ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ? গণমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ছবি: Artur Widak/picture-alliance / NurPhoto
বিজ্ঞাপন
তাদের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরায়েলের ঘোর বিরোধী সৌদি আরব। তা সত্ত্বেও কি ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করল সৌদি প্রশাসন? এই প্রশ্নেই সরগরম বিশ্বের গণমাধ্যম। কারণ, ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোববার দেশের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তার পাশাপাশি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন এবং সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সৌদি আরব অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছে।
সোমবার আচমকাই ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গালান্ট গণমাধ্যমে জানান, রোববার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে সৌদি রাজার সঙ্গে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও। সম্প্রতি ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে মধ্য প্রাচ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামেরিকা। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে আরব আমিরাত এবং বাহারাইনের। যা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। ফিলিস্তিন এর কড়া সমালোচনা করেছে। তারই মধ্যে সৌদি আরবে নেতানিয়াহুর সফর বিতর্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব সোচ্চার এবং সে কারণেই ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো রকম কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না সৌদি। তা হলে আচমকা কেন নেতানিয়াহু সৌদি গেলেন? ইসরায়েলের বক্তব্য রোববার প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে গিয়ে খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।
ছবি: Reuters/T. Brenner
8 ছবি1 | 8
সৌদি অবশ্য এ কথা মানতে রাজি হয়নি। দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান জানিয়েছেন, ইসরায়েলেরদাবি একেবারে মিথ্যা। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে অ্যামেরিকার। কিন্তু সেখানে ইসরায়েল ছিল না। বস্তুত, নেতানিয়াহুও বৈঠক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
গণমাধ্যমের হাতে অবশ্য একটি ডিটেল এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গাল্ফস্ট্রিম চারের একটি প্রাইভেট জেট রোববার গ্রিনিচ সময় বিকেল ৫টা ৪০মিনিটে ইসরায়েলের রাজধানী থেকে উড়ে ৬টা ৩০মিনিটে সৌদি আরবে পৌঁছেছিল। আবার গ্রিনিচ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে তা সৌদি থেকে রওনা হয়ে ইসরায়েলে ফিরে আসে। সৌদির যে শহরে ফ্লাইটটি পৌঁছেছিল, সেখানেই ছিলেন সালমান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে মার্কিন বিদেশ সচিবের বৈঠক হয়।
এদিকে পম্পেও সৌদি পৌঁছানোর পর গণমাধ্যমের সঙ্গীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকের এলাকায় কোনো গণমাধ্যমকে নিয়ে যেতে রাজি হননি তিনি।