নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের এক বছর পূর্ণ হলো৷ এক বছরেও ভূমিকম্পের ধকল কাঠিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি৷ পর্যটন শিল্প বিপর্যস্ত৷ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের অস্তিত্বই পড়েছে সংকটের মুখে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল ভূমিকম্পে এক রকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল নেপাল৷ এক বছরে সে দেশে স্বাভাবিক জীবন ফিরলেও জীবনধারণ সবার জন্য আগের মতো আর সহজ হয়ে ওঠেনি৷ বিশেষ করে পর্যটন শিল্প এবং পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই পড়েছেন বিপদে৷ ব্যবসা কমেছে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ৷ হোটেল মালিক থেকে কর্মী পর্যন্ত সবার আয়ই কমেছে আশঙ্কাজনক হারে৷
রাজধানী কাঠমান্ডুর অদূরের নাগরকোট অঞ্চলে গেলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ সেখানে যে হোটেলগুলোর সামনে এ সময়ে ঘুরে বেড়াতো অসংখ্য পর্যটক, এখন ঘুরছে কুকুর৷ পর্যটকদের ফেলে দেয়া খাবার খেয়েই বাঁচে কুকুরগুলো৷ এক বছর আগেও পর্যটক আসতো অনেক৷ কুকুরগুলো পর্যাপ্ত খাবার পেতো৷ এখন পর্যটক কম৷ খাবার আগের মতো পায়না বলে কুকুরগুলোও রোগা হয়ে গেছে৷
একটা মোটামুটি ব্যস্ত হোটেলে আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার রুপি আয় হতো, এখন সেই আয় নেমে এসেছে ৮ থেকে ৯শ' টাকায়৷ অনেকে তাই হোটেল ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবছেন৷
ধুঁকছে নেপাল, বাংলাদেশও শঙ্কায়
মঙ্গলবার আবার ভূমিকম্প হলো নেপালে৷ ক্ষয়ক্ষতি বেশি না হলেও বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের কিছু অংশেও লেগেছে ভূমিকম্পের ধাক্কা৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/U.S. Marine Corps/H. Vidana
অসহায় মানুষ
মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে আনুমানিক ৭৬ কিলোমিটার দূরে, মাউন্ট এভারেস্টের কাছের অঞ্চলের মাটি, ঘর-বাড়ি কেঁপে উঠতেই সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার এ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৪২ জন প্রাণ হারায়৷
ভূমিকম্প শুরু হতেই ঘরবাড়ি ছেড়ে সবাই চলে আসেন খোলা আকাশের নীচে৷ অনেকেরই আর নিজের ঘরে ফেরা হয়নি৷ নিমিষে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ঠিকানা এখন অস্থায়ী শিবির৷
ছবি: DW/A. Francis
চাপা পড়া মানুষ
বাইরে আসতে যাঁদের দেরি হয়েছে, তাঁদের অনেকেই আটকে পড়েন ভেঙা পড়া অট্টালিকার ইট-শুড়কির নীচে৷ চাপা পড়া একজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন নেপালের এক সেনাসদস্য৷
ছবি: Getty Images/J. Gratzer
পানির জন্য হাহাকার
এপ্রিলের সেই ভয়ংকর ভূমিকম্পে যে অঞ্চলগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল, ভক্তপুর তাদের একটি৷ যাঁরা বেঁচে গেছেন, এখন বেঁচে থাকার অন্যরকম এক লড়াইয়ে শামিল তাঁরা৷ ক্ষুধা নিবারণ করতে পারলেও, তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানি পাচ্ছেন না৷ পানিবাহী ট্রাক এলেই তাঁরা দল বেঁধে ছুটে যান ট্রাকের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Irham
এভারেস্ট আছে, শেরপা নেই
প্রতি বছর মে মাসের এই সময়টায় বিশ্বের নানা প্রান্তের পর্বতারোহীরা এভারেস্টের শৃঙ্গে উঠতে ছুটে যান নেপালে৷ কিন্তু ২৫শে এপ্রিলের ভূমিকম্পে এভারেস্টে ১৮ জন পর্বতারোহী মারা যাওয়ায় এভারেস্টে পর্বতারোহন আপাতত বন্ধ৷ বেসক্যাম্পগুলোতে তাই কোনো শেরপার দেখা নেই৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
বাংলাদেশেও আতঙ্ক
গত এপ্রিল মাসের মতো এবারের ভূমিকম্পের ধাক্কাও বাংলাদেশ টের পেয়েছে৷ দেয়াল ধসে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে৷ ছবির এই নারী কাঁদছেন স্বজন হারানোর বেদনায়৷
ছবি: Reuters
7 ছবি1 | 7
বিশাল তামাংও পর্যটক কমে যাওয়ায় নিজের দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার কথাও ভাবছেন৷ মারাত্মক ব্যবসা মন্দায় হতাশ হয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে দোকানটা বন্ধ করে এখন কাঠমান্ডু চলে যাওয়া উচিত৷ বড় শহরে গেলে কোনো-না-কোনো কাজ তো পাওয়া যাবে৷ কোনো একটা কাজ পেলে সংসারটা চালাতে পারবো৷''
পোখারায় একটি হোটেলে কাজ করেন শঙ্কর সন্তোষ পোখারেল৷ পর্যটক কমে যাওয়ায় তাঁর হোটেলটিরও খুব খারাপ অবস্থা৷ হতাশা থেকে দেশ ছাড়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন সন্তোষ৷ বলছিলেন, ‘‘এ বছর ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ৷ আমার বেতন এমনিতে খুব কম৷ চলতে হয় বখশিশের টাকায়৷ এখন আর আগের মতো টিপস পাই না৷ অবস্থার উন্নতি না হলে আমি হয়ত মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাবো৷ সেখানে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করবো৷''
এসিবি/ডিজি (ডিপিএ)
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের বিশ্ব ঐতিহ্য
২৫ এপ্রিল, ২০১৫ শনিবার নেপালে ৭.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় নেপালে থাকা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া সাতটি নিদর্শন৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
কাঠমান্ডু ভ্যালি
প্রায় ২২০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ভ্যালিতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা সাতটি নিদর্শন রয়েছে৷ ভূমিকম্পে সবগুলোই কমবেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে৷
ছবি: Imago
শম্ভুনাথ মন্দির কমপ্লেক্স
বৌদ্ধ অনুসারীদের কাছে এই মন্দির সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পবিত্র স্থান৷ সেখানে আছে একটি স্তূপ, কয়েকটি মন্দির ও আশ্রম৷ সেই স্তূপে গৌতম বুদ্ধের চোখ ও ভ্রু আঁকা রয়েছে, ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে৷ ভূমিকম্পে এই মন্দির কমপ্লেক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে নেপাল একীভূত হওয়ার আগে সেখানে অনেকগুলো রাজ্য ছিল৷ এ সব রাজ্যের রাজবাড়ির আশেপাশের স্থানগুলো দরবার চত্বর নামে পরিচিত৷ এর মধ্যে কাঠমান্ডু ভ্যালিতে অবস্থিত তিনটি দরবার চত্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে৷ কাঠমান্ডু দরবার চত্বর এর একটি (বর্তমান ছবি)৷ পরের ছবিতে ভূমিকম্পের পরবর্তী অবস্থা দেখতে পাবেন৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভূমিকম্পের পর...
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠমান্ডু দরবার চত্বরের মন্দির আর প্যাগোডাগুলো আর কখনও পুরোপুরি ঠিক করা যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. পিডি বালাজি৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভক্তপুর দরবার চত্বর
রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার পূবে অবস্থিত ভক্তপুর দরবার চত্বরের আগের ছবি এটি৷ ভূমিকম্প পরবর্তী অবস্থা দেখা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS/P. Gordon
ভূমিকম্পের পর...
এই হলো ভক্তপুর দরবার চত্বরের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/N. Shrestha
পাটান দরবার চত্বর
ললিতপুর জেলার এই দরবার চত্বরের মেঝে লাল ইট দিয়ে গড়া৷ কাঠমান্ডু ভ্যালির আদিবাসী ‘নেওয়ার’দের ‘নেওয়া’ স্থাপত্যের অনেক নিদর্শন রয়েছে সেখানে৷ ভূমিকম্পের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই চত্বরটিও৷ দেখুন পরের ছবিতে৷
কাঠমান্ডুতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে ৬২টি মিটার উঁচু এই টাওয়ারটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল৷ আঁকাবাঁকা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পুরো কাঠমান্ডুর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেত৷ কিন্তু ভূমিকম্পে টাওয়ারটি ধসে পড়েছে৷ সেই দৃশ্য দেখা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: imago
ভূমিকম্পের পর...
কে বলবে এটি একটি টাওয়ার ছিল!
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
চ্যাঙ্গু নারায়ণ মন্দির
এই হিন্দু মন্দিরটি নেপালের সবচেয়ে পুরনো মন্দির বলে পরিচিত৷ রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৮ কিলোমিটার পূবে অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়ায় এই মন্দিরটির অবস্থান৷ পঞ্চম ও দ্বাদশ শতাব্দীর নেপালি শিল্পকলার বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরে, ভূমিকম্পে যেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: imago
পশুপতিনাথ মন্দির
নেপালে হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র স্থান বলে ধরা হয় এই মন্দিরকে৷ ভূমিকম্পে এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷