ভারতীয় অবরোধের মুখে নেপাল এবার বাংলাদেশ থেকে আকাশ-পথে বিমানের জন্য ‘জেট ফুয়েল' নেয়ার চিন্তা করছে৷ এছাড়া বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য সড়ক পথে নেপালে যায়, তা-ও আটকে আছে বাংলাবান্ধা সীমান্তে৷
বিজ্ঞাপন
नेपाल में त्राहिमाम
01:09
আন্তর্জাতিক ও নেপাল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, নেপালের নতুন সংবিধান নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে এ পর্যন্ত ৪০ জন নিহত হয়েছে৷ বলা বাহুল্য, ভারত নেপালের নতুন সংবিধানের বিরুদ্ধে৷ তাই নেপালে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ভারত৷ আর নেপালের চারপাশে ভারতের ভূমি সীমানা হওয়ায় নেপাল এখন চরম বিপাকে পড়েছে৷ বিশেষ করে নেপালের বিমান চলচল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেট ফুয়েলের অভাবে, যা এতদিন পর্যন্ত যেত ভারত থেকে৷ খবরটা এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও৷
নেপালের রাষ্ট্র পরিচালিত তেল কর্পোরেশনের মুখপাত্র দীপক বড়ুয়া জানান, ‘‘আমরা বাংলাদেশ থেকে জেট ফুয়েল আনার চিন্তা করছি৷ চীনও আমাদের বিবেচনায় আছে৷''
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ কম হলেও গুরুত্বহীন নয়৷ প্রতিবছর নেপাল বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন টাকার পণ্য নেয়৷ আর বাংলাদেশ নেপাল থেকে প্রায় সোয়া এক বিলিয়ন টাকার পণ্য আমানি করে৷ এ সব পণ্যের বেশিরভাগই ভোগ্যপণ্য৷ এই পণ্য ট্রাকযোগে ভারতের ওপর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়৷ ভারতের অবরোধের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের বাংলাবন্ধা সীমান্তে নেপালের জন্য পাঠানো পণ্য বোঝাই প্রায় দু'শ ট্রাক আটকে আছে বলে জানা গেছে৷
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি মতলুব আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতকে বাদ দিয়ে নেপালে জ্বালানি তেলসহ পণ্য সরবরাহ বাংলাদেশের পক্ষে কতটুকু সম্ভব হবে, তা ভাববার বিষয়৷ কারণ নেপাল ভারতের ভূমিবেষ্টিত৷ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার এবং এর জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন৷''
তিনি বলেন, ‘‘নেপালের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোনো অনুরোধ এখনো পাইনি আমরা৷ সরকারও পায়নি বা আমাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তারা কোনোরকম যোগাযোগ করেনি৷'' তবে তাঁর কথায়, ‘‘জীবনরক্ষাকারী এবং মানবিক পণ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশ নেপালকে সব ধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত৷ আমরা মনে করি, সেক্ষেত্রে ভারতও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না৷''
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ভেরেন্ডা
সারা বিশ্বে যে তেলের মজুদ আছে আগামী একশো বছরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের৷ তাই বিকল্প জ্বালানির সন্ধান চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাট্রোফা বা ভেরেন্ডা
ইংরেজি নাম জাট্রোফা৷ এর কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে৷ এর মধ্যে ‘জাট্রোফা কারকাস’ বাংলাদেশে ভেরেন্ডা নামে পরিচিত৷ তবে কেউ কেউ ‘সাদা মান্দার’ও বলেন৷ ভেরেন্ডার বীজ থেকে অনেকেই তেল বের করে সেটা কাজে লাগান৷ কাজটা একটু বড় পরিসরে করলে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
৩৭ লক্ষ টন তেল আমদানি
প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ৩৭ লাখ টন (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে৷ এর প্রায় ২৪ লাখ টনই ডিজেল, যার মোট আমদানি মূল্য ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ সরকার বেশি দামে ডিজেল কিনে কম মূল্যে জনগণকে সরবরাহ করে৷ ফলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হয় সরকারকে৷ তাই বায়োডিজেল উৎপাদনে ভেরেন্ডাকে কাজে লাগালে সরকারের লোকসান কমবে৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্রতি হেক্টরে ৩-৪ হাজার লিটার
হিসেবে দেখা গেছে, এক হেক্টর জমিতে জন্মানো জাট্রোফা থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩-৪ হাজার লিটার বায়োডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
সরকারি উদ্যোগ
ভেরেন্ডা বা জাট্রোফা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে৷ কমিটি ২০০৭ সালে তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিল করলেও আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
সামাজিক বনায়ন
বাংলাদেশে অতি সহজেই বায়োডিজেল উৎপাদন সম্ভব৷ কারণ সরকারের ‘সামাজিক বনায়ন’ কর্মসূচির মাধ্যমে জাট্রোফা রোপণ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে কারণ, বিকল্প জ্বালানির উৎসের সন্ধান পাওয়া না গেলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
বিকল্প জ্বালানির চাহিদা
সারা বিশ্বে যে তেলের মজুদ আছে তা আগামী একশো বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের৷ তাই অনেক দেশই বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে নেমেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে অনেকদিন ধরেই বায়োডিজেলের নাম উচ্চারিত হয়ে আসছে৷ বিশেষ করে অনেক দেশেই এখন জাট্রোফা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
নেপালকে কি বাংলাদেশের পণ্য ও জ্বালানি দিয়ে সাহায্য করা উচিত? আপনার মন্তব্য দিন নীচের ঘরে৷