টানা তৃতীয় বছরের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের সঙ্গে স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্সের দ্বন্দ্ব চলছে৷ এবারও নেটফ্লিক্সের কোনো সিনেমা কানে আসেনি৷ স্ট্রিমিং বনাম হল-থিয়েটার, সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এই বিতর্কের শেষ কোথায়?
বিজ্ঞাপন
বিতর্কের শুরুটা ২০১৭ সালে৷ কান চলচ্চিত্র উৎসবে কোরিয়ান নির্মাতা ও প্রযোজক বং জুন-হো-র ওকজা এবং নোয়া বাউমবাখের দ্য মেয়ারোভিৎস স্টোরিজ চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে মনোনীত হয়৷ কানের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম দ’র এর দৌড়ে ছিল এই দুই চলচ্চিত্র৷ কিন্তু নেটফ্লিক্সের প্রযোজনায় নির্মিত এই দুই সিনেমাকে মনোনয়ন দেয়ায় ফ্রান্সের সিনেমা প্রদর্শকরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন৷ কানকে তারা বড় পর্দার অভিভাবক এবং নেটফ্লিক্সকে এই শিল্পের মারাত্মক হুমকি বলে আখ্যা দেন৷
বিতর্ক এতটাই তুঙ্গে ওঠে যে উৎসব চলাকালেই কান কর্তৃপক্ষ নেটফ্লিক্সকে সতর্ক করে দেয় যে তাদের প্রযোজিত সিনেমা আগে বড় পর্দায় দেখাতে হবে৷ খোদ সে বছরের জুরি বোর্ডের প্রধান স্প্যানিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা পেদ্রো আলমোদোভার ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব সিনেমা হলের সিনেমার জন্য, অনলাইনে দেখানোর জন্য নয়’ বলে মন্তব্য করেন৷
ফলে উৎসব চলাকালেই কান উৎসব কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যেসব চলচ্চিত্র কানে প্রতিযোগিতা করছে, তাদের অবশ্যই ফ্রান্সের নিয়ম মেনে আগে সিনেমা হলে দেখাতে হবে৷ ফ্রান্সের নিয়ম অনুসারে সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার তিন বছর পরই কেবল কোনো সিনেমা স্ট্রিমিং সার্ভিসে দেখানো যাবে৷ নেটফ্লিক্স যেখানে এত টাকা খরচ করে এক একটি সিনেমা তৈরি করে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে দেখানোর জন্য, সেখানে এমন আবদার তাদের কাছে হাস্যকর মনে হওয়ারই কথা বটে৷
ফলে পরের বছর ফরাসি নিয়ম মেনে কান চলচ্চিত্র উসবে আসতে রাজি হয়নি নেটফ্লিক্স৷ এমনকি আউট অব কম্পিটিশন ক্যাটাগরিতে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসতে রাজি হয়নি৷
কান বাদে ইউরোপের অন্য দুই বৃহৎ চলচ্চিত্র উৎসব ভেনিস ও বার্লিনে স্ট্রিমিং সার্ভিসের সঙ্গে আয়োজকদের তেমন দ্বন্দ্ব নেই৷ পলে ২০১৮ সালে নেটফ্লিক্স কানে না এসে কানের সবচেয়ে পুরাতন প্রতিদ্বন্দ্বী ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়ে হাজির হয় আলফোনসো কুয়ারনের রোমা নিয়ে৷ সেখানে চলচ্চিত্রটি সবচেয়ে বড় পুরস্কার- গোল্ডেন লায়ন জিতে নেয়৷
কান বনাম নেটফ্লিক্স দ্বন্দ্ব ২০২১ সালে এসেও কমেনি৷ বরং উৎসব কর্তৃপক্ষ এবং জুরি বোর্ডের প্রধানের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য বরং এই বিতর্কে আরো ঘি ঢেলেছে৷ উৎসব উদ্বোধনের ঠিক দুদিন আগে কানের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর থিয়েরি ফ্রঁমোর একটি সাক্ষাৎকার নেয় ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর৷ সেখানে ফ্রঁমো নাম উল্লেখ না করেই প্রতিদ্বন্দ্বী উৎসবগুলোকে এক হাত নেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা সিনেমা বাঁচুক, এটা চায় না, তাদের জন্য কোনো কোনো উৎসব তাদের দরজা খুলে দিয়েছে৷’’
তবে উৎসবের ৭৪তম আয়োজনের উদ্বোধনের আগে এবারের জুরি বোর্ডের প্রধান স্পাইক লি বললেন ভিন্ন কথা৷ কানের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জুরি বোর্ডের প্রধান মনোনীত হলেন৷ ফলে এমনিতেই তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি ছিল সবার৷ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে লি বললেন, ‘‘চলচ্চিত্র উৎসব এবং নেটফ্লিক্স একই সঙ্গে টিকে থাকতে পারে৷ একসময় টিভি আবিষ্কারের পর সবাই মনে করেছিল সিনেমা ধ্বংস হয়ে যাবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ এবারও তাই হবে৷’’
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিতর্কের কী অবস্থা?
নেটফ্লিক্সের একটি ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফরম যারা ডিস্ট্রিবিউশন, পাবলিসিটি এড়িয়ে নির্মাতার কাছ থেকে সিনেমাকে সরাসরি দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়৷ এর যেমন কিছু ভালো দিক রয়েছে, তেমনি কিছু খারাপ দিকও রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা-প্রযোজকেরা৷ বিদেশি নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন ও হইচইয়ের মতো বাংলাদেশেও গড়ে উঠছে বঙ্গ বিডি, বায়োস্কোপ, সিনেম্যাটিক, চরকি ইত্যাদি নানা প্ল্যাটফর্ম৷ ফলে দেশের বাইরে এই বিতর্ক অনেক আগে থেকে ডানা মেললেও, বাংলাদেশে ইদানিং বেশ নড়েচড়ে বসেছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা৷
গুপী-বাঘা প্রোডাকশন্সের নির্মাতা-প্রয়োজক বিজন ইমতিয়াজ বিশ্বে সিনেমার সবচেয়ে বড় মার্কেট বলে পরিচিত কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে এসেছেন নির্মাতা নূহাশ হুমায়ূনের মুভিং বাংলাদেশ নিয়ে৷ কানের সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশের সিনেমা মার্কেট নিয়ে কথা হচ্ছিলো৷ তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশে মার্কেটে কিছু প্রবলেম আমরা ফেস করি মূলত ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে৷ সব ছবি দেখার মতো দর্শক অবশ্যই আমাদের আছে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলটা আমাদের নেই৷ বাংলাদেশে প্রোডাকশন, ডিস্ট্রিবিউশন এবং পাবলিসিটি সব টাকাই প্রডিউসার দেয়, কিন্তু থিয়েটার থেকে আমরা পাই ১০০ টাকায় ১৬ টাকা৷ এই সমস্যার সমাধান না হলে এটাকে বিজনেস হিসেবে দাঁড় করানো মুশকিল হবে৷’’
নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন মনে করেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো নির্মাতাদের সামনে একপ্রকার ‘উদ্ধারকারী’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে৷ হল সংকট, মানসম্মত হল না থাকা, ঠিকমতো টাকা ফেরত না পাওয়াসহ নানা সংকটে এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র খাত প্রায় পঙ্গু হয়ে আছে বলে মনে করেন তিনি৷ ফলে তার মতে, ‘‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে৷ ব্যবসায়িক দিক থেকে সিনেমার জন্য এটাকে আমি কোনো হুমকি বলে মনে করি না৷ তবে ওটিটি আর্টিস্টিক দিক থেকে একপ্রকার থ্রেট৷ এ ধরনের মিডিয়া সাধারণত দর্শকের ডিমান্ডের ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট তৈরি করে থাকে৷ ফলে ড্রাগ, ভায়োলেন্স, নেগেটিভ চরিত্র ইত্যাদি ক্রমাগত প্রাধান্য় পাচ্ছে৷ তারপরও অরিজিনাল ভয়েসের যে সীমাবদ্ধতা ছিল, ওটিটির কারণে সেগুলো কেটে যাবে৷’’
আরেক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আরিক আনাম খানের মন্তব্যেও এই দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গেল৷ স্ট্রিমিং সার্ভিসকেই বিনোদনের ভবিষ্যত বলে মনে করেন৷ তবে সিনেমার ক্ষেত্রে থিয়েটারের আলাদা গুরুত্ব আছে বলেও মনে করেন তিনি৷ আরিক বলছিলেন ‘‘আগে মানুষ অনেক সিনেমা দেখতে পেতো না৷ অনেক নির্মাতা তাদের সিনেমা হলে মুক্তি দিতে পারতেন না৷ কিন্তু এখন স্ট্রিমিং সার্ভিসের কল্যাণে মানুষ বাসায় বসে অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছে৷ তবে সিনেমা আসলে বড় পর্দাতেই দেখানো উচিত, কারণ যেভাবে শ্যুট করছেন, সাউন্ড ইত্যাদি অনেক টেকনিক্যাল আসপেক্ট আছে, যা আসলে বাসায় বসে পাবেন না৷ কিন্তু তারপরেও গ্রেটার অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর জন্য স্ট্রিমিং একটা বড় মাধ্যম হয়ে আসছে৷’’
বিজন, আরিক বা শাহেদের মতো প্রায় সকল তরুণ নির্মাতাই একবাক্যে স্বীকার করছেন, নিজের সিনেমা তারা আগে বড় পর্দাতেই মুক্তি দিতে চান৷ একসঙ্গে অনেকে বসে সিনেমা দেখা এবং বড় পর্দায় নির্মাতার বলতে চাওয়া গল্পের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া হলেই সম্ভব বলে মনে করেন তারা৷
বিজনের মতে, বাংলাদেশে সিনেমা হল মালিক ও ডিস্ট্রিবিউটরের কারণে নির্মাতাদের যেমন অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে হয়, দর্শকরাও ভালো সিনেমা বেছে নেয়া থেকে বঞ্চিত হন৷ তবে তিনি মনে করেন, এবার একটা পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷ ‘‘যখন পকেটে আঘাত লাগে তখন মানুষ চেঞ্জ হয়, এছাড়া মানুষ চেঞ্জ হয় না৷ এক্ষেত্রে আশা করি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷’’
একটা বিষয় স্পষ্ট, কান অথবা ঢাকা, ওটিটি বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের সিনেমা সম্পর্কিত ধারণায় একটি বড় পরিবর্তন হয়েই আসছে৷ এই দুয়ের সুষ্ঠু সমন্বয় কিভাবে করা সম্ভব তা হয়তো আপাতত সময়ের হাতেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে৷
কানে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা
এক নজরে দেখে নেয়া যাক আঁ সার্তে রিগা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর প্রতিদ্বন্দ্বী কারা!
ছবি: Zbaer Ahmed/DW
কী এই আঁ সার্তে রিগা?
আঁ সার্তে রিগা এর অর্থ 'অন্য দৃষ্টি থেকে'। নামের সঙ্গে মিল রেখেই অন্যভাবে যারা সিনেমা তৈরি করে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে চান, তাদের জন্যই এই ক্যাটাগরি। উৎসবের মূল পুরস্কার পাম দি'ওর এর জন্য কম্পিটিশন বিভাগে আসে বিশ্বনন্দিত পরিচালকদের ছবি। কিন্তু এর বাইরের ছবিগুলোর প্রতিযোগিতার জন্য এই ক্যাটাগরি চালু হয় ১৯৭৮ সালে। ২০টি চলচ্চিত্র স্থান পায় এখানে, পুরস্কার প্রায় ৩০ হাজার ইউরো বা প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
ছবি: Brynn Anderson/AP/picture alliance
বাংলাদেশের 'রেহানা মরিয়ম নূর'
মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূর। কলেজের এক অধ্যাপকের কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসতে দেখেন রেহানা। পরে তার ছয় বছরের মেয়ের অদ্ভুত আচরণ বিষয়ে স্কুল থেকেও অভিযোগ আসে। রেহানা সমাজের উন্মত্ততার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেন। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, প্রযোজনা করেছেন জেরেমি চুয়া। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরি হক বাঁধন।
ছবি: Potocol and Metro Video
যুক্তরাষ্ট্রের 'আফটার ইয়েং'
ছোট্ট মেয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু- অ্যান্ড্রয়েড রোবট ইয়েং একদিন যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়। বাবা জেইক তখন সেটিকে সারানোর উপায় খুঁজে বের করেন। এই প্রক্রিয়ার মধ দিয়ে যেতে গিয়ে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান তিনি। পরিচালক কোগোনাডার পরিচালনায় জেইকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলিন ফ্যারেল।
ছবি: A24 Films
তুরস্কের 'আগলিলিক হাসান'
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে চাষ করে জীবন ভালোই কাটছিল হাসানের। কিন্তু একদিন তার জমির মাঝখানেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। হাসান এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মক্কায় তীর্থযাত্রা সবকিছুকে নতুনভাবে তার সামনে উপস্থাপন করে। সেমিহ কাপলানোলুর পরিচালনায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উমুত কারাদাগ।
ছবি: Kaplan Film & Sinehane
যুক্তরাষ্ট্রের 'ব্লু বাইউ'
প্রেমিকা ও স্ত্রী ক্যাথি এবং সৎ মেয়ে জেসিকে নিয়ে সুখেই জীবনযাপন করছিলেন কোরিয়া থেকে দত্তক সন্তান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা আন্তোনিও লাব্লাংক। হঠাৎ একদিন লাব্লাংকের জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন, তাকে যেকোনো সময় কোরিয়া ফেরত পাঠানো হতে পারে। পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক-পরিচালক জাস্টিন চোন নিজেই অভিনয় করেছেন আন্তোনিও লাব্লাংক- এর ভূমিকায়।
ছবি: Entertainment One - MACRO/imago images
ফ্রান্সের 'বন মেরে' বা 'ভালো মা'
পঞ্চাশোর্ধ্ব পরিষ্কারকর্মী নোরা ছেলে এলিসকে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন। এলিস ডাকাতির দায়ে কয়েক মাস ধরে কারাগারে। এই অপেক্ষার সময়টা যতটা সম্ভব নিজের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করেন নোরা। হাফসিয়া হেরজির পরিচালনায় নোরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হালিমা বেনহামেদ।
ছবি: Guy Ferrandis/SBS Productions/Design: Benjamin Seznec TROIKA
রাশিয়ার 'ডেলো' বা 'গৃহবন্দী'
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ডেভিড সোশাল মিডিয়ায় শহর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা শুরু করেন। কিন্তু মেয়রের বিরুদ্ধের তদন্তের বদলে ডেভিডের বিরুদ্ধেই অর্থ কারচুপির অভিযোগ এনে তাকে গৃহবন্দী করা হয়। সব চাপ সত্ত্বেও ডেভিড তার বক্তব্যে অনড় থাকেন। আদালতের বিচারের তারিখ যত এগিয়ে আসতে থাকে, এই লড়াইয়ে কার জয় হবে, এ নিয়ে চিন্তাও বাড়তে থাকে। আলেকসেই জের্মান জুনিয়রের পরিচালনায় ডেভিডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মেরাব নিনিদজে।
ছবি: Daria Shumakova
অস্ট্রিয়া-জার্মানির 'ডি গ্রোসে ফ্রাইহাইট'
সিনেমাটির নামের অর্থ 'মহান স্বাধীনতা'। যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিতে সমকামী হওয়ার কারণে হান্সকে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৭৫ অনুচ্ছেদের কারণে তার স্বাধীনতা একেবারেই ক্ষুণ্ণ। তার জীবনে একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক হয় কারাগারে তার কক্ষে থাকা খুনি ভিক্টরের সঙ্গে। সেবাস্টিয়ান মাইজের পরিচালনায় হান্সের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফ্রানৎস রোগোভস্কি।
ছবি: reibeuterfilm_Rohfilm
হাইতি, ফ্রান্স, বেনিনের 'ফ্রেদা'
পোর্ত-অউ-প্রিন্সের দরিদ্র এলাকায় ফ্রেদার পরিবারের বাস। রাস্তার পাশের ছোট দোকান তাদের খাওয়াপড়ার জোগান দিলেও হাইতির চলমান সহিংসতা তাদের ধীরে ধীরে শঙ্কিত করে তুলছে। তবে ফ্রেদা তার দেশের ভবিষ্যতের ওপর ভরসা করতে চান। জেসিকা জেনেউস এর পরিচালনায় নেয়েমিয়া বাস্টিয়েন অভিনয় করেছেন ফ্রেদা চরিত্রে।
ছবি: SaNoSi Productions
চীনের 'গায়ে ওয়া'র'
এই শব্দের অর্থ 'রাস্তার জ্ঞানী'। ডংজি তার বাবার চিকিৎসার জন্য অন্যদের দেয়া ধারের টাকা ফেরত নেয়ার ওপর নির্ভর করে। অস্থির মানসিক অবস্থাতেও জিউওর নামের এক মেয়ে তার মনে স্বস্তি এনে দিতে পারে। কিন্তু ঘটনাক্রমে একইদিনে ডংজি তার বাবা এবং জিউওরকে হারায়। জিয়াঝৌ না এর পরিচালনায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিউচিয়াও লি।
ছবি: The Seventh Art Pictures
বেলজিয়াম, রোমানিয়া, মেক্সিকোর 'লা সিভিল'
সিয়েলোর মেয়েকে মাদকচক্রের লোকজন অপহরণ করেছে। কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হওয়ার পর সিয়েলো নিজের কাঁধেই মেয়ে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নেন। তদন্তে নেমে ভিন্ন ধারায় কাজ করা এক আর্মি মেজরের সঙ্গে পরিচয় হয় সিয়েলোর। এরপর এগিয়ে চলে ঘটনা। একের পর এক সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিয়েলো। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তিওডোরা আনা মিহাই। সিয়েলোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আর্সেলিয়া রামিরেজ।
ছবি: Menuetto - Agustin Paredes
আইসল্যান্ডের 'ল্যাম্ব'
আইসল্যান্ডের এক প্রেমিক জুটি মারিয়া এবং ইংভার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভেড়ার খামারে থাকেন। একদিন খামারে এক নবজাতককে কুড়িয়ে পান তারা। নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করে শুরুতে অসীম আনন্দ পেলেও পরবর্তীতে তা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধ্বংসের কারণ। ভালদিমির জোহানসনের পরিচালনায় মারিয়া চরিত্রে নুমি রাপাসে এবং ইংভার চরিত্রে হিলমির স্নায়ের গুডনাসন অভিনয় করেছেন।
ছবি: Go to Sheep, Black Spark Film & TV, Madants, Film i Vast, Chimney, Rabbit Hole, Helgi Jóhannsson
ফ্রান্সের 'মঁ ফ্রেঁ এ মোয়াঁ'
সিনেমার নামের অর্থ- আমার ভাই এবং আমি। চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ১৪ বছরের নোয়া। তাদের মা দীর্ঘদিন ধরে কোমায় আছেন। ভাইদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে মায়ের যত্ন নেয় নোয়া। মায়ের পছন্দের অপেরা শোনাতে গিয়ে নোয়া নিজেই পড়ে যায় অপেরার প্রেমে। একসময় তার সামনেও সুযোগ আসে খোলস ভেঙে বের হয়ে আসার। ইয়োহান মাংকার পরিচালনায় নোয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মায়েঁল রোয়িঁ-বেরান্দোঁ।
ছবি: David Koskas - Single Man Productions
তাইওয়ানের 'মানিবয়েজ'
তাইওয়ানের পাশাপাশি সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের প্রযোজকেরা। ফেই নামের এক সমকামী ছোটখাট অবৈধ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার পরিবার তার উপার্জনের টাকা নিলেও তার সমকামী হওয়াটাকে মেনে নিতে রাজি না, তখন তার সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। সি. বি. ইয়ি এর পরিচালনায় ফেই এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কাই কো।
ছবি: MONEYBOYS
মেক্সিকোর 'নচে দে ফুয়েগো'
সিনেমার নামের অর্থ- চুরি যাওয়াদের জন্য প্রার্থনা। সিনেমটিতে তুলে ধরা হয়েছে মেক্সিকোর পাহাড়ি শহরের তিন শিশুর কথা। পরিত্যক্ত বিভিন্ন বাড়িতে নিজেদের পালিয়ে থাকার জায়গা গড়ে তোলে তারা। কিন্তু একসময় তাদেরও শিকার হতে হয় নানা সহিংসতার। মেক্সিকোর পাশাপাশি জার্মানি, ব্রাজিল ও কাতারের সহপ্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তাতিয়ানা হুয়েৎসো।
ছবি: NOCHE DE FUEGO
জাপানের 'অনোডা'
১৯৪৪ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হারার পথে। রহস্যে ঘেরা মেজর তানিগুচির আদেশে তরুণ হিরু অনোডা অ্যামেরিকান সৈন্যদের আসার ঠিক আগে আগে ফিলিপিন্সের একটি দ্বীপে যান। সেখানে তারা জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। জাপানের জন্য যুদ্ধ শেষের দিকে হলেও অনোডার যুদ্ধ শেষ হয় ১০ হাজার রাত পর। আর্থার হারারির পরিচালনায় তরুণ আনোডার চরিত্রে ইউইয়া এন্দো এবং বৃদ্ধ আনোডার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাঞ্জি ৎসুদা।
ছবি: athysphere
রাশিয়ার 'রাজহিমায়া কুলাকি'
এই সিনেমার নামের অর্থ- মুঠি শিথিল করা। উত্তর ওসেটিয়ার খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক গ্রামে আদা নামে এক তরুণী বাস করেন। পরিবারকে ভালোবাসলেও তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই পালাতে হবে শিগগির। এ নিয়েই সিনেমার গল্প। কিরা কোভালেংকোর পরিচালনায় আদার ভূমিকায় করেছেন মিলানা আগুজারোভা।
ছবি: RAZZHIMAYA KULAKI
নরওয়ের 'দ্য ইনোসেন্টস'
নরওয়ের পাশাপাশি সুইডেন, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্যের প্রযোজকেরাও এই সিনেমার সহপ্রযোজনায় অংশ নিয়েছেন। নর্ডিক এলাকায় এক গ্রীষ্মকালে হঠাৎই এক দল শিশু বুঝতে পারে যে তাদের কিছু রহস্যময় ক্ষমতা রয়েছে। শুরুতে মজার খেলা হলেও একসময় অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটতে থাকে। সিনেমটাই পরিচালনা করেছেন এসকিল ফোগট।
ছবি: Mer Films
বেলজিয়ামের 'উন মন্দে'
সিনেমার নামের অর্থ- খেলার মাঠ। স্কুলে প্রায়ই আবেলকে অন্যান্য বাচ্চারা হেনস্তা করে। আবেলের সাত বছর বয়সি ছোট বোন নোরা তা সহ্য করতে না পেরে বাবকে জানাতে যায়। কিন্তু আবেল তাতে বাধা দেয়। নোরা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনকে বোঝার ফারাক নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে। লরা ওয়ানডেলের পরিচালনায় নোরার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মায়া ভানডেরবেকুয়ে।
ছবি: Dragons Films
ইসরায়েলের 'ভায়েহি বোকার'
ফ্রান্সের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত সিনেমাটির নামের অর্থ- সকাল হতে দাও। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জেরুসালেমে বাস করেন সামি। ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে তিনি তার আরব অধ্যুষিত গ্রামে যেতে বাধ্য হন। বিয়ের পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ইসরায়েলি বাহিনি সে গ্রাম অবরুদ্ধ করে। সামির জীবন পালতে যেতে শুরু করে। এরান কলিরিনের পরিচালনায় সামির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আলেক্স বাকরি।
ছবি: DORI MEDIA/LES FILMS DU POISSON
বুলগেরিয়ার 'উইমেন ডু ক্রাই'
ফ্রান্সের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত সিনেমাটি সত্য ঘটোনা অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটিতে একটি বুলগেরিয়ান পরিবারের নারীদের মুখোমুখি হওয়া নানা সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নারীর সমতার বিরোধীদের সহিংসতার চিত্রও দেখানো হয়েছে পরিচালক মিনা মিলেভা নির্মিত সিনেমাটিতে।