নেদারল্যান্ডসে অ্যানসোভি মাছ ধরতে ১৭ শতক থেকে এক পদ্ধতি চালু আছে৷ এই পদ্ধতিকে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়েছে৷
অ্যানসোভি মাছ ধরতে ১৭ শতক থেকে নেদারল্যান্ডসে এক বিশেষ পদ্ধতি চালু আছে৷ ফাইল ফটোছবি: View Stock/IMAGO
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে মাত্র একটি পরিবার এই পদ্ধতিতে মাছ ধরছে৷ কিন্তু আগের মতো আর অ্যানসোভি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঐ পরিবার এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে৷
এই পদ্ধতিতে নদীর মধ্যে বেড়া বসিয়ে মাছ ধরা হয়৷ কাঠের বেড়া তৈরি করেছেন ঐ পরিবারের সদস্য হেঙ্ক ফান শিল্ট৷
ছোটবেলায় তিনি এইভাবে মাছ ধরা শিখেছিলেন শিল্ট৷ তার পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এভাবে মাছ ধরছে৷
শিল্ট জানান, তারা একসময় বছরে সর্বোচ্চ সাত টন অ্যানসোভি ধরতেন৷ কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে পরিমাণ অনেক কমে গেছে৷ এ বছরও একই অবস্থা৷ এটা তার মাছ ধরার শেষ বছরও হতে পারে৷ সেটি হলে, এই পদ্ধতিতে মাছ ধরার সমাপ্তি ঘটবে৷
শিল্ট জানান, ‘‘এই পদ্ধতি হারিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে আছে৷ কয়েক বছর ধরে কিছু ধরা পড়ছে না৷ এই পদ্ধতিতে মাছ ধরে আমরা আর অর্থ আয় করতে পারছি না৷ তাই একসময় বন্ধ করে দিতে হবে৷ বিষয়টা কষ্টের৷’’
অ্যানসোভিরা কেন হারিয়ে গেছে তা স্পষ্ট নয়৷ ডাচ গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন৷
তবে শিল্ট সন্দেহ করছেন, কাছেই একটি বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠায় স্থানীয় ইকোসিস্টেম একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷
নেদারল্যান্ডসে মাছ ধরে নজর কাড়া এক পরিবার
04:24
This browser does not support the video element.
এখন একটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করছেন শিল্ট৷ এর আওতায় পর্যটকেরা তার মাছ ধরা দেখতে পারেন৷ এতে কিছু বাড়তি আয় হয় তার৷ বিক্রি করার মতো কোনো অ্যানসোভি এখানে নেই৷
শিল্টের স্ত্রী রিয়ান ফান ডর্ট ব্যার্গেন অপ সুম শহরে একটি পারিবারিক দোকান চালান৷ তিনি জানান, যখন অ্যানসোভি বিক্রি হতো, তখন মানুষ বাইরে লাইন ধরে থাকতো৷
দোকানের দেয়ালে থাকা ছবি বলছে, মাত্র কয়েক বছর আগেও অনেক অ্যানসোভি ধরা পড়তো৷
অ্যানসোভি মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন শিল্টের পরিবার ইল মাছ বিক্রি করেন৷ কিন্তু এতে লাভ কম হয়৷ ‘‘নেদারল্যান্ডসের সব জায়গায় ইল পাওয়া যায়৷ কিন্তু অন্তত তাত্ত্বিকভাবে বললে শুধু এখানেই অ্যানসোভি পাওয়া যায়,'' বলেন রিয়ান ফান ডর্ট৷
অ্যানসোভি মাছ ধরার প্রাচীন পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছ থেকে সমর্থনের আশা করছেন রিয়ান ফান ডর্ট৷
টোবিয়াস ডামারস/জেডএইচ
জাপানে বিলুপ্তির হুমকিতে পানকৌড়ি দিয়ে মাছ ধরা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীতে মাছ কমছে৷ এ কারণে পানকৌড়ি পাখি দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে বসেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
১৮তম প্রজন্মের মাছ-শিকারী
ইউইচিরো আদাচির কাজই মাছ ধরা৷ তবে জাল ফেলে বা বরশিতে নয়, তিনি মাছ ধরেন পানকৌড়ি দিয়ে৷ পানকৌড়ির প্রিয় খাবার মাছ৷ ইউইচিরো আদাচি তাদের সেই মাছ ধরারই প্রশিক্ষণ দেন৷হঠাৎ করে এই পেশায় আসেননি ইউইচিরো৷ তার পরিবারের আগের সতেরোটি প্রজন্ম এভাবেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছে৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
পানকৌড়ি বড় আপন
জাপানের গিফু এবং সেকি শহরের বুক চিরে বয়ে চলেছে নাগারা নদী৷ ইউইচিরো সেই নদীতেই পানকৌড়ি দিয়ে মাঝ ধরেন৷শৈশব থেকে এ পেশাতেই আছেন বলে পানকৌড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা খুব ঘনিষ্ঠ৷ পানকৌড়ির প্রসঙ্গ এলে ৪৮ বছর বয়সি ইউইচিরো তাই অবলীলায় বলেন, ‘‘আমার কাছে পানকৌড়ি হলো পার্টনার বা সঙ্গীর মতো৷’’
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
১৩০০ বছরের ঐতিহ্য উকাই
পানকৌড়ি পাখি দিয়ে মাছ ধরার এই কৌশলের জাপানি নাম উকাই৷জাপানিরা এই ঐতিহ্যকে ১৩০০ বছর ধরে রেখেছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উকাই পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে৷ এখন সারা জাপানে ইউইচিরোর মতো উকাই-কর্মী আছেন মাত্র ৫০ জন৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
পর্যটকদের আকর্ষণ
উকাই টিকে আছে মূলত পর্যটকদের কারণে৷ওপরের ছবিতে রাতের আঁধারে বিশেষ নৌকায় বসে জেলে নৌকা থেকে পানিতে নেমে পানকৌড়িদের মাছ ধরা দেখছেন পর্যটকরা৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
হারিয়ে যাচ্ছে আয়ু মাছ
উকাইয়ের আদর্শ সময় রাত৷ রাতের আঁধারে পানিতে নৌকার আলো পড়লে চঞ্চল হয়ে ওঠে আয়ু মাছ৷ আলোর কাছে এসে শুরু করে ছুটাছুটি৷ প্রশিক্ষিত পানকৌড়িদের তখনই ছেড়ে দেয়া হয় পানিতে৷ পানিতে ডুব দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে মাছ নিয়ে ফিরে আসে পানকৌড়ি৷ ইয়োইচিরো আদাচি জানালেন, আজকাল নদীতে আয়ু মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না৷ বন্যা রুখতে বাঁধ দেয়া হয়েছে নদীতে, পানিতে ফেলা হয়েছে নুড়ি পাথর৷ ফলে আয়ু মাছের টিকে থাকাই এখন দায়৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
বিরূপ পরিবেশ
পরিবেশ বিষয়ক নানা গবেষণা বলছে, নাগারা নদীর তাপমাত্রা এখন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি৷এমন তাপে আয়ু মাছের জীবন বিপন্ন৷ তাছাড়া বড় পাথর কমে যাওয়াও আয়ুদের খুব সংকটে ফেলেছে৷ গিফু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোরিহিরো হারাদা জানান, বড় পাথরের শ্যাওলা আয়ু মাছদের খুব প্রিয় খাবার৷ নাগারার তলদেশে নুড়ি পাথর বড় পাথরের স্থান নেয়ায় আয়ু মাছদের আর শ্যাওলা জোটে না৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
উশোদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
পানকৌড়ির সহায়তায় যারা মাছ ধরেন, তাদের বলা হয় উশো৷ সারা দেশে মাত্র ৫০ জন উশো আছে, নদীতে মাছ ক্রমশ কমছে- এসব নিয়ে ভাবলে হতাশ হয়ে পড়েন আদাচি৷ মাছ যদি আরো কমে যায়, কী করবেন তখন? তার ছেলে তোইচোরো কি আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে? সে আশা ক্ষীণ বলে হতাশা নিয়ে আদাচি বলেন, ‘‘আমরা যদি আর মাছ ধরতে না পারি, সব উৎসাহ তাহলে মরে যাবে আর তাহলে তো আর এসব করার কোনো মানে থাকবে না৷’’