‘ক্ষুদ্রঋণের জনক’ মুহাম্মদ ইউনূসের গড়া একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷ মামলাকারীদের আইনজীবী জানিয়েছেন, নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া শোধ না করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের এক তৃতীয়াংশ শেয়ারের মালিক গ্রামীণ টেলিকম৷ এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মী দাবি করেছেন, প্রতিষ্ঠানটির লাভের অংশ কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি৷ প্রতিষ্ঠানটির দশজন বর্তমান ও সাবেক কর্মী গ্রামীণ টেলিকম এবং মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷ মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখায় ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেছিলেন৷
বাদীপক্ষের আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ জানিয়েছেন, গ্রামীণ টেলিকম গত দশকে ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা করলেও কর্মীদের তার কোনো শেয়ার দেয়নি৷ ‘‘শ্রম আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ ফোনের অবশ্যই নেট মুনাফার পাঁচ শতাংশ প্রতিষ্ঠানটির কর্মী এবং সরকারকে দিতে হবে’’, বলেন তিনি৷
এসডিজির ১৭ লক্ষ্য: পরামর্শক দলে ইউনূস, মেসি
জাতিসংঘের এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) কর্মসূচি শেষ হয়ে এসেছে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য)৷ আগে লক্ষ্য ছিল আটটি, এবার ১৭টি৷
এমডিজি থেকে এসডিজি
২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আটটি৷ এমডিজি বাস্তবায়নে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ৷ এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/ben_photos
কোনো দারিদ্র্য নয়
এসডিজির প্রথম লক্ষ্য বিশ্ব থেকে একেবারে চরম দারিদ্র্য দূর করা৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি করতে চায় জাতিসংঘ৷ বৈশ্বিক এই সংস্থার হিসাবে যাদের আয় দিনে সোয়া এক ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১০০ টাকা তারাই চরম দরিদ্র৷
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images
ক্ষুধা দূর
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষুধা দূর করতে হবে এবং গরিব ও নবজাতক শিশু সহ যেসব মানুষ সংকটের মধ্যে আছে তাদের জন্য নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.G. Farran
মা ও নবজাতকের মৃত্যু সংখ্যা
এক লক্ষ শিশু জন্মের বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ৭০ এর নীচে নামিয়ে আনতে হবে৷ আর এক হাজার শিশুর জন্মের বিপরীতে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা ১২-র নীচে নামাতে হবে৷ আর পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি এক হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে৷
ছবি: Fotolia/poco_bw
শিক্ষা
২০৩০ সালের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা
নারী ও মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরণের লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে৷ ব্যক্তিগত ও জনজীবনে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সব রকমের (যেমন মানব পাচার, যৌন নির্যাতন) নির্যাতন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/D. Reinhardt
বিশুদ্ধ পানি
বিশ্বের সবাই যেন নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে৷ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করতে হবে৷ নারী ও মেয়েদের জন্য মলমূত্র ত্যাগের স্থান ঠিক করার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
অন্য যেসব ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
এর মধ্যে আছে সাশ্রয়ী ও টেকসই জ্বালানি, আর্থিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অসমতা, নিরাপদ শহর, সম্পদ ভোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক সম্পদ, ইকোসিস্টেম, সুবিচার ও টেকসই উন্নয়ন৷ এ সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Fotolia/Ingo Bartussek
পরামর্শক গ্রুপে ইউনূস, মেসি, শাকিরা
এসডিজি কর্মসূচির পরামর্শক গ্রুপে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, লিওনেল মেসি, শাকিরা সহ আরও ১২ জন৷ এই গ্রুপের দায়িত্ব হলো এসডিজি কর্মসূচির উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা৷
9 ছবি1 | 9
আইনজীবী আরো বলেন, ‘‘২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল সময়কালে এটার বকেয়া হচ্ছে ১৩ দশমিক চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার আশি শতাংশ সমানভাবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান এবং সাবেক কর্মীদের দিতে হবে৷’’
গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান মামলা লড়বে৷ আশরাফুল হাসান নিজেও এ মামলার আসামী৷ গ্রামীণ টেলিকম যা মুনাফা করেছিল তা পুনরায় প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি দাবি করেন মামলাকারীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন৷
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়নি৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্রঋণ দিতে ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ তবে ২০১১ সালে ব্যাংকটির পরিচালকমণ্ডলী থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ অনেকের ধারনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাওয়ায় ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ ২০০৭ সালে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউনূস, যা নিয়ে হাসিনার সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়৷ ইউনূস অবশ্য পরবর্তীতে রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন৷
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাঁকে অপসারণের বিরুদ্ধে অবশ্য সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন ইউনূস, কিন্তু আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেননি৷ ২০১৩ সালে ইউনূস রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ‘হেট ক্যাম্পেইনেরও’ শিকার হন৷ তাঁকে তখন অনৈসলামিক এবং সমকামিতার বিস্তারক হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল৷