পশ্চিম তীরে অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতির বিরোধী দুই সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের কারণে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী৷ ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মতের অমিল সত্ত্বেও দুই নেতার আলোচনা হাস্যরসে ভরা থাকে৷ একসঙ্গে দু'জনকে সিগার খেতেও দেখা গেছে৷ অথচ এই যাত্রায় সাক্ষাতই হলো না দু'জনের৷ ইসরায়েল সফররত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলের সঙ্গে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সৌজন্য সাক্ষাৎ হলে তা খবরের শিরোনামে যেত না৷ শেষ মুহূর্তে নেতানিয়াহু সেই সাক্ষাৎ বাতিল করায় বিষয়টি জোরালো বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷
দুই পক্ষের মধ্যে এত বড় মনোমালিন্যের কারণ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচির একটি অংশ৷ জার্মান কূটনীতিক ও নেতাদের বিদেশ সফরের সময় বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় – এমনকি তারা সরকারের কোনো নীতির হলেও কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না৷ গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে সেই ধরনের সাক্ষাৎ নিয়ে সরকারও তেমন মাথা ঘামায় না৷ এ পর্যন্ত ইসরায়েলেও এ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইওয়াখিম গাউক যখন ইসরায়েল সফরে এসেছিলেন, তখনও জার্মান দূতাবাস এমন সংলাপের আয়োজন করেছিল৷ সেই তালিকায় ছিল এমন দুটি এনজিও যারা অধিকৃত এলাকায় ইসরায়েলের বিতর্কিত বসতি নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার সমালোচনা করে চলেছে৷
এবার সিগমার গাব্রিয়েলের সফরসূচিতে সেই ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ ও ‘বেৎসেলেম’-এর নাম দেখে বেঁকে বসেন নেতানিয়াহু৷ সাফ জানিয়ে দেন, গাব্রিয়েলকে বেছে নিতে হবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নাকি ওই এনজিওগুলোর সঙ্গে দেখা করতে চান৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই চাপের সামনে নতি স্বীকার না করে নিজের সফরসূচি অনুযায়ী অগ্রসর হবার সিদ্ধান্ত নেন৷ নেতানিয়াহু তখন আলোচনা বাতিল করে দেন৷ তাঁর মতে, যেসব মহল ইসরায়েলি সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না৷ উল্লেখ্য, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদও নিজের হাতে রেখেছেন৷
সেই খবর পেয়ে গাব্রিয়েল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোনো বিদেশি নেতা বার্লিনে এসে সরকার-বিরোধী কোনো মহলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে যেমন বিস্ময়ের কোনো কারণ নেই, তাঁর সফর নিয়েও তেমনটা থাকা উচিত নয়৷ তাছাড়া ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কোনো বাসনা তাঁর নেই৷ তবে এই একটি ঘটনা জার্মানি ও ইসরায়েলের সম্পর্কের উপর কোনো ছায়া ফেলবে না বলে মনে করেন গাব্রিয়েল৷
নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের অপমৃত্যুর জের ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসরায়েলের৷ তাই ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের চরিত্র একেবারে অনন্য৷ কিছু মানুষের জীবন জুড়েও রয়েছে এ দুটি ভূখণ্ড...
গল্পগুচ্ছ
জার্মান লেখক সারা স্ট্রিকার ইসরায়েলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছেন৷ সেখানেই লিখেছেন নিজের প্রথম উপন্যাসটি৷ আর সম্প্রতি ইসরায়েলি এবং জার্মান লেখকদের কাজ নিয়ে তৈরি অভিনব একটি গল্পগুচ্ছে একটি ছোট গল্পও লিখেছেন তিনি৷
ছবি: Win Schumacher
মানুষ, প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ
এত দীর্ঘ একটা সময় ইসরায়েলে থাকার কারণে সেখানকার মানুষ, এমনকি প্রকৃতিকেও ভালোবেসে ফেলেছেন সারা৷ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বেড়ে চলেছে সহযোগিতা৷ তাই সারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷
ছবি: Win Schumacher
রন্ধনশিল্প
২০১৩ সালে জার্মানির টম ফ্রাঞ্জ ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত রান্নার অনুষ্ঠান তথা প্রতিযোগিতা ‘মাস্টার শেফ’-এ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই ইসরায়েলে তিনি একটি অতি পরিচিত নাম৷
ভালোবাসার টানে
ইসরায়েল আর সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছিলেন টম যে, আট বছর আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন৷ এ অঘটনটা ঘটেছিল ভালোবাসার টানেই৷ প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমানে টমকে জেরুসালেমের একটি ছোট্ট সিনাগগে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করতে দেখা যায়৷
রাঁধুনি পরিবার
স্ত্রীর পরিবারেই থাকেন টম৷ তাঁরাও যে রান্নায় এক-একজন ওস্তাদ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে রান্নাঘরে দারুণ সময় কাটে টমের৷ কত কী যে শিখেছেন তিনি এখানে৷ আসলে জেরুসালেমের খাবার-দাবার নিয়ে একটি বই লিখতেই তিনি এসেছিলেন ইসরায়েলে৷
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন
নাম: রিলি উইলো৷ বয়স: ৩৪৷ স্বপ্ন: দাদির মতো মস্ত গায়িকা হওয়ার৷ রিলির দাদি একসময় বার্লিনের বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন৷ তাই রিলি ইসরায়েল ছেড়ে আজ পরবাসী৷ বহুদিন হলো বার্লিনেই ঘর বেঁধেছেন তিনি, সানন্দেই৷ যদিও নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় দাদিকে৷
বার্লিনের আড্ডা
এটা ইসরায়েল নয়, জার্মানির ছবি৷ রাজধানীর ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার একটা পাবে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন রিলি উইলো আর তাঁর স্বামী বেনেডিক্ট বিন্ডেভাল্ড৷ বার্লিনের এ অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী নয়ক্যোলন এলাকায় বহু তরুণ ইসরায়েলির বাস৷
হালকা হাসির পাল্লা
ইসরায়েল থেকে আসা রিলি উইলো আর বন্ধু শাহাগ শাপিরা একটা বিষয়ে একমত৷ আর সেটা হলো: ইহুদি বুদ্ধিমত্তা আর ইসরায়েলি ব্যঙ্গ আসলেই অতীতের কালো অধ্যায়টাকে হালকা করতে সাহায্য করেছে অনেকটাই৷
ছবি: Win Schumacher
সোজা প্রশ্ন
পেশায় সাংবাদিক শাপিরার বয়স মাত্র ২৭৷ কিন্তু আজকের জার্মান সমাজে ইহুদিদের কীভাবে দেখা হয়, সেটা জানতে তাঁর দারুণ আগ্রহ৷ তাই পথে-ঘাটে কারুর সাথে দেখা হলেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন: আচ্ছা, আপনি কি ইহুদি বিদ্বেষী?
হাসতে তো মানা নেই!
বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালটি দেখতে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই নিজের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ‘সেল্ফি’ তুলতে ভোলেন না৷ ‘‘এখানে সেল্ফি তোলা নিষেধ’’ – না, সত্যি সত্যি না৷ দর্শনার্থিদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে শাপিরা প্রায়ই এমনটা বলেন৷ আর লোকজন সব ঘাবড়ে গেলে, হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি৷