কথাটা নেই, কিন্তু থাকা উচিত ছিল: মিডিয়াসক্তি, যার বাহক হলো প্রধানত স্মার্টফোন৷ নয়ত স্পটিফাই, হোয়াটসঅ্যাপ, নেটফ্লিক্সের দুর্বার আকর্ষণ যে কবে নেশা হয়ে উঠেছে, তা অনেকেই খেয়াল করেন না৷
বিজ্ঞাপন
কাজ কিংবা অকাজে, অফিস কিংবা বাড়িতে, দিনে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করটা আজকাল প্রায় স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এক্ষেত্রে ‘নিয়মিত ব্যবহারকারী' আর ‘নেশাগ্রস্ত'-দের মধ্যে ফারাকটা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব৷
ক'ঘণ্টা ফোনে কাটাচ্ছেন, শুধু তার ওপরেই সেটা নির্ভর করে না৷ মিডিয়াসক্তি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে: প্রথমে কৌতূহল, হয়ত কোনো নতুন ভিডিও গেম একবার খেলে দেখা৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে হলো ‘এনজয়মেন্ট’ বা আনন্দ পাওয়া; তৃতীয় পর্যায়ে ‘হ্যাবিচুয়েশন' বা অভ্যেস হয়ে যাওয়া৷ চতুর্থ পর্যায়ে অপব্যবহার, অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত মিডিয়া ভোগ করা৷ আর শেষ পর্যায়ে হলো নেশা বা মিডিয়াসক্তি: তখন মানুষ তাদের বন্ধুবান্ধব বা অন্যান্য হবি অবহেলা করতে শুরু করে, এমনকি স্কুল-কলেজ বা অফিসেও যেতে চায় না৷ তখন সে সত্যিই নেশাখোর৷
ডিজিটাল ডায়েটিং কী, কেন করবেন ?
মোবাইলটি হাত থেকে রাখলেই যেন অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে – এমন আতঙ্ক আজকাল অনেকের মধ্যেই কাজ করে৷ এই ‘ডিজিটাল রোগ’ থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় জানিয়েছেন জার্মান প্রযুক্তিবিদ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ঘাড়ে ব্যথা
সর্বশেষ খবর, ই-মেল কিংবা স্যোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রাখার জন্য অনেকেই দিনের কয়েকটা ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন মোবাইল বা স্মার্টফোনে৷ নীচের দিকে তাকিয়ে এত দীর্ঘ সময় কথা বলার কারণে ঘাড়ে চাপ পরে এবং ব্যথা হয়, যা প্রথমদিকে সেভাবে বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে জটিল হয়ে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
মনোযোগ এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায়
যে ব্যক্তি দিনে দুই ঘণ্টা বা তার বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে তার অন্যদিকে মনোযোগ এবং ‘প্রোডাক্টিভিটি’ কমে যায়৷ শুধু তাই নয়, কোনো এক সময় এ অবস্থা থেকে ‘বার্নআউট’-ও শুরু হতে পারে৷ অনেকে ছুটিতে গেলেও মোবাইল ও ল্যাপটপ হাতছাড়া করতে চাননা, উত্তর দিয়ে থাকেন অ-দরকারি ই-মেলেরও৷ যদি তাই হয় তাহলে আর টাকা খরচ করে ছুটিতে না গিয়ে বাড়িতে থাকাই শ্রেয়৷ এমনটাই জানান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
যে কোনো ডায়েটিংয়ের মতো ডিজিটাল ডায়েটও খুব কঠিন৷ বিশেষ করে এই নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই নিজের ওপর নির্ভর করে৷ নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কোন ই-মেল বা মেসেজের উত্তর আপনি দিতে চান আর কোনটা চান না৷ ঠিক যেমন, ওজন কমাতে চাইলে কিছু খাবার থেকে নিজেকে দূরে থাকতে হয়, সেরকম ‘ডিজিটাল ডায়েটের’ ক্ষেত্রেও মোবাইলের মতো কিছু জিনিস বাদ দিতে হয়৷
ছবি: Imago/R. Kurzendörfer
দিনে ৫৩ বার!
মোবাইল অ্যাপের জন্য ৬০ হাজার মোবাইল ব্যবহারকারী নিয়ে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে মোবাইল ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি ১৮মিনিট অন্তর দিনে ৫৩ বার স্মার্টফোন ব্যবহার করেন৷
ছবি: picture alliance/Denkou Images
সবাইকে জানিয়ে দিন
জার্মান প্রযুক্তিবিদ আলেকজান্ডার মার্কোভিৎস জানান, ‘‘যারা সত্যিই ডিজিটাল ডায়েটিং করতে চান তারা সপ্তাহে একদিন মোবাইলটি বাড়িতে রেখে যান৷ আর হ্যাঁ, সে কথা আগে থেকেই বন্ধু আর পরিচিতদের জানিয়ে দিন, যাতে কিছু হারাবার কোনো ভয় বা আতঙ্ক না থাকে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gabbert
5 ছবি1 | 5
ঝুঁকি টিনেজারদেরই বেশি
জার্মান টিনেজাররা নাকি দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা অনলাইনে কাটায়, বলে একটি সাম্প্রতিক জরিপে প্রকাশ৷ তারা প্রধানত অনলাইনে যায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা গান শুনতে৷ কিন্তু সারাক্ষণ ‘ডিজিট্যালি কনেক্টেড' থাকার প্রচেষ্টা অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা কোনো ছবি বন্ধুবান্ধবরা ‘লাইক' করল কিনা, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করা; এত যে ‘ফলোয়ার' আছে, তারা হয়ত কোনো নতুন ছবি আপলোড হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে; অনেকে নাকি জিপ লক ব্যাগে করে শাওয়ারের নীচেও ফোন নিয়ে যায়৷
মিডিয়াসক্তির সঙ্গে অ্যালকহলে আসক্তির অনেক মিল আছে৷ দু'টোই ‘বিহেভিওরাল অ্যাডিকশন' বা আচরণগত আসক্তি৷ কিন্তু মদ্যপান ছাড়া যতটা সহজ, অনলাইনের অভ্যেস ছাড়া তার চাইতে অনেক বেশি শক্ত – কেননা মিডিয়া তো সর্বত্র৷ মিডিয়ার ব্যবহার কমাতে গিয়ে ভুক্তভোগীরা দেখেছে যে, তাদের ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম' হচ্ছে: ঘাম হচ্ছে, মাথা ঘুরছে বা অকারণে মেজাজ খারাপ হচ্ছে৷
অফলাইন
অনলাইন ছাড়াও যে একটা জীবন আছে, টিনেজারদের সেটা দেখানোই হল নিভিন্ন ‘অ্যাডিকশন প্রিভেনশন প্রোগ্রাম' বা ‘আসক্তি প্রতিরোধ কর্মসূচির' উদ্দেশ্য৷ তাদের মুখোমুখি কথা বলা শেখা দরকার, ‘ইমোজি’ ছাড়াই তাদের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারা চাই৷ সৃজনীশক্তির বিকাশের জন্যও যে সর্বক্ষেত্রে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের প্রয়োজন, এমন নয়৷
সাবধানবাণীটা শুধু টিনেজারদের জন্যই নয়৷ অনেক কোম্পানি আজকাল চায় যে, তাদের কর্মীরা দিনে বেশ কয়েক ঘণ্টা অফলাইন থাকেন৷ সারাটা দিন কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে, রাতে ঘুম ভালো হয় না, পরদিন মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায় না৷
মোবাইল, কম্পিউটার, রিমোট জীবাণুমুক্ত রাখতে যা করবেন
পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেরই মনে হয় সেখানে কত জীবাণু আছে৷ কিন্তু স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে লুকিয়ে থাকা হাজারো জীবাণু আমাদের অসুস্থ করতে পারে সেকথা কিন্তু মনে হয়না৷ জেনে নিন যন্ত্রগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার উপায়৷
ছবি: Phovoir/Colourbox
কম্পিউটার পরিস্কার
অফিসের কম্পিউটার সপ্তাহে একবার আর বাসার কম্পিউটার মাসে একবারই যথেষ্ট৷ পরিস্কার করতে কী-বোর্ডকে উল্টিয়ে দিন, এতে ভেতরে ধুলো-বালি, খাবারের কণা বা অন্য কিছু থাকলে বেরিয়ে যাবে৷ বিশেষ কাপড় বা ভেজা টিস্যু পাওয়া যায় তা দিয়ে কী-বোর্ড এবং কম্পিউটারের স্ক্রিন ধীরে ধীরে মুছে ফেলুন৷ তাছাড়া কাজ শুরুর আগে হাত দুটো ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ দিয়ে মুছে নিলেও কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার থেকে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়৷
ছবি: DW
মোবাইল এবং ট্যাবলেট
প্রতিদিন মাইক্রোফাইবার রুমাল বা কাপড় দিয়ে আপনার মোবাইল এবং ট্যাবলেটটি কোনো চাপ ছাড়া আস্তে আস্তে মুছে নিন৷ যন্ত্রগুলোতে থাকা ছোট ছোট ছিদ্রগুলো ‘টুথপিক’ দিয়ে খুব সতর্কতার সাথে পরিস্কার করে ফেলুন৷ এভাবে নিয়মিত পরিস্কার রাখলে ব্যাকটেরিয়া জমার কোনো সুযোগ থাকবেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
টেলিফোন
টেলিফোনের ডায়ালে যে শুধু জীবাণু জমে, তা কিন্তু নয়৷ ফোন কানে লাগিয়ে কথা বলার সময় কান এবং মুখ থেকে যাওয়া নানা ব্যাকটেরিয়া টেলিফোনে জমে৷ তাই সপ্তাহে একদিন টেলিফোন ভালো করে মুছতে হবে হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে৷ আর ছিদ্রগুলো সাবধানতার সাথে ‘টুথপিক’ দিয়ে মুছবেন৷
ছবি: picture-alliance/Asian News Networt
কম্পিউটারের মাউস
কম্পিউটারের মাউসেও জীবাণু জমে থাকে৷ সেজন্য পরিস্কার করার সময় মাউসের চাকাটি একটু ঘুরাতে থাকুন আর পরিস্কার করুন৷ পুরো মাউসটা ভালো করে মুছে নিলে কাজেরও অনেক সুবিধা হবে, যা পরে নিজেও লক্ষ্য করবেন৷
ছবি: DW/N. Steudel
টিভি রিমোট
প্রায় প্রতিদিনই সকলে কম-বেশি টিভি দেখে থাকেন এবং বাড়ির সকলেই টিভির রিমোটে হাত দেন৷ তাই মাসে অন্তত একবার রিমোটটি পরিস্কার করা উচিত৷ গ্লাস বা কাঁচ মোছার তরল খানিকটা কাপড়ে লাগিয়ে হালকাভাবে রিমোটটি মুছে তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন৷ আর কেউ যদি আরো ভালো করে মুছতে চান, তাহলে রিমোট থেকে ব্যাটারি বের করে ভেতরটাও পরিস্কার করা যেতে পারে৷