নেপালে আজও লক্ষ লক্ষ কমবয়সি মেয়েদের সম্বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয়, যাদের অনেকেরই হয়ত ১৮ পেরোয়নি৷ তবে এর মধ্যে প্রেম করে বিয়ে করার সংখ্যাও কম নয়, কাটমান্ডু ভ্যালিতে দেখেছেন সোফি কাজিন্স৷
বিজ্ঞাপন
১৭ বছর বয়সি অনিশা ওয়াইবা ভক্তপুরের একটি কার্পেট ফ্যাক্ট্রিতে কাজ করে৷ পেটে ছ'মাসের সন্তান৷ রোজ সকাল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৮টা অবধি কাজ করে অনিশা আয় করে মাসে একশো ডলারের কাছাকাছি৷ ন'মাস আগে বিয়ে হয়েছে অনিশার৷ হবু বরের সঙ্গে দেখা হয় এই কারখানাতেই, এক বছর আগে, যখন অনিশা এখানে কাজ শুরু করে৷ স্বামী অনিশার চেয়ে এক বছরের বড়৷ অনিশা কখনো স্কুলে যায়নি৷ বাড়ি দক্ষিণ নেপালের তরাই অঞ্চলে৷ অনিশাকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়৷ তার স্বামীকেও বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়, জানাল অনিশা৷ বাচ্চা হলে, সে বাচ্চা নিয়েই ফ্যাক্ট্রিতে যাবে; সেখানে কাজও করবে, আবার বাচ্চার দেখাশোনাও করবে৷
নেপালে অনিশার মতো আরো লক্ষ লক্ষ মেয়ে আছে৷ এদেশে আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স ২০ হলেও, ৪১ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়৷ তার একটি কারণ: প্রেম৷ প্রেমের পর বিয়ে ছাড়া সহবাস নেপালি সমাজে সম্ভব নয়৷ কাজেই অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিক-প্রেমিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়৷
সংগীতা
১৮ বছরের তরুণী সংগীতা তামাং থাকে ভক্তপুর জেলার বাতিধুকুই গ্রামে, তার স্বামীর সাথে৷ ওদের বিয়ে হয়েছে বছর দেড়েক আগে, দেখা হওয়ার এক মাসের মধ্যে৷ সংগীতার স্কুলের পড়ার সেখানেই ইতি, ইতি তার নার্স হবার স্বপ্ন দেখার৷ বিয়ে করার পরে তো আর ইস্কুলে যাওয়া যায় না৷ স্কুল থেকেই সংগীতা শুনেছিল বিয়ের সরকারি বয়সের কথা, কিন্তু কি আর করে: ‘‘আমার বরকে এত ভালো দেখতে...!''
বরকে ভালো দেখতে বলে তাকে বিয়ে করা গেল৷ এর পর আবার ভয় যে, ছেলেপিলে না হলে গাঁয়ের লোক কী ভাববে-বলবে৷ তাই আজ সংগীতার পেটে ন'মাসের ছেলে৷
‘বাল্যবিবাহের অন্ত ঘটানোর জাতীয় কৌশল'
গত মার্চ মাসের শেষেই নেপালে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ' গ্রহণ করা হয়েছে, খোদ মন্ত্রীসভার অনুমোদন নিয়ে৷ টেকসই বিকাশের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে নেপালে বাল্যবিবাহের অন্ত ঘটানো হবে৷ কিন্তু বাল্যবিবাহ কেন ঘটে, তার কারণ হিসেবে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবসচিব ড. কিরণ রুপখতি বললেন, ‘‘বাবা-মায়েরা মেয়েদের অর্থনৈতিক বোঝা বলে গণ্য করেন৷'' কাজেই বিয়েই হলো একমাত্র পথ, যা মেয়েদের সামনে খোলা৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ তো একা নয়, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দারিদ্র্য ও জাত-পাত সংক্রান্ত নানা সমস্যা৷
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের যে ছবি আলোড়ন তুলেছে
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো এক বড় সমস্যা৷ দেশটিতে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আঠারো বছর বয়স পার হওয়ার আগেই৷ বার্তা সংস্থা গ্যাটি ইমেজেস-এর এক ফটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করছেন এমনই একটি বাল্যবিবাহের কিছু ছবি৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের বিয়ে
নওশিন আক্তারের বয়স ১৫ বছর৷ বাবার বাড়ি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে৷ বিয়ের দিনও সে ছুটে বেড়াচ্ছিল পড়শিদের বাড়ি বাড়ি৷ সেখান থেকেই ধরে এনে বিয়ের পিড়িতে বসানো হয় তাকে৷ তার বিয়ের, আইনি দৃষ্টিতে যা অবৈধ, কিছু ছবি থাকলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিয়ে বাড়িতে উৎসব
আগস্টের ২০ তারিখে বিয়ে হয় নওশিনের৷ নিজে বিয়ের অর্থ সে তেমন না বুঝলেও, পাড়াপড়শির এই বিয়ে নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না৷ বিয়ের দিন উৎসবের এই ছবি জানান দিচ্ছে একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরের বয়স নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের গোসল
বিয়ের দিন প্রকাশ্যেই গোসল করানো হয় নওশিন আক্তারকে৷ বাল্যবিবাহের জন্য তাকে প্রস্তুত করার অংশ এই গোসল৷ অনেকের সঙ্গে এএফপি-র আলোকচিত্রিও দেখেছেন সেই আচার৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিউটি পার্লারে নওশিন
বিয়ের জন্য সাজাতে নওশিনকে নেয়া হয়েছে বিউটি পার্লারে৷ বাংলাদেশের আনাচেকানাচে এ রকম পার্লারের সংখ্যা অনেক৷ ছবিতে কাপড় পরার সময় অপর এক নারীকে দেখছে নওশিন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
কনের মেকআপ
বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে নওশিনকে৷ বাংলাদেশে কনেকে বেশ রংচংয়ে মেকআপে সাজানো হয়৷ অনেক সময় চেহারার রং ফর্সা করার চেষ্টা করা হয় জোর করে, যা অনেকসময় দেখতে কিছুটা দৃষ্টিকটু হলেও ঐতিহাসিকভাবে চলে আসছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
গহনা ছাড়া কি বিয়ে হয়?
কনে নওশিনকে গহনা পড়িয়ে দিচ্ছেন তার আত্মীয়রা৷ বাংলাদেশে বিয়েতে সোনার গহনা এক অপরিহার্য উপাদান৷ কনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, সোনাদানা ছাড়া বিয়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে একরকম ভাবাই যায় না৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
জোর করে বিছানায় নেয়া হচ্ছে নওশিনকে
নওশিনকে তার এক আত্মীয় জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একটি বিছানায়, যেখানে তার ছবি তোলা হবে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে ২৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ পার হওয়ার আগে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ভিডিও-র জন্য ‘পোজ’
ভিডিও-র জন্য পোজ দিচ্ছে নওশিন আক্তার৷ তার বিয়ের মুহূর্তগুলো এভাবেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন ভাড়া করা আলোকচিত্রিরা৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
৩২ বছর বয়সি বর
নওশিনের বরের নাম মোহাম্মদ হাসামুর রহমান, বয়স ৩২ বছর৷ বিয়ের সন্ধ্যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক কনের সঙ্গে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন রহমান৷ এএফপি-র একজন বিদেশি আলোকচিত্রি সেই বিয়েতে উপস্থিত হতে পারলেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারেনি গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করতে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে নওশিন
বিয়ে শেষে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ১৫ বছর বয়সি নওশিন৷ পরিবারের সদস্যরা তাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের এ সব ছবি গোটা বিশ্বের আলোড়ন তুলেছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
10 ছবি1 | 10
তার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায় কাটমান্ডু থেকে গাড়িতে পাঁচ ঘণ্টা পথ গেলে৷ মাকওয়ানপুর জেলার পাহাড় আর ধানক্ষেতে ঘেরা দামন গ্রামের ১৭ বছরের মেয়ে সাজিতা তামাং শোনাল আর এক কাহিনি: ১৪ বছরে বিয়ে, সে-ও প্রেম করে নয়; ১৫ বছর বয়সে মা হয় সাজিতা৷ শোনো এক গাঁয়ের বধূ...৷
সংগীতা আর অনিশার গল্পের মতো কোনো গল্প কি আপনি জানেন? জানলে লিখুন নীচের ঘরে৷