1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেপালে সমলিঙ্গের বিবাহ: দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মাইলফলক

৫ ডিসেম্বর ২০২৩

সমকামী বা সমলিঙ্গের বিয়ের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নেপাল৷ এক দম্পতির বিয়ের স্বীকৃতি এই অঞ্চলের এলজিবিটিকিউ আন্দোলনকারীদের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে৷

সুরেন্দ্র পাণ্ডে ও মায়া গুরুংকে
বিয়ের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সুরেন্দ্র পাণ্ডে ও মায়া গুরুংকেছবি: Subash Shrestha

গত নভেম্বরে সুরেন্দ্র পান্ডে ও মায়া গুরুংয়ের বিয়ে নেপালে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে৷ দেশটিতে সমলিঙ্গের বিবাহ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম দম্পতি তারা৷ শুধু তা-ই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এটি প্রথম এমন ঘটনা, যা এলজিবিটিকিউ আন্দোলনকারীদের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা৷

২৭ বছর বয়সি পান্ডে সিসজেন্ডার বা জন্মগত পরিচয়ে পুরুষ৷ অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সি গুরুং ট্রান্সজেন্ডার নারী৷ তবে নেপালের আইনগত পরিচয়ে তিনি একজন পুরুষ৷

পান্ডে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনগত এই স্বীকৃতি অর্জন শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর জন্য অবিস্মরণীয় এক বিজয়৷’’ এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নিজের কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি৷

গুরুং বলেন, ‘‘আমরা ন্যায়-বিচার পেয়েছি৷ এখন আমরা সম্পূর্ণ যুগল৷''

দীর্ঘ আইনি লড়াই

স্বীকৃতি আদায়ের এই লড়াই মোটেও সহজ ছিল না তাদের জন্য৷ আইনগত প্রক্রিয়ার জটিলতা পাশাপাশি ছিল সমাজ ও পরিবারের চাপও৷ ২০১৭ সালে পান্ডে ও গুরুং হিন্দু রীতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ কিন্তু স্বীকৃতি পান ছয় বছরের লড়াইয়ের পর৷ 

২৯ নভেম্বর পান্ডে ও গুরুং সমলিঙ্গের পরিচয়ে বিবাহের সনদ পেয়েছেনছবি: Subash Shrestha

২০০৭ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বিদ্যমান আইনের ধারা পরিবর্তন করে সমলিঙ্গের বিবাহের অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু সমলিঙ্গের বিয়ের স্বীকৃতি দেয়ার আইন পাস করতে ব্যর্থ হয় পরবর্তী সরকার৷

এরমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে আইন পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত সমলিঙ্গের বিয়ের জন্য একটি অন্তবর্তী নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশনা দেন৷

পান্ডে ও গুরুংয়ের আশা ছিল এতে নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজে এগোবে৷ কিন্তু জেলা আদালত ও আরেকটি উচ্চ আদালত তাদের বিয়ে নিবন্ধনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে৷ কারণ হিসেবে আদালত জানায়, সুপ্রিম কোর্টের রুলের পরও দেশের আইন বিপরীত লিঙ্গের বিবাহেরই শুধু স্বীকৃতি দেয়৷  

নিম্ন আদালত নেপালের সিভিল কোড বা দেওয়ানি বিধি অনুসারে রায় দেয়৷ এই বিধিতে বিয়ে হতে পারে শুধু নারী ও পুরুষ পরিচয়ের দুই ব্যক্তির মধ্যে৷ তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সব স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরে সমলিঙ্গের বিবাহ নিবন্ধনের অনুমতি রয়েছে৷

অবশেষে ২৯ নভেম্বর পান্ডে ও গুরুং সমলিঙ্গের পরিচয়ে লামজুং জেলার দরদি পৌরসভা থেকে বিবাহের সনদ নেন৷ পান্ডে বলেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য অনেক কিছুর দুয়ার খুলে দিয়েছে৷ যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সম্পত্তির মালিকানা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে শিশু দত্তক নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷''

এশিয়ায় এলজিবিটিকিউ+ মানুষদের জন্য লড়াই

13:45

This browser does not support the video element.

নেপালের এলজিবিটিকিউদের উৎসব

লামজুংয়ের স্থানীয় মানুষজন নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই যুগলের বিয়ে উদযাপন করেন৷  কাঠমান্ডুর অদূরে প্রাচীন নগরী কীর্তিপুরে এই বিয়ের স্বীকৃতি উদযাপন করেন এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মানুষেরা৷

এই উৎসবে অংশ নেয়াদের একজন ঘোষিত সমকামী আইনজীবী সুনীল বাবু৷ তার মতে এই স্বীকৃতি নেপালের সমাজের প্রগতিশীল পরিবর্তনের ইঙ্গিত৷

২০১৫ সাল থেকে নেপালের সরকার পাসপোর্টে লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে নারী, পুরুষের সাথে ‘অন্যান্য' শব্দটি যুক্ত করে৷ ২০২১ সালে আদমশুমারিতে ‘অন্যান্য' পরিচয় যুক্ত হয়৷ প্রায় তিন কোটি মানুষের মধ্যে দুই হাজার ৯২৮ জন তাদেরকে এই পরিচয়ে শনাক্ত করেছেন৷  

ডিডাব্লিউকে সুনীল বাবু বলেন, ‘‘নেপালের সমাজ এইক্ষেত্রে যথেষ্ট উদার ও ইতিবাচক৷’’ তার মতে এর ফলে গোটা নেপালে লিঙ্গ পরিচয়ের দিক থেকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা মিলবে৷ পান্ট জানান, নেপালে দুই শতাধিক সমলিঙ্গের ও ট্রান্সজেন্ডার বিবাহিত যুগল রয়েছেন, যারা এখন তাদের বিয়ের নিবন্ধনে এগিয়ে আসবেন৷

সেই সাথে আশেপাশের দেশগুলোতেও সমলিঙ্গের বিয়ের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় এর প্রভাব পড়বে বলে আশা তার৷ যদিও গত অক্টোবরে প্রতিবেশি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সমলিঙ্গের বিয়ের বিপরীতে রায় দিয়েছে৷

এলজিবিটিকিউ মানুষদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চান এই দম্পতিছবি: Subash Shrestha

বিরোধিতাও আছে

নেপালের এই যাত্রা একদিনে সম্ভব হয়নি৷ দিন দিন কমে আসলেও নেপালের রক্ষণশীলদের একটি অংশ এখনও সমলিঙ্গের বিয়ের বিপক্ষে৷

দেশটির রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র পার্টির চেয়ারপার্সন ও সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী কমল থাপা সমলিঙ্গের বিয়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, এর ফলে ‘বিয়ের পবিত্রতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের' লঙ্ঘন হবে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তি মানুষের প্রেম ও একসঙ্গে থাকার অধিকারের সমর্থন করি৷ কিন্তু যখন সমলিঙ্গের বিয়ের প্রসঙ্গ আসে সেটি আমাদের বিয়ের যে মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা তার বিরোধী৷ কারণ ঐতিহ্যগতভাবে তা একজন পুরুষ ও একজন নারীর পবিত্র মিলনকেই মূর্ত করে৷’’

গুরুং তার পরিবারের সমর্থন পেলেও পান্ডে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি সমর্থন পাননি৷ চার মাস আগে ‘মায়াকো পাহিচান' (ভালোবাসার পরিচয়) নামে একটি সংগঠন চালু করেছেন তারা৷ এলজিবিটিকিউ মানুষদের অধিকার আদায় ও লিঙ্গ পরিচয়ের দিক থেকে সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে তারা কাজ করতে চান এর মাধ্যমে৷

লেখানাথ পান্ডে/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ