পশ্চিম তীরে ইহুদিদের জন্য আরো বসতি গড়বে ইসরায়েল৷ এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির অবস্থান তুলে ধরে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করার জন্য জেরুসালেম সফর করছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস৷
বিজ্ঞাপন
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় পশ্চীম তীরের এক তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছিল ইসরায়েল৷ সেই অংশের নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে ইসরায়েলকে দিয়ে বাকি অংশে ফিলিস্তিনের স্বায়ত্বশাসন আরো জোরদার করার পরিকল্পনা ডনাল্ড ট্রাম্পের৷ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পশ্চীম তীরে ইহুদিদের জন্য আরো বসতি গড়ে তুলবে ইসরায়েল৷
আগামী ১ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব নেবে জার্মানি৷ সেদিনই পশ্চিম তীরে আরো নতুন বসতি গড়ার পরিকল্পনা সংসদে উপস্থাপন করবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু৷
রেস্তোরাঁয় শেফ-এর সহকারি হওয়ার আশায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রতিবন্ধী তরুণ ইয়াদ হালাক৷ প্রতিদিনের মতো সেদিনও হেঁটে যাচ্ছিলেন স্কুলে৷ ইসরায়েলের পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে তাঁকে৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত....
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Milstein
ইয়াদ হালাকের কী অপরাধ?
ইয়াদ হালাক৷ বয়স ৩২৷ তবে আচরণে ঠিক আট বছরের শিশুর মতো৷ স্বপ্ন ছিল বড় কোনো রেস্তোরাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট শেফ হবেন৷ এলউইন এল কুদস সেন্টারে চলছিল প্রশিক্ষণ৷ মে মাসের শেষ শনিবার সকালে পূর্ব জেরুসালেমের পুরাতন শহর থেকে হেঁটে সেখানেই যাচ্ছিলেন৷ ইসরায়েলের সীমান্ত পুলিশ পথেই গুলি করে হত্যা করে তাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
পুলিশের মিথ্যা বিবৃতি
লায়ন্স গেটের কাছে গুলি করে হত্যা করার পর ইয়াদ হালাকের পরিচয় এভাবেই তুলে ধরেছিল ইসরায়েলের সীমান্ত্র পুলিশ৷ এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ’’পিস্তলের মতো একটা সন্দেহজনক জিনিস নিয়ে এক ব্যক্তিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়৷’’ বাধা দিতে চাইলে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে এবং পুলিশ তাকে ‘‘দৌড়ে তাড়া করে’’৷ বারবার থামতে বলা সত্ত্বেও না থামায় তাকে গুলি করতে বাধ্য হয় পুলিশ৷
এক শিক্ষিকার আপ্রাণ চেষ্টা
ইয়াদ হালাকের এক শিক্ষিকা দূর থেকে দেখছিলেন পুরো ঘটনা৷ শিক্ষার্থীর বিপদ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি৷ ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তাদের হিব্রু ভাষায় চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘ও প্রতিবন্ধী৷ ও কারো ক্ষতি করে না৷’’ তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি৷ কেউ শোনেনি তাঁর কথা৷ রাস্তার পাশের এক ডাস্টবিনের আড়ালে লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন ইয়াদ৷ পুলিশের গুলিতে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে তাঁর দেহ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Milstein
ইসরায়েলি পুলিশের ভুল স্বীকার
পরে ইয়াদ হালাকের কাছে যে কোনো অস্ত্র ছিল না তা স্বীকার করে নেয় ইসরায়েলের পুলিশ৷ তার কাছে কোনো পিস্তল বা অন্য কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া না যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয় এক বিবৃতিতে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
তদন্ত শুরু
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয়৷ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ঘটনায় জড়িত দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
‘ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা সহজ’
ইয়াদ হালাকের এমন মৃত্যুতে এলউইন এল কুদস সেন্টারে নেমেছে শোকের ছায়া৷ স্থানীয়রাও শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ৷ এলউইন এল কুদস সেন্টারের অন্য শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কিত৷ এক ছাত্রীর বাবা ইমাদ মুনা বলছিলেন, ‘‘ (ইসরায়েলের) ওই লোকগুলোর কাছে হত্যা যেন সহজ একটা ব্যাপার৷ বিষয়টা খুব আতঙ্কের৷ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা সহজ৷’’ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড, ফিলিস্তিনে ইয়াদ হালাক
ইয়াদ হালাক হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ পশ্চিম তীরের বেথেলহাম শহর এবং জেরুসালেমের বিক্ষোভ সমাবেশে ইয়াদের প্রতি ইসরায়েলি পুলিশের নিষ্ঠুরতাকে তারা তুলনা করেছেন জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের আচরণের সঙ্গে৷ ‘ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর মতো করে তাই অনেক বিক্ষোভকারী তাদের প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘প্যালেস্টিনিয়ান লাইভস ম্যাটার৷’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Milstein
ইসরায়েলেও প্রতিবাদ
ইসরায়েলের মানবতাবাদীরাও বসে নেই৷ ইয়াদ হালাক হত্যায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে তেল আবিব, জাফা এবং আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা৷
ছবি: DW
‘ওখানে যাওয়া ছিল ওর আনন্দ’
বাবা কাহেইরি হালাক জানালেন, বয়স ৩২ হলেও আসলে ইয়াদ ছিলেন আট বছরের শিশুর মতো৷ প্রথম এক মাস এক শিক্ষক স্কুলে নিয়ে যান তাকে৷ তবে পথ চিনে ফেলার পর একাই হেঁটে যেতে চাইতেন৷ শিক্ষকরা ইয়াদকে বুঝিয়েছিলেন, ‘‘স্বাবলম্বী হতে হবে, স্বাধীনভাবে একা চলতে হবে৷’’ একা স্কুলে যেতে দিয়ে সন্তান হারানোর শোক মানতে পারছেন না কাহেইরি হালাক! মানতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর সন্তান আর কোনোদিন ফিরে আসবে না৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. Alkharouf
ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশ
এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গানৎস বলেছেন, ‘‘এ ঘটনায় আমরা সত্যিই দুঃখিত৷ (ইয়াদ হালাকের) পরিবারের শোকের অংশীদার আমরাও৷’’ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘ইয়াদ হালাকের সঙ্গে যা ঘটেছে তা বড় ধরনের ট্র্যাজেডি৷ তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন, অথচ অতি স্পর্শকাতর একটি স্থানে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া তাকে জঙ্গি মনে করা হয়েছে৷"
ছবি: Reuters/M. Kahana
10 ছবি1 | 10
ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা নাকচ করে মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শ্তায়েহ বলেছেন, ইসরায়েল তা বাস্তবায়নের পথে এগোলে পুরো পশ্চিম তীর এবং গাজা মিলিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করা হবে৷ তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলের দুই প্রতিবেশীর সহাবস্থান নিশ্চিত করার সমস্ত উদ্যোগ নস্যাৎ করে দেবে৷
শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ করোনা সংকট শুরুর পর ইউরোপের বাইরে প্রথম সফরে নেতানিয়াহুকে সে বিষয়টিই সবিস্তারের জানাবেন হাইকো মাস৷
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তির ভবিষ্যৎ এবং আরো কিছু আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
সফরে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাৎসি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানৎস-এর সঙ্গেও বৈঠক করবেন হাইকো মাস৷ সববশেষে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্স হবে বলেও আশা করা হচ্ছে৷
এসিবি/ কেএম (এপি, এএফপি, ডিপিএ)
গত বছরের ২২ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল: যে সম্পর্ক বিভাজনের
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের নাবলুস ঘুরেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক জুলফিকার এবানি৷ তুলে এনেছেন সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আর পাশাপাশি থেকে ইসরায়েলিদের সাথে তাদের যোজন যোজন দুরত্বের চিত্র৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ডাক টিকিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড
পশ্চিম তীরে নাবলুসের একটি সড়ক৷ পাশেই ইসরায়েল কিন্তু ফিলিস্তিনের কোনো ডাক টিকিট চলে না সেখানে৷ আবার বিপরীতে ইসরায়েলের কোনো ক্রেডিট কার্ড আপনি ফিলিস্তিনে ব্যবহার করতে পারবেন না৷ ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে অবস্থানকালে ডয়চে ভেলের জুলফিকার এবানিকে সেখানকার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির পাঠানো বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘‘অবস্থান প্যালেস্টাইন অঞ্চলে৷ লেনদেন সম্ভব নয়৷ আপনি কার্ডটি এই দেশে ব্যবহার করতে পারবেন না৷’’
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
বিভাজনের দেয়াল
জুলফিকার এবানি ফিলিস্তিনে অবস্থান করেছেন ‘ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে’৷ তাঁর ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে ‘নিকৃষ্ট দৃশ্য’ অবলোকন করা যায় হোটেলটি থেকে৷ ফিলিস্তিন থেকে যে দেয়াল পৃথক করেছে ইসরায়েলকে সেটি দেখতে পাবেন এই হোটেলের জানালা দিয়ে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
চাকুরি না বিদ্যা?
আন-নাজাহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়৷ ছবিতে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি নিউজলেটার দেখা যাচ্ছে৷ যার শিরোনাম ছিল ‘দখলদারিত্বের ১৯ বছর’৷ ফিলিস্তিনের ৪০ ভাগ স্নাতোকোত্তরই বেকার৷ যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি চাকুরি সংকট আছে এমন কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা বন্ধ করে দিচ্ছে৷ জোর দেয়া হচ্ছে গণিত আর প্রকৌশলে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
যে বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন বিশ্ব থেকে
আন-নাজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নাহের নাতসেহ৷ ফিলিস্তিনের অন্য বিজ্ঞানীদের মতো তিনিও একটা সময় পর্যন্ত বিদেশে থেকে ফিরে এসেছেন দেশে৷ তাঁর জন্ম জেরুজালেমে৷ কাজ করেছেন মিশরের কায়রো, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে৷ নাহের নাতসেহ জানান বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে তারা আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না৷ এমন কি নিরাপত্তার কারণে ইসরায়েলিদের আনা সম্ভব না৷
ছবি: DW/Z. Abbany
তবুও বড় স্বপ্ন
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আরবের শীর্ষ দুই ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে আন-নাজাহর পরিচালকরা৷ যদিও সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কয়েকগুণ কম বাজেট নিয়েই চলছেন তারা৷ তবে আন-নাজাহর কমপ্লেক্স কিন্তু বেশ আধুনিক আর দৃষ্টিনন্দন৷ যেমনটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ফিলিস্তিনের কাঁচা বাজার
এটি ফিলিস্তিনের একটি কাঁচা বাজার৷ কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ী আর বাসিন্দারা প্রায়ই ইসরায়েলি সৈন্যদের তল্লাশীর মধ্যে পড়েন বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
কানাফে বা কুনাফার স্বাদ
ফিলিস্তিনের একটি রেস্টুরেন্টের ছবি৷ সেখানে বেশ জনপ্রিয় কানাফে৷ যা কুনাফা নামেও পরিচিত৷ এটি মূলত এক ধরনের মিষ্টান্ন যা শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই সমান জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
অদৃশ্য সীমান্ত
ফিলিস্তিনের ব্যস্ত কোন বাজার বা পথ ধরে হাটতে গিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন ইসরাইলে৷ যেমন এই মার্কেটটি৷ এর এক পাশে ফিলিস্তিন অন্য পাশে ইসরায়েল৷ তবে ইসরায়েল অংশে ট্যাংক কিংবা ভারি যানবাহন নিয়ে সবসময় প্রহরায় থাকে সেনারা৷