1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৫ অক্টোবর ২০১৮

নরেন্দ্র মোদী মনে করেন, ভারতের স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের কংগ্রেস নেতাদের কংগ্রেসই সম্মান দেয়নি৷ তাই তাঁর সরকার ওই নেতাদের সম্মান জানাবেন৷ নিন্দুকরা বলছেন, কুম্ভীরাশ্রু৷ তবে নেতাজির পরিবারের এক সদস্য মোদীর সুরেই কথা বলছেন৷

স্ত্রীর সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুছবি: Public Domain

নেতাজিও ভোটের ময়দানে!‌ মহাত্মা গান্ধী, বি আর আম্বেদকর এবং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের পর এবার হঠাৎই সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি সম্মান দেখানোর তাগিদ অনুভব করছে বিজেপি৷ ক'‌দিন আগেই ভারত জুড়ে পালিত হলো আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর৷ সেই উপলক্ষ্যে চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে চলতি বছরে দ্বিতীয়বার লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু, কেন এহেন ‘নেতাজী প্রেম’?‌ কী বলছে ইতিহাস?‌

ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে যে, নেতাজিকে নিয়ে লোকসভা ভোটের মুখে হইচই করার তোড়জোড় চলছে, অতীতে সেই নেতাজির তৈরি আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং নেতাজির স্বাধীনতা আন্দোলন প্রক্রিয়াকে পেছন থেকে ছুরি মেরেছিল বিজেপি'‌র নীতিগত ‘‌মেন্টর’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ

প্রসঙ্গত, আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙালি তরুণ সুভাষচন্দ্র বসু৷ সেই ১৯৪১ সালে আরএসএস নেতা সাভারকার প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন, হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে৷ আজাদ হিন্দ ফৌজকে রুখতে হিন্দুদের ব্রিটিশ সেনায় নাম লেখাতে হবে৷ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ‘‌যুদ্ধ’কে ‘‌সুযোগ’ হিসেবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি৷ ময়দানে নেমে পড়েছিলেন৷ তাঁর আহ্বানে সেই সময় ‘‌নিয়োগ শিবির' খোলা হয়েছিল৷ প্রচুর হিন্দু নাগরিককে ব্রিটিশ সেনায় নাম লেখানো হয়েছিল, যারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসা আজাদ হিন্দ ফৌজকে আটকানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল৷ আরএসএসের সেই উদ্যোগ সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীকে আটকাতে ব্রিটিশের সহায়ক ‌প্রমানিত হয়েছিল৷ আজাদ হিন্দ বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করেছিল সেই সেনাদল৷

ইদানিং ভারতীয় জনতা পার্টি প্রচারে নেমেছে যে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেহরু ও ‌গান্ধী পরিবারের কৃতিত্ব জাহির করতে গিয়ে নাকি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানকে আড়াল করে এসেছে কংগ্রেস৷ অভিযোগকারী খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেছেন,‌ তাঁর সরকার এবার সব বদলে দেবে৷ যদিও নরেন্দ্র মোদীর এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে পিছপা হয়নি প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস৷ দলের তরফে বলা হয়েছে, ২০১৯-‌কে সামনে রেখে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতাজির ঐতিহ্য আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে৷ নতুন করে দেশের ইতিহাস রচনা করতে চাইছে৷

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি স্পষ্ট: সুখেন্দুশেখর রায়

This browser does not support the audio element.

নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন‌সহ তাঁর সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‌‘‌আজাদ হিন্দ সরকারের পূর্তি উদযাপন হচ্ছে, ভালো কথা৷ কিন্তু তা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কৌশল মোটেই সুখকর নয়৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি স্পষ্ট৷ অতীতে বিজেপি'‌র মাতৃ সংগঠনগুলি জনসঙ্ঘ, হিন্দু মহাসভা থেকে আরএসএস পর্যন্ত প্রতিটি সংগঠন নেতাজির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে৷ এখন হঠাৎ বিজেপিকে গান্ধীবাদী, প্যাটেলপন্থি ও সুভাষপন্থি হতে দেখে অবাক হতে হয়৷ আসলে এগুলো তাদের কৌশল৷ এঁরা সবাই তো কংগ্রেসের নেতা!‌’’

তিনি আরো বলেন, ‘‌‘‌বিজেপির বক্তব্য, কংগ্রেস তাদের নেতাদের সম্মান দেয়নি, আমরা দিচ্ছি৷ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা৷ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন কান্ড দেখিনি৷’’ মোদী অবশ্য নেতাজির ‘‌গৌরব গাথা’-‌কে সম্মান জানাতে মরিয়া৷ পুরোনো দিল্লির লালকেল্লার ৩ নম্বর ব্যারাকে আইএনএ-‌র তৎকালীন বন্দি সেনাদের বিচার হয়েছিল৷ আইএনএ-র প্রবীণ সেনাকে পাশে নিয়ে এক স্মারকের উন্মোচন করেছেন মোদী৷ সেখানে স্মারক ছাড়াও একটি সংগ্রহশালা গড়া হবে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুলিশকর্মীদের পুরস্কৃত করবেন নেতাজির জন্মদিন, ২৩ জানুয়ারিতে৷

এদিকে, কলকাতায় নেতাজি পরিবারের বেশিরভার সদস্যের বক্তব্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কে বড়, কে ছোট এসব নিয়ে তর্ক-‌বিতর্কের কোনো মূল্য নেই৷ কারণ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে৷ যদিও মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছেন নেতাজির পরিবারের এক সদস্য বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বসু৷ তাঁর মতে, পূর্বের কংগ্রেস সরকার ব্যস্ত ছিল নেহরু ও গান্ধী পরিবার নিয়ে৷ বিজেপি সরকারই নেতাজির ফাইল প্রকাশ করেছে৷ এই সরকারই নেতাজিকে সম্মান জানিয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ