‘নেপাল পর্বত’ প্রকাশনায় বিভিন্ন দেশের ‘প্রথমবার এভারেস্টজয়ীদের’ তালিকায় ২০১০ সালে এভারেস্ট জয়ী হিসেবে মুসা ইব্রাহীম কিংবা ২০১১ সালে এভারেস্ট জয়ী হিসেবে এম এ মুহিতের নাম নেই৷ এই নিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের ‘নেপাল পর্বত' প্রকাশনায় প্রকাশিত একটি তালিকায় বাংলাদেশি এভারেস্ট জয়ীদের নাম থাকা, না থাকা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিতর্ক৷ ২০১৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক বিশেষ সংখ্যায় ২০১২ সালের ২৫ মে প্রথম বাংলাদেশি এভারেস্ট জয়ী হিসেবে এম এ মুহিত এবং নিশাত মজুমদারের নাম প্রকাশ করেছে নেপাল পর্বত৷ ঐ বছর দু'জনেই নেপালের দিক থেকে এভারেস্ট জয় করেন৷ অথচ ২০১০ সালের ২৩ মে মুসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্ট জয় করলেও তাঁর নাম সে বছরের তালিকায় নেই৷ কিংবা এম এ মুহিতের ২০১১ সালের ২১ মে তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্ট জয়ের তথ্যও নেই প্রকাশনায়৷ নেপাল পর্বতে প্রকাশিত তালিকাটি স্ক্যান করে প্রকাশ করেছে বাংলা ওয়েবপোর্টাল প্রিয় ডটকম৷
ফেসবুকে এবং ব্লগে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ ফেসবুকে ব্লগার অণু তারেক রবিবার লিখেছেন, ‘‘এভারেস্ট জয়ের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত ২০১৩ সালের মে মাসে ‘নেপাল পর্বত' পত্রিকায় ছাপানো বিশ্বের সকল দেশের এভারেস্টজয়ী প্রথম নারী ও পুরুষের নামের তালিকায় বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী পুরুষ হিসেবে আব্দুল মুহিত এবং প্রথম নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের নাম আছে৷''
ফেসবুকে একই বিষয়ে সাংবাদিক আসিফ এন্তাজ রবি লিখেছেন, ‘‘...এম এ মুহিত ২০১১-তে এভারেস্ট গেছেন, ‘নেপাল পর্বত' স্মরণিকায় সেই কথা নেই৷''
সাংবাদিক সিমু নাসেরও ফেসবুকে একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘...খেয়াল করে দেখেন এই নামের তালিকায় মুহিত এবং নিশাতের নাম আছে ১৯.০৫.২০১২-এ৷ অথচ মুহিত প্রথম এভারেস্ট জয় করেছে ২০১১ সালে৷ তাহলে ২০১১ সালের হিসেবে মুহিতের নাম নাই কেন? কারণ এই লিস্টটা শুধুমাত্র নেপালের দিক দিয়ে যারা প্রথম পর্বত জয় করেছে তাদের লিস্ট৷ তাই এই লিস্টে, মুহিতের ২০১১ সাল আর মুসার নাম নাই৷ কারণ তারা সবাই তিব্বত-চায়না অংশ দিয়ে পর্বত জয় করেছে৷''
এভারেস্ট জয়ের ষাট বছর
১৯৫৩ সালে এডমান্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন৷ মানব জাতির ইতিহাসে তাঁরাই প্রথম পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে৷ আর ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম৷
ছবি: DIAMIR Erlebnisreisen GmbH
প্রথম জয়, প্রথম মৃত্যু
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের সর্বোচ্চ শেখরে পা রাখেন মুসা ইব্রাহীম (বামে)৷ সেই জয়ের খবরে আনন্দের বন্যা নামে বাংলাদেশে৷ আর ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মারা যান সজল খালেদ৷ এই ছবিঘরে মানবজাতির এভারেস্ট জয়ের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে৷ একেবারে সেই ১৯৫৩ সাল থেকে৷
ছবি: Musa Ibrahim
কোড ম্যাসেজ
‘‘স্নো কন্ডিশনস ব্যাড স্টপ অ্যাডভান্সড বেস এবানডন্ড মে টোয়েন্টিনাইন স্টপ অ্যাওয়েটিং ইমপ্রুভমেন্ট স্টপ অল ওয়েল’’ এই ম্যাসেজের অর্থ হচ্ছে: ‘‘হিলারি এবং তেনজিং ২৯ মে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করেছে৷’’ ১৯৫৩ সালের পহেলা জুন এই তথ্য লন্ডনে পৌঁছায়৷ এভারেস্টের সর্বোচ্চ শিখরে মানুষের পদচিহ্নের খবর শুনে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কে আগে চূড়ায় উঠেছিল?
নিউজিল্যান্ডের এডমান্ড হিলারি আর শেরপা তেনজিং নোরগে (ছবিতে বামে) এভারেস্ট জয়ের পর এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এই দু’জনের মধ্যে কে আগে চূড়ায় পা রেখেছিলেন তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক৷ নেপাল এবং ভারত এই জয় তাদের দাবি করে৷ তবে এভারেস্ট জয়ের কয়েক বছর পর হিলারি জানান, চূড়ায় ওঠার সময় তিনি তেনজিং এর থেকে কয়েক পা সামনে ছিলেন৷
ছবি: DW/S. Nestler
অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয়
হিলারি ও তেনজিং-এর সেই ঐতিহাসিক অভিযানের পরের তিন দশকে বহু পর্বতারোহী বিভিন্ন পথ ধরে এভারেস্টে উঠেছেন৷ ১৯৭৮ সালে সাউথ টাইরোলিয়ান রাইনহোল্ড মেসনার (ডানে) এবং অস্ট্রেলিয়ান পিটার হেবেলার (বামে) অক্সিজেনের বাড়তি জোগান ছাড়াই এভারেস্ট জয় করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দলে দলে এভারেস্ট জয়
১৯৯০ দশকের দিকে দল বেধে পর্বতারোহীরা এভারেস্ট জয় শুরু করেন৷ সেই সময় থেকে প্রতিবছর শত শত পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় উঠছেন৷ রেকর্ড বলছে, এখন অবধি কমপক্ষে ৬,০০০ বার সফলভাবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেছে মানুষ৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এভাবেই এভারেস্টের চূড়ার দিকে যাত্রা করেন পর্বতারোহীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চূড়ায় পর্বতারোহীদের ভিড়
সফলভাবে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে চূড়ান্ত পর্যায়ে অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে চারদিন সময় লাগে আর এই সময়টা আবহাওয়া অবশ্যই ভালো থাকতে হবে৷ সাধারণত একইসময়ে অনেক অভিযাত্রী চূড়ার দিকে যাত্রা করেন, কেননা সবাই আবহাওয়ার পূর্বাভাষের উপর নির্ভরশীল৷ ফলে একদিনে অনেক পর্বতারোহীকে চূড়ায় এভাবে ভিড় করতে দেখাটা স্বাভাবিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেরপারা পথ দেখান
শেরপাদের সহায়তা ছাড়া কারো পক্ষে এভারেস্টের চূড়া জয় করা কার্যত অসম্ভব৷ তাঁরা এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পথের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সদা তৎপর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৮০ বছরে এভারেস্ট জয়
এভারেস্ট প্রতি বছরই চলে রেকর্ড গড়ার এবং ভাঙার খেলা৷ এই বসন্তে আশি বছর বয়সি জাপানি বৃদ্ধ ইউচিরো মিউরা এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় পা রেখেছেন৷ এর আগে ২০১০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করেন জর্ডান রেমেরো৷ দুটোই রেকর্ড৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্ধার তৎপরতা
২০০৩ সালে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই ব্যক্তি৷ দশ বছর পর মানে এখন এভারেস্ট বেসক্যাম্প পর্যন্ত হেলিকপ্টারে যাতায়াত স্বাভাবিক ব্যাপার৷ এখন অবধি সর্বোচ্চ ৭,৮০০ মিটার উচ্চতায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
এভারেস্টে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এভারেস্টেরও ক্ষতি হচ্ছে৷ গত পঞ্চাশ বছরে সেখানকার বরফের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গর্বের এভারেস্ট
এভারেস্টের অধিকাংশ অংশই নেপালের আওতায় রয়েছে৷ ফলে এভারেস্টকেন্দ্রিক পর্যটন খাত থেকে বিপুল অর্থ আয় করে দেশটির সরকার৷ প্রতি বছরের ২৯ মে ‘আন্তর্জাতিক মাউন্ট এভারেস্ট দিবস’ উদযাপন করে নেপাল৷ ১৯৫৩ সালের এই দিনে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিল মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পর্যটক কমাতে অনাগ্রহী নেপাল
এভারেস্টের চূড়ায় আরোহনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন বিধিনিষেধ আরোপ করার পক্ষে নয় নেপাল৷ বরং প্রয়োজনীয় টাকা থাকলে যেকেউ চেষ্টা করতে পারে এভারেস্ট জয়ের৷
ছবি: DW/S. Nestler
বাংলাদেশের এভারেস্ট জয়
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম৷ এরপর আরো চারজন বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন৷ এদের মধ্যে দু’জন মেয়ে৷ আর ২০১৩ সালে চূড়া জয় করে নামার পথে ‘ডেথ জোনে’ মারা যান সজল খালেদ৷
ছবি: DIAMIR Erlebnisreisen GmbH
13 ছবি1 | 13
প্রসঙ্গত, মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয় নিয়ে ২০১০ সালে বাংলা ব্লগে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়৷ সচলায়তনে ব্লগার হিমু ‘নেভারেস্ট' শিরোনামে এই নিয়ে সিরিজ নিবন্ধ প্রকাশ করেন৷ এই বিষয়ে কয়েকমাস ধরে লেখালেখির পর ব্লগার আরিফ জিবতিকের একটি নিবন্ধে প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণ করে হিমু লিখেছেন, ‘‘আমি সন্তুষ্ট যে অবশেষে যুক্তি এবং বিশ্লেষণের আলোকেই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি, কোনো মিডিয়াগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেয়৷ ছবিগুলো যদি আরো আগে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হতো, তাহলে আরো আগেই এই বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো৷''
এদিকে, সাম্প্রতিক ‘নেপাল পর্বত' বিতর্কের প্রেক্ষিতে বর্তমানে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া সফররত মুসা ইব্রাহীম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘২০১০ সালের ২৩ মে চীনের তিব্বতের ‘নর্থ রুট' দিয়ে আমি এভারেস্ট জয় করেছি৷'' দেশে ফেরার পর এই বিষয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেবেন বলেও জানান মুসা৷