প্যাকেটেই ময়দা পাওয়া গেলে আর গম ভাঙানোর প্রয়োজন কী! চালের জন্যও আর ঢেঁকির প্রয়োজন নেই৷ নেদারল্যান্ডসে আজও উইন্ডমিলে গমসহ একাধিক শস্য ভাঙিয়ে ময়দা তৈরি করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
শস্য ভাঙানোর কাজে উইন্ডমিল
03:23
ক্লাসের বন্ধুরা যখন সপ্তাহান্তে ফুটবল মাঠ ও পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন কুন হেইকোপ উইন্ডমিলে চলে যায়৷ ১৬ বছরের এই কিশোর পড়াশোনার পাশাপাশি বেলজিয়াম সীমান্তের কাছে ডনখেন শহরে প্রায় ১৩০ বছর পুরানো একটি মিলে হেংক ডেমুটের কাছে মিলের কর্মী হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷
কুন নিয়মিত কাজগুলি এর মধ্যেই শিখে ফেলেছে৷ প্রথমে পতাকা উত্তোলন করতে হয়৷ যার অর্থ, মিলার বাড়িতেই রয়েছেন৷ তারপর ডানাগুলিতে তেল লাগাতে হয়৷ কয়েকশ' বছর ধরে শুকরের চর্বি দিয়েই সেই কাজ করা হচ্ছে৷ সবার শেষে পাল তুলতে হয়৷ কুন বলে. ‘‘বন্ধুরা এখানে আমার কাজ খুব পছন্দ করে৷ তবে তারা সবকিছু ঠিকমতো বুঝতে পারে না৷ বোঝানোর চেষ্টা করলে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে৷''
ক্লান্তিকর হলেও উইন্ড মিল নেদারল্যান্ডসের প্রতীক৷ গোটা দেশে প্রায় ১,০০০ উইন্ডমিল রয়েছে৷ প্রায় প্রত্যেকটি চালু রয়েছে, তবে শুধু পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়৷ আগের মতোই সেখানে শস্য ভাঙানো হয়, করাত যন্ত্র চালানো হয় অথবা পানি পাম্প করে নালায় ফেলা হয়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, ভবিষ্যতে এই সব মিল চালানোর জন্য যথেষ্ট মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না৷ যেমন মিল-মালিক হেংক ডেমুট বলেন, ‘‘আজকাল শুধু অবসরপ্রাপ্তরা তাদের অবসর সময়ে এই কাজ করেন৷ এখনো মিলগুলি চালু রাখা যাচ্ছে৷ ১০, ১৫ বা ২০ বছর পর আমাদের সত্যি সমস্যা হবে৷''
দানাযুক্ত পাউরুটি কেন খাবেন?
জেলি দিয়ে ময়দার তৈরি মচমচে সাদা টোস্ট কিংবা ডিম ভাজি বা মুরগি ভুনা দিয়ে গরম পরোটা খেতে কতটা সুস্বাদু তা কে না জানে? কিন্তু নিয়মিত সাদা আটার তৈরি রুটি খেলে যে আয়ু কমতে পারে তা কি জানেন?
ছবি: picture-alliance/ ZB
জার্মানদের যেমন পছন্দ
জার্মানরা পাউরুটি খেতে খুব ভালোবাসে৷ অনেকে তো তিন বেলাই রুটি খায়৷ একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে একটি জার্মান পরিবারে গড়ে ১৮ লাখ টন রুটি কেনা হয়েছে৷ এর মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগ ছিল মেশানো আটার রুটি, ২০ ভাগ সাদা বা টোস্ট রুটি৷ আর যা কিনা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত সেই হোলমিল বা পুরো শষ্যদানাযুক্ত পাউরুটি ছিল মাত্র ১১ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/Denkou Images
সাদা রুটি নয় কেন!
সাদা আটার রুটি সম্পর্কে বলা হয় ‘‘ইয়ে হেলার ডাস ব্রোট, ডেস্টো শ্নেলার বিস্ট ডু টোট-’’এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, ‘‘আপনি যত বেশি সাদা রুটি খাবেন, তত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন৷’’ আসলে এর মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে, বেশি দানাযুক্ত ও ভুষিসহ রুটি খেলে বেশিদিন সুস্থ থাকা যায়৷ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এই তথ্যটি জানিয়েছেন খাদ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষক দল৷
ছবি: Fotolia/Viktor
সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা জানান, রুটি দেখতে বাদামি বা কালো হলেও এতে কতটা শষ্যদানা বা বিচি রয়েছে তা অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে বেকারি কর্মীদের কাছ থেকে৷ কারণ, অনেক সময় কালো বা বাদামি রুটি গুড় বা অন্যন্য ফলের রস মিশিয়েও রং করা হয়৷
ছবি: Rasha
হাতে গড়া রুটি
ঘরে রুটি বা পরোটা তৈরি করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন গমের আটা থেকে ভুষি বের করে ফেলা না হয়, কারণ, ঐ ভুষিতেই থাকে খাদ্য উপাদান, যা হার্ট অ্যাটাক, ডায়েবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে শরীরের উপকার করে৷
ছবি: picture-alliance/Photocuisine
‘ওটমিল’
ওটমিলে রয়েছে যথেষ্ট প্রোটিন ও অতিরিক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড , যা পেটের সমস্যা বা কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে৷ যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিতই ওটমিল পানি দিয়ে মেখে খেতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Printemps
দানাযুক্ত পাউরুটি ও সিরিয়াল
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৯০ গ্রাম দানাযুক্ত পাউরুটি খাওয়া উচিত৷ তাছাড়া দানাযুক্ত সিরিয়ালও খাওয়া উচিত, কারণ তাতে থাকে প্রোটিন, মিনারেল, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামসহ প্রয়োজনীয় নানা উপাদান৷ জানান জার্মানির খাদ্য বিষয়ক এক্সপার্ট জিলকে রেস্টেনমায়ার৷
ছবি: Fotolia
ওজন কমায়
দানাযুক্ত রুটি যে শুধু স্বাস্থ্যসম্মত বা খেতে ভালো কিংবা রসালো, শুধু তা-ই নয়৷ এসব রুটি ওজন কমাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি যথেষ্ট ফাইবার থাকার কারণে অল্প খেলেও পেট ভরে৷ তাই দানাযুক্ত রুটি ফিগার সচেতনদের জন্য খুবই উপকারি৷ সম্প্রতি এ তথ্যটি জানা গেছে মার্কিন গবেষকদের কাছ থেকে৷
ছবি: Fotolia/rico287
নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন না!
নিয়মিত সাদা রুটি খাওয়ার পরিবর্তে কয়েকদিন দানা ও খোসাযুক্ত রুটি খেয়ে দেখুন, শরীর এবং চেহারার পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন৷ তাছাড়া দানাযুক্ত পাউরুটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব ধীরে ধীরে বাড়ে, যা ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য খুবই জরুরি৷ যদিও চালের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই জানি যে, সাদা চালের চেয়ে সেদ্ধ বা ঢেকিছাঁটা চাল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
8 ছবি1 | 8
খোদ নেদারল্যান্ডসেরও অনেক মানুষ মনে করেন, যে মিলগুলি শুধু লোক দেখানো৷ আটা-ময়দা তো সুপারমার্কেট থেকে আসে! কেউ বলেন, সেখানে যে ময়দা কেনা যায়, জানতামই না৷ কারো মতে, এটা সহজে পাওয়া গেলেও মিলের ময়দার স্বাদ হয়ত ভালো৷
লেন লাখারভেয়ার্ফ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয়৷ ওইস্টারভেইক শহরে তাঁর মিল থেকে তিনি গোটা এলাকার বেকারিতে নানা ধরনের ময়দা সরবরাহ করেন৷ মিল মালিক হিসেবে লেন লাখারভেয়ার্ফ, ‘‘মিলের পাথর যখন গান গায়, যেমনটা আমরা বলে থাকি এবং ময়দা যখন হালকা ও বালুর মতো হয়, তখন বুঝি যে মান ভাল হয়েছে৷''
পর্যটকরাও অবশ্য এই চিরায়ত প্রক্রিয়া দেখতে পারেন৷ যেমন স্পেন থেকে একদল পর্যটক সেটা দেখতে এসেছেন৷ তাঁদের একজন বললেন, নেদারল্যান্ডস উইন্ডমিলে ভরা, এ কথা শুনেই আমরা এখানে এসেছি৷
উইন্ডমিল ভবিষ্যতেও তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু সেখানে ময়দা তৈরি করে রুটি কারখানায় সরবরাহ করা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ কুন হেইকোপ-এর মতো তরুণরা তা চালু রাখতে এগিয়ে আসবেন কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই৷
গুনার ক্যোনে/এসবি
বিজ্ঞানে নেদারল্যান্ডসের সাত অবদান
টিউলিপ, চিজ এবং উইন্ডমিল৷ এগুলো দেখলে মনে হবে নেদারল্যান্ডস আসলে অনেক শান্ত এবং ঐতিহ্যবাহী এক দেশ৷ শুধু কি তাই? বিজ্ঞানেও সেদেশের অবদান অনেক৷ চলুন দেখে নিই৷
ছবি: ESA
ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে
ডুবতে শুরু করলে আপনি কী করবেন? পানির উপর নতুন শহর কি গড়বেন? ২০০৯ সালে ডাচ বিজ্ঞানীরা ভাসমান শহরের ধারনা সৃষ্টি করেন৷ ডেল্টাসিন্কের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এমন ভাসমান শহরের উপর পনের তলা পর্যন্ত উঁচু বিল্ডিং এবং রাস্তাঘাটও তৈরি সম্ভব৷
ছবি: Floating City Project/DeltaSync
গবেষণাগারে মাংস তৈরি
এই মাংসটুকুর দাম তিন লাখ পাঁচ হাজার ইউরো! এবং এটুকু দিয়ে বড়জোর একটা বার্গার বানানো যাবে৷ হ্যাঁ, এটাই সত্যি৷ মাসট্রিট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে ২০১৩ সালে তৈরি করা হয়েছে এই কৃত্রিম মাংস৷ গবাদিপশুর স্টেম সেল ব্যবহার করে এই মাংস তৈরি করা হয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে এই মাংস, যদি অবশ্যই এর দাম কমিয়ে আনা যায়৷
ছবি: David Parry/PA Wire
অথবা আমরা ঝিঁঝিঁ পোকা খেতে পারি...
হুম, কীটপতঙ্গ খাওয়ার চল শুরুর দিক থেকেও এগিয়ে আছে নেদারল্যান্ডস৷ এক গবেষণায় জানা গেছে, ১০০ গ্রাম কীটপতঙ্গে ষাট গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা একই পরিমান মুরগির মাংসের চেয়ে দ্বিগুন৷ সে দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের কীটপতঙ্গে খাওয়া যাবে, আর কোন ধরনেরটা খাওয়া যাবে না - সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/G. Fischer
কিংবা মীলওয়ার্ম
যদি আপনি ঝিঁঝিঁ পোকা পছন্দ না করেন, তাহলে এমন মীলওয়ার্ম বেছে নিতে পারেন৷ ওয়েজিনেঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিদিনের মেন্যুতে এখন ঝিঁঝিঁ পোকা এবং মীলওয়ার্ম যোগ করা হয়েছে৷ পরখ করতে চাইলে যেতে পারেন সেখানে৷ স্বাদ নাকি খারাপ না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নজরদারি যেখানে স্বাস্থ্যসেবা
নেদারল্যান্ডসের ভেইস্প গ্রামটিতে প্রবেশ করতে হয় গেট পেরিয়ে৷ সেখানে রয়েছে কমিউনাল স্কয়ার, থিয়েটার, বাগান এবং পোস্ট অফিস৷ তবে গ্রামটির বাসিন্দাদের চব্বিশ ঘণ্টাই নজরদারির মধ্যে রাখা হয়৷ সাদা পোশাকের তত্ত্বাবধায়করা সব সময় গ্রামের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেন৷ বাড়িঘরে দরজাও একটি করে৷ গ্রামটির বাসিন্দারা একেকটি ঘরে ছয় বা সাতজন করে দল বেঁধে থাকেন৷ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া মানুষদের এই গ্রামে চিকিৎসা দেয়া হয়৷
ছবি: Nursinghome Hogewey, Weesp
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি কেন্দ্র
অনেক বড় এক গবেষণা কেন্দ্র এটি৷ এখানে স্পেস মিশনের পরিকল্পনা, স্যাটেলাইট পরীক্ষা, এমনকি স্পেস সিস্টেম তৈরি পর্যন্ত সবই করা হয়৷