ঢাকা থেকে নেপালগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নেপালে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে৷ এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
দুর্ঘটনার পর থেকেই নিয়মিত খবর পরিবেশন করে এলেও আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিল না৷ তবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছিল আহতদের মধ্যে অনেকেই হয়ত প্রাণ হারাবেন৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ অবশেষে ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷
রয়টার্স জানিয়েছে, মোট ৭১ জন আরোহীর বিমানটিতে ৩৩জন নেপালি, ৩২ জন বাংলাদেশি এবং একজন করে চীনা ও মালয়েশীয় নাগরিক ছিলেন৷ ৬৭ জন যাত্রী এবং চারজন কেভিন ক্রু মিলিয়ে ৭১ জনের মধ্যে ৫০ জনই মারা গেছেন বলে জানাচ্ছে রয়টার্স৷
বাংলাদেশের বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনা
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান৷ ৭১ জন আরোহী ছিল বিমানটিতে৷ তার মধ্যে অন্তত ৫০ জান মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
যারা ছিলেন বিমানে
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল থেকে রওনা হয়৷চার জন কেভিন ক্রু-সহ মোট ৭১ জন আরোহী ছিল ইউএস-বাংলার বোম্বার্ডিয়ার কিউ৪০০ বিমানটিতে৷ ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন নেপালের, ৩২ জন বাংলাদেশের আর একজন করে চীন এবং মালয়েশিয়ার৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
রহস্যজনক দুর্ঘটনা
নেপাল সময় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাভাবিক অবতরণের উদ্যোগই নিয়েছিলেন বৈমানিক৷ কিন্তু অবতরণের অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি উত্তর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ আকাশে দু’বার পাক খেতে দেখা যায় বিমানটিকে৷ তারপর কন্ট্রোলরুমের আপত্তি সত্ত্বেও তড়িঘড়ি অবতরণের উদ্যোগ নেন পাইলট৷ বিমানবন্দরের প্রাচীরে ধাক্কা দিয়ে বিমান নেমে পড়ে মাটিতে আর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন জ্বলতে শুরু করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
মার্কিন নাগরিক অ্যামান্ডা সামার্স কর্মসূত্রে এখন নেপালেই থাকেন৷ সোমবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে তিনি পরিষ্কার দেখেছেন ইউএস-বাংলার যাত্রীবাহী বিমানটিকে৷ বার্তাসংস্থা এপিকে তিনি বলেছেন, ‘‘বিমানটি এত নীচ দিয়ে উড়ছিল যে, আমার মনে হয়েছিল এক্ষুণি বুঝি পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খাবে৷ তারপর হঠাৎই প্রথমে একবার এবং তারপর আরেকবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/Xinhua
মোট কতজন নিহত?
৭১ জন আরোহীর মধ্যে বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ৫০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ ১২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ বাকি ৯ জনের বিষয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি৷ নিহতদের অনেকের দেহই পুড়ে প্রায় ছাই৷ আহতদেরও কারো কারো অবস্থা শঙ্কাজনক৷ মৃতের সংখ্যা বাড়তেই পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Sapkota
বাংলাদেশের ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনা
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো বিমানের যে কয়টি দুর্ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে এটিই ভয়াবহতম৷ এর আগে ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবতরণের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফকার এফ২৭-৬০০ বিমান বিমানবন্দরের কাছের জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়৷ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে আসা ঘরোয়া ফ্লাইটের বিমানটির ৪৯ জন আরোহীর সবাই মারা যান৷ কাঠমান্ডুর দুর্ঘটনা ১৯৮৪ সালের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shreshta
5 ছবি1 | 5
এর আগে সোমবার এ দুর্ঘটনার পর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইউএস-বাংলার জনসংযোগ শাখার জিএম কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে কাঠমন্ডুগামী একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ার খবরটি তাঁরা জানতে পেরেছেন৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা৷
৬৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ইউএস-বাংলার বোম্বার্ডিয়ার কিউ৪০০ বিমানটি৷ কাঠমান্ডু পোঁছানোর আগ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই চলেছে বিমান৷ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবতরণের অবতরণের অনুমতিও দিয়েছিল৷ কিন্তু রয়টার্সকে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজ কুমার ছেত্রী জানান, অনুমতি পাওয়ার পরই পাইলট জানান, তিনি বিমান নিয়ে উত্তর দিকে এগোতে চান৷
কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে পাইলট বলেন, ‘‘না৷’’ পরক্ষণেই বিমানবন্দরের উত্তর-পূর্ব দিকে দু’বার পাক খেতে দেখা যায় বিমানটিকে৷ট্রাফিক কন্ট্রোলার জানতে চান, ‘‘সব ঠিক আছে তো?’’ পাইলটকে বলতে শোনা যায়, ‘‘হ্যাঁ৷’’
কিন্তু তখন ‘অ্যালাইনমেন্ট’ ঠিক না থাকায় বিমানটির অবতরণে ঝুঁকি ছিল৷ সেকথা জানানোও হয় পাইলটকে৷ তা সত্ত্বেও দ্রুত অবতরণ শুরু করে বিমানটি এবং কয়েক মুহূর্ত পরই বিমানবন্দরের প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে নেমে পড়ে৷ প্রাচীরের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে আগুন লেগে যায় বিমানে৷
বাংলাদেশের বিমান ভেঙে পড়ল
01:47
এর আগে নেপাল সরকারের মুখপাত্র নারায়ণ প্রসাদ দুয়াদি এএফপিকে জানান, বিমানের ধ্বংস হয়ে যাওয়া অংশ থেকে তাঁরা মৃতদেহও উদ্ধার করেছেন৷ তবে কয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তা তখনো জানা যায়নি৷
এপি-কে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটিকে তিনি খুব কম উচ্চতায় উড়তে দেখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিমানটি এত নীচ দিয়ে উড়ছিল যে আমার মনে হয়েছিল এক্ষুণি বুঝি পাহাড়ে গিয়ে ধাক্কা খাবে৷ তারপর হঠাৎই প্রথমে একবার এবং তারপর আরেকবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই৷’’
দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের উদ্ধারকর্মী এবং দমকলকর্মীরা ছুটে আসেন৷ এরপর ধোঁয়ায় ঢাকা বিমান থেকে আহত যাত্রীদের বের করে হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়৷
কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে এর আগেও অবতরণের সময় বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে৷ ২০১২ সালে এক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছিলেন৷ এছাড়া ২০১৬ সালে বিমান পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হলে ২৩ জন মারা যায়৷
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷