এনডিএ-র বৈঠকে নেতা নির্বাচিত হলেন নরেন্দ্র মোদী৷ রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাবেন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার এনডিএ-র বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতা নির্বাচিত হলেন নরেন্দ্র মোদী৷ তার নাম প্রস্তাব করেন রাজনাথ সিং৷ অমিত শাহ, চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার তা সমর্থন করেন৷
তবে এদিন বারবার করে নরেন্দ্র মোদী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন৷ তিনি নিজে বারবার এনডিএ-র ভূয়সী প্রশংসা করেছেন৷ বালাসাহেব ঠাকরে, জর্জ ফৈার্নান্ডেজ, শরদ যাদবদের হাত ধরে যে এনডিএ-র যাত্রা শুরু হয়েছিল সেকথা বলেছেন৷
এতদিন দলে কিছুটা অবহেলিত নীতিন গড়করি প্রথম দিকে বলার সুযোগ পেয়েছেন৷ যোগী আদিত্যনাথ-সহ সব মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে ছিলেন৷ জোটের তরফে প্রথমে বলেছেন জেডিএসের কুমারস্বামী৷ তারপর চন্দ্রবাবু, নীতীশ, একনাথ শিন্ডে, অজিত পাওয়ার, চিরাগ পাসোয়ান, জিতনরাম মাঁঝি, অনুপ্রিয়া পাটিল, পবন কল্যাণ সকলেই বলেছেন৷
বৈঠক শেষ হওয়ার পর মোদী প্রথমে গেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়ি, তারপর মুরলী মনোহর জোশী হয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের কাছে গেছেন৷
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘মোদী যে এবার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন, সেই বার্তাই শুক্রবার বারবার দেয়ার চেষ্টা করেছেন৷ সবাইকে বলতে দেয়া, প্রবীণদের বাড়িতে গিয়ে আশীর্বাদ নেয়া, দলের নেতাদের গুরুত্ব দেয়া, মতৈক্যের ভিত্তিতে চলার কথা বলা, সবই সেই বার্তাই দিচ্ছে৷''
ভারতে নতুন সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলি অপেক্ষা করছে
পরপর তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু তার ও সরকারের সামনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷
ছবি: RAJAT GUPTA/EPA
বেকার-সমস্যা
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিকদের নিয়ে প্রকাশ করা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে সারা দেশের শহরগুলিতে ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৭ শতাংশ বেকার৷ গোটা ১২ রাজ্যে বেকারের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি এবং একটি রাজ্যে তা ৩০ শতাংশের বেশি৷ ফলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা নতুন সরকারের কাছে খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা
ভারতে ছোট ও মাঝারি শিল্প ১১ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়৷ কিন্তু ধীরে ধীরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা খারাপ হচ্ছে৷ ফলে সেখানে কর্মসংস্থান বাড়ছে না৷ চাপ গিয়ে পড়ছে কৃষি, নির্মাণ ও অনানুষ্ঠানিক খাতে৷ সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব বেশি বাড়ছে না, কাজের মানও বাড়ছে না৷ ফলে নতুন সরকারের সামনে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে চাঙা করার চ্যালেঞ্জ থাকছে৷
ছবি: Manish Kumar/DW
দক্ষ শ্রমিকের চ্যালেঞ্জ
বড় শিল্পগুলিতে অটোমেশন ও রোবট ব্যবহার বাড়ছে৷ সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমছে৷ এই অবস্থায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে৷ ফলে স্কিল ডেভলাপমেন্ট কর্মসূচি খুবই জরুরি৷ ভারতে এই কর্মসূচি চলছে৷ বণিকসভা সিআইআই-এর রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাহিদা মেটাতে গেলে ৩০ কোটি দক্ষ শ্রমিক চাই৷ প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘‘দক্ষ শ্রমিক এখন বাজারে আসছে, কিন্তু তারা সংস্থার চাহিদা মেটাতে পারছে না৷’’
ছবি: AP
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ
গতবছর হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম-সহ বিভিন্ন জায়গায় ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘ ফাটা বৃষ্টির ফলে চকিত বন্যা হয়েছে৷ হিমাচলে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি৷ কিছুদিন আগে মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে একদিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়ে শহর ডুবেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে ভারত৷ বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতে অসুবিধায় পড়বে গরিবরা৷ অপুষ্টি বাড়বে৷
ছবি: DW
গরম বাড়ছে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরমের তীব্রতা বাড়ছে৷ দিল্লির তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে৷ দেশের একটা বড় অংশ তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়েছে৷ এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা নয় দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Sudipta Das/NurPhoto/IMAGO
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি গরিবদের জন্য বিমা প্রকল্প এনেছে৷ কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখনো অবহেলিত৷ গ্রামের দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সুযোগসুবিধার একান্ত অভাব৷ ভালো চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলি অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ ১৪০ কোটি মানুষের জন্য ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Nehal Johri/DW
জিনিসের দাম কমানো
এবারের লোকসভা ভোটে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ জিনিসের দাম নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছেন৷ ২০২৩-২৪ সালে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছিল এক দশমিক চার শতাংশে৷ এবারও গমের উৎপাদন আগেরবারের তুলনায় কম হবে বলে মিল মালিকদের সংগঠন জানিয়ে দিয়েছে৷ ডাল, তৈলবীজ, মশলার ক্ষেত্রেও একই সাবধানবানী শোনা যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় দাম কমানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Avijit Ghosh/REUTERS
কৃষকদের দাবি মেটানো
লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে৷ কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে৷ অর্থাৎ, কেউ যদি সরকারের বেঁধে দেয়া দামের থেকে কম দাম দিয়ে ফসল কেনে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী কৃষকদের এই দাবি মানতে এতদিন রাজি হননি৷ এবার কৃষকদের দাবি মানা বা তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করাটা নিঃসন্দেহে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Elke Scholiers/Getty Image
8 ছবি1 | 8
মোদী যা বলেছেন
মোদী বলেছেন, ‘‘এনডিএ এখন নতুন ভারত, বিকশিত ভারত, উচ্চাকাঙ্খী ভারতের সমার্থক৷ আগামী ১০ বছরে এনডিএ সরকার সুশাসন ও উন্নয়নে মন দেবে৷ নাগরিকদের জীবনে ন্যূনতম হস্তক্ষেপ করবে৷''
মোদীর দাবি, ‘‘বিরোধীরা বলার চেষ্টা করেছিল, আমরা এই নির্বাচনে হেরে গেছি৷ কিন্তু দেশের মানুষ জানে আমরাই জিতেছি৷ আমি দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করছি যে, আমরা মতৈক্যের ভিত্তিতে চলব৷ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না৷''
মোদী কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওরা ১০ বছর পরেও একশ আসনে পৌঁছাতে পারলো না৷ ২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২৪ মিলিয়ে ওরা যত আসনে জিতেছে, তার থেকেও এইবার বিজেপি বেশি আসনে জিতেছে৷''
এবার এনডিএ সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি পায়নি৷ তারা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ৩০টি আসন কম পেয়েছে৷ এরপরই বিরোধীরা বিশেষ করে কংগ্রেস বলে, এটা মোদীর নৈতিক পরাজয়৷ তারই জবাব দিলেন মোদী৷
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা
শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন মোদী৷ তারপর সাংবাদিকদের মোদী জানান,, ‘‘আমি এটুকু বলতে পারি, আগে উন্নয়নের যে গতি ছিল, আগামী পাঁচ বছরেও তা বজায় থাকবে।’’
মোদী বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি আমাকে ডেকেছিলেন। সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি তাকে বলেছি, আগামী ৯ তারিখ, রোববার বিকেলে শপথগ্রহণ হলে ভাল হয়। তার মধ্যেই মন্ত্রীদের তালিকা আমি রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়ে দেব।’’