ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে নতুন সরকার গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন পরবর্তী মনোনয়ন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রোভি রিভলিন বলেন, ‘‘আমি আপনাকে (নেতানিয়াহু) পরবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি৷’’
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়৷ নির্বাচনে নেতানিয়াহুরদল লিকুদ পার্টির ৩১জন সদস্য জয়লাভ করে৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বেনি গান্টস-এর ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির ৩২ সদস্য জয় পায়৷ তবে সরকার গঠনের জন্য নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি নিজ দলের সদস্যসহ মোট ৫৫ জন প্রতিনিধির সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়৷ এদিকে সরকার গঠনের দৌড়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বেনি এখন পর্যন্ত ৫৪ জন সদস্যের সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে৷
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
7 ছবি1 | 7
দেশটির ১২০ সদস্য বিশিষ্ট সংসদে সরকার গঠন করতে হলে কোনো দলকে অন্তত ৬১জন সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে৷ দৌড়ে এগিয়ে থাকা নেতানিয়াহুর হাতে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় রয়েছে৷ নেতানিয়াহু ব্যার্থ হলে বেনি গান্টস সরকার গঠনের সুযোগ পাবেন৷
সরকার গঠনের নানা কসরত
সরকার গঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর একটি ঐক্যমতের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু৷ তিনি বলেন, উপসাগরীয় দেশ ইরানের বর্তমান অস্থিরতা মোকাবেলায় এ মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন একটি জাতীয় ঐক্য৷
তবে নেতানিয়াহু জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও লিকুদ পার্টির সাথে কোনো ধরনের ঐক্য করতে রাজী নন বেনি গান্টস৷ আর এ ক্ষেত্রে তিনি আঙুল তুলেছেন নেতানিয়াহুর প্রতি, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ ‘‘আমরা এমন কারো সাথে সংসদে বসতে চাই না যার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে,'' বলেন তিনি৷
এদিকে সম্মিলিত সরকার গঠনের বাদানুবাদের মধ্যে সরকার গঠনের একটি বিকল্প প্রস্তাবও এসেছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ আর তা হলো ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রস্তাব৷ প্রস্তবটিতে বলা হয়েছে যে, দুটি বড় রাজনৈতিক দল পালাক্রমে সরকার পরিচালনা করবে৷ তবে আপত্তি রয়েছে সেখানেও, কেননা, রাষ্ট্র পরিচালনায় কে প্রথম দায়িত্ব পাবে সে নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোতে রয়েছে মতানৈক্য৷