নেলসন ম্যান্ডেলা : কারামুক্তির ২০ বছর
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০দক্ষিণ আফ্রিকায় স্মরণ করা হয়েছে ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারির সেই মাহেন্দ্র্যক্ষণের কথা, যখন ২৭ বছরের বন্দিদশার পর কেপটাউনের পুবে ভিক্টর ভার্স্টার কারাগার থেকে মাথা উঁচু করে বেরিয়া আসেন নেলসন ম্যান্ডেলা৷ সূচিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসান৷ কারাগারের দোরগোড়ায় জমায়েত হয়েছিলেন বিশ্বের বহু দেশের সাংবাদিক৷ তাঁদেরই একজন সেদিন তাঁর ঐতিহাসিক রিপোর্টে বলেছিলেন: ‘‘ঐ যে ম্যান্ডেলা, মি: নেলসন ম্যান্ডেলা, মুক্ত এক মানুষ হিসেবে নতুন এক দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম পা রাখছেন৷''
এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর ম্যান্ডেলা উপস্থিত হন কেপটাউনের কেন্দ্রস্থলে৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর তখনকার স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলা ম্যান্ডেলা এবং তাঁর দল আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেস এএনসি-র মহাসচিব সিরিল রামাফসা৷ সেখানে তখন তিন হাজারেরও বেশি উত্তেজিত, উৎফুল্ল মানুষ তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত৷ ম্যান্ডেলা তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনাদের সামনে আজ আমি উপস্থিত কোন প্রফেট হিসেবে নয়, আপনাদের অর্থাৎ জনগণেরই বিনম্র এক সেবক হিসেবে৷ আজ এই যে আমি এখানে, আপনাদের অক্লান্ত আর বীরোচিত ত্যাগের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে৷ আমার জীবনের বাকি বছরগুলো আমি আপনাদের হাতেই সমর্পণ করছি৷''
এই ম্যান্ডেলাই বর্ণবৈষম্যহীন নতুন দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ ১৯৯৩ সালে দেশের শ্বেতকায় সংস্কারবাদী রাজনীতিক ফ্রেডেরিক ভিলেম দা ক্লার্ক-এর সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দেন ম্যান্ডেলা৷
ম্যান্ডেলার কারামুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি পালন করতে প্রতীক হিসেবে সেই ভিক্টর কারাগারের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন বৃহস্পতিবার তাঁর বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের সাথী আহমেদ কাথরাদা এবং এএনসি-র বেশ কয়েকজন নামি নেতা৷ পরে এএনসি, সংযুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতারা কারাগার ফুটবল মাঠে সমবেত প্রায় ৫০০০ মানুষের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন৷ ম্যান্ডেলা নিজে অবশ্য সেখানে যাননি৷
৯১ বছর বয়স্ক এই জননেতার ওপর বর্ষিত হয়েছে ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর প্রশংসার অবিরল ধারা৷ বর্ণবৈষম্যবাদ আপারটাইট-এর বিরুদ্ধে লড়াই-এর এক নামি ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বিশপ ডেসমন্ড টুটু তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এই দিনে৷ বলেছেন, নেলসন ম্যান্ডেলা যেদিন কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সেদিনই অবমাননার সমাপ্তি শুরু হবার অঙ্গীকার মিলেছিল৷ এই উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রের বিশেষ ক্রোড়পত্র৷ প্রচারিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা৷ বিশ্বের নেতৃবৃন্দও ম্যান্ডেলার প্রতি জানিয়েছেন অকৃত্রিম শ্রদ্ধা৷
প্রতিবেদক: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক, সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন