশ – এরা ছোট, বড় বা প্রবীণ – সকলেরই বিশ্বাসী বন্ধু৷ পোষা প্রাণী ছোটদের যেমন দায়িত্ব নিতে শেখায় ও আত্মবিশ্বাসী করে, প্রবীণদের তেমনি রাখে ‘ফিট’৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/P. Rösler
শিশুদের জন্য পোষা প্রাণী
অনেক শিশু অস্থির বা অশান্ত প্রকৃতির হয়, লেখাপড়ায় মন বসে না বা অন্য কিছুতেও তেমন আগ্রহ নেই তাদের৷ এ সব ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিশুকে যে কোনো একটি পোষা প্রাণী দিন৷ দেখবেন তাকে যত্ন, খাওয়া-দাওয়া, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া – এ সব করার মধ্য দিয়ে সে দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে৷ দায়িত্ববোধ থেকেই বাড়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস৷ তাই পোষ্য থাকলে তাদের দেখাশোনা করতে করতে পড়াশোনা, খেলাধুলাতেও ভালো করবে শিশুরা৷
ছবি: Fotolia/otisthewolf
হাঁস, মুরগি
পোষা প্রাণী বলতে যে শুধু বিদেশি কুকুর, বেড়াল বোঝায় – তা নয় কিন্তু! আমাদের দেশেও দেখা যায়, যেসব মানুষ মুরগি, হাঁস বা অন্য কোনো প্রাণী পোষেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীল হন৷ পোষা প্রাণীর প্রতি মালিকের অনেক দায়িত্ব থাকে৷ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওদের খাওয়াতে, স্নান করাতে হয়৷ আবার পোষ্য হাঁস, মুরগিরা ডিম দিলে সে ডিম শুধু খাওয়াই হয় না, আনন্দও দেয়৷ আর ডিম ফুটে বচ্চা যখন হয়, তখন তো আনন্দের সীমা থাকে না৷
ছবি: Monika Wüllner
পাখি
অনেকেরই বেড়াল বা কুকুরের লোম থেকে অ্যালার্জি হয়৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কুকুর বা বেড়াল পুষতে পারেন না৷ তবে ইচ্ছে করলে তাঁরা বাড়িতে পাখি পুষতে পারেন, পরামর্শ ডাক্তারদের৷ খাঁচায় বন্দি পাখিও কিন্তু আপনাকে দিতে পারে অনেক সুখ আর আনন্দ৷ বিশেষ করে সেটা যদি কথা বলা পাখি হয়৷
ছবি: Proaves
মস্তিষ্কের বিশ্রাম
যাঁদের কর্মস্থলে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়, বিশেষ করে মস্তিষ্কের চাপ যাঁদের খুব বেশি হয়, তাঁদের জন্যও পোষা প্রাণী বেশ উপকারী৷ কারণ পোষা প্রাণী ব্রেন বা মস্তিষ্ককে পুরোপুরি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হতে পারে সহজেই – যা সুস্থ থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন৷
ছবি: Fotolia/Ljupco Smokovski
প্রবীণদের বন্ধু কুকুর
কুকুর যে প্রভুভক্ত প্রাণী – সেকথা সকলেই জানেন৷ জার্মানিতে কুকুরের মালিকরা তাই গর্ব করেই বলেন, তাঁরা বাড়ি ফেরার আগেই দরজায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে কুকুরটি, প্রিয় মালিককে লেজ নেড়ে সম্ভাষণ জানানোর জন্য৷ জার্মানিতে পোষা কুকুর রয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি৷ কারণ কুকুরকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিনে অন্তত পাঁচবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে৷ এভাবেই কুকুর তার মালিককে মুক্ত বাতাসে হাঁটিয়ে ‘ফিট’ রাখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Landov Mike Cardew
নিঃসঙ্গতা দূর করে
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁদের বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে তাঁরা সাধারণত স্থিতিশীল ও সুখী হন, একাকিত্বে ভোগেন না৷ পশ্চিমা বিশ্বে অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, কুকুরের মালিকদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে, শুধুমাত্র কুকুরকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে৷ ইউরোপে প্রবীণদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা অসুস্থ থাকার একটি বড় কারণ৷একটা কুকুর বা বেড়াল থাকলে সেই নিঃসঙ্গতা থেকেও মুক্তি!
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তানের সাধ
নিঃসন্তান অনেক নারীই প্রাণী পোষেন এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁরা খানিকটা হলেও মায়ের দায়িত্ব পালন করেন৷ পোষা প্রাণীটিকে ভালোবাসা দেন একং অনেকক্ষেত্রে সেটা ফেরতও পান৷ পোষা প্রাণী তাই নিঃসন্তান বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতাও দূর করে৷ বলা যেতে পারে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর একটা উপায় অবশ্যই প্রাণী পোষা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মৃত্যুর পরও একসাথে
জার্মানিতে কুকুরদের জন্য আলাদা কবরস্থান আছে৷ তবে সম্প্রতি জার্মানির রাইনলান্ড-ফালৎস রাজ্যে এমন একটি কবরস্থান তৈরির পর উদ্বোধন হয়েছে, যেখানে কুকুর এবং কুকুরের মালিক মৃত্যুর পর একসাথে চিরনিদ্রায় থাকতে পরেন৷ অর্থাৎ যাঁরা জীবিত অবস্থায় কুকুরের সঙ্গ উপভোগ করেছেন এবং মৃত্যুর পরও একসাথে থাকতে চান, এমন মানুষদের জন্যই এ কবরস্থান৷
ছবি: DW/P. Rösler
8 ছবি1 | 8
কিন্তু এই সব জীবজন্তুগুলো থাকে কোথায়? তাদের তো কোনো দেখা নেই? অথচ নাক্রেস যে সব ক্যামেরা ট্র্যাপ লাগিয়ে থাকে, তার ছবি থেকে এই সব জীবজন্তুর অস্তিত্বের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়৷ বুনো বেড়াল, খ্যাঁকশেয়াল, ইউরেশীয় লিনক্রস, আর হাল্কা রঙের যাদের-বলা-হয় সিরিয়ান ভাল্লুক, তারা অন্তত গোটা বিশেক৷ এমনকি কয়েক বছর আগে একটা পার্শিয়ান চিতাবাঘেরও দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ তারপরেই সে উধাও হয়৷
জীবজন্তুরা পার্কের ঠিক কোথায় রয়েছে, তা জানার জন্য একটা ড্রোনের ব্যবস্থা করেছে নাক্রেস৷ বেআইনি শিকারি অথবা যারা বিনা অনুমতিতে কাঠ কাটছে, তাদের খোঁজ পেতেও এই ড্রোন কাজে লাগে৷ সুবিশাল খাদগুলোতে নাকি ভাল্লুকরা থাকে, মাঝেমধ্যে ওপরে উঠে ভেড়া মারে৷
ড্রোনটা ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে, জিপিএস দিয়ে চালানো হয়৷ নাক্রেস সবে এই কাজ শুরু করেছে৷ কাজেই দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে৷ চিন্তা নেই, ড্রোন মেরামত করে নেওয়া যায়৷ দ্বিপ্রহরে প্রথম ভেড়ার পালগুলো এসে পৌঁছায়৷ শীতে এখানে জর্জিয়ার অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি গরম, তাই আবার ঘাস গজায়৷ কিন্তু একটা ভেড়া মরলে মালিকের ক্ষতি হয় মোট একশ ইউরো, যা এর আগের দিন ঘটেছে৷
ভেড়ার পালের মালিক বেসো খোসিকারিদসে বলেন, ‘‘এই কাছেই ঘটনাটা ঘটেছে, দিনের বেলা৷ আমরা আবার ছিলাম দু'জন, কিন্তু ভেড়ার পালের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম, নেকড়েটা যেদিক থেকে আক্রমণ করেছে, সেদিকে নয়৷ কুকুররাও খেয়াল করেনি যে, নেকড়েটা একটা ভেড়াকে আক্রমণ করেছে৷ আমরা যখন এসে পৌঁছাই, তখনও ভেড়াটা বেঁচে ছিল৷ আমরাই সেটাকে মেরে খাই৷''
হাড়গুলো পেল কুকুররা, কাজেই শেষমেষ সকলেরই লাভ – এক ভেড়াটার ছাড়া৷ নেকড়েটাও যে কবে মাঠঘাট পার হয়ে কোথায় গেছে, কে জানে৷ তবে তাকে মানুষের গুলিতে মরতে হয়নি৷ সেটাই বা কম কীসের?