এবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর৷ অভিযোগ, তিনি ‘সরকারি' কর্মকর্তা হয়েও দেশের বাইরে থেকে ৫০ কোটি টাকা আয় করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ড. মুহাম্মদ ই্উনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ‘সরকারি কর্মকর্তা' হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিদেশ থেকে সম্মানী, পুরস্কার এবং বইয়ের রয়্যালটি বাবদ ৫০ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আয় করেছেন৷ তিনি এই আয়ের জন্য সরকারের অনুমতি নেননি৷ এর বিপরীতে তিনি ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা কর দেননি৷ এনবিআর-এর এই প্রতিবেদন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হয়৷
মুহাম্মদ ইউনূসের আরেকটি অর্জন
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় ইউনূসের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন জন বোয়েনার৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঝুড়িতে আরেকটি সম্মাননা যোগ হলো৷ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে নিজের দেশে বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ইউনূস৷
ছবি: Getty Images
সম্মাননা গ্রহণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় অধ্যাপক ইউনূসের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি (বামে)৷
ছবি: Getty Images
বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গ্রহণ করার পর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘সকলে আমার কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বলেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত৷ আমি এ সম্মান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে উৎসর্গ করলাম৷’’
ছবি: Getty Images
‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’
এর আগে ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেন ইউনূস৷ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ পান ড. ইউনূস৷ সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী এই সম্মাননা দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
অন্য উচ্চতায় ইউনূস
বলাইবাহুল্য, ইউনূস হচ্ছেন প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি নোবেল পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেছেন৷ গোটা বিশ্বে মাত্র সাতজন জীবদ্দশায় এই তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন৷ এরা হচ্ছেন নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, এলি উইসেল, অং সান সু চি, মাদার টেরেসা এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষ বিশেষ করে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ ইউনূস৷ আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের জনক বলা হয় তাঁকে৷ গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ ক্ষুদ্রঋণের এই ধারণা অধ্যাপক ইউনূসকে গোটা বিশ্বেই সম্মানজনক পরিচিতি এনে দিয়েছে৷
ছবি: AP
শান্তিতে নোবেল জয়
২০০৬ সালের যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ সেবছরের ডিসেম্বরে নরওয়ের রাজধানী অসলো’র টাউন হলে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তসলিমা বেগম৷
ছবি: AP
রাজনীতির ইচ্ছা এবং বিড়ম্বনা
শান্তিতে নোবেল জয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দেন অধ্যাপক ইউনূস৷ তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুতই সরে আসেন তিনি৷ কিন্তু অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিতে নামার এই বাসনার কারণে পরবর্তীতে অনেক রাজনীতিবিদের চক্ষুঃশূল হন তিনি৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘বিদায়’
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছেন৷ বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন ইউনূস৷ এখন (১৮.০৪.১৩) পর্যন্ত ব্যাংকটিতে নতুন কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্ভব হয়নি৷
ছবি: dapd
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ?
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো অধ্যাপক ইউনূসকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বীকার করেননি৷ তবে একথা বহুদিন ধরে চালু যে, অধ্যাপক ইউনূসের উপর কোন কারণে নাখোশ শেখ হাসিনা৷ যেকারণে চলতি সরকারের মেয়াদে নিজ দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া জানান, বৈঠকে এই অনিয়মের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, আয়কর সংক্রান্ত ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেবে এনবিআর এবং অনুমোদনহীন আয়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ প্রয়োজনে এই ২টি প্রতিষ্ঠান আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেবে৷
এনবিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেননি৷ তিনি যে আয়কর রেয়াত নিয়েছেন, তা বিধিসম্মত হয়নি৷ আর আয়কর দাখিলের ক্ষেত্রে তিনি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি৷
এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সদস্য তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ তাঁকে হয়রানির জন্য এটি একটি নতুন কৌশল৷ তিনি জানান, ড. ইউনূসের বিদেশ যাত্রা, বিদেশ থেকে সম্মানী নেয়, পুরস্কার নেয়া সবই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে হয়েছে৷ তিনি অনুমোদন না নিয়ে এসব করেননি৷ আর বিদেশ থেকে আসা আয় আয়করমুক্ত বলে তারা জানেন৷ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কয়েকদিনের মধ্যেই এ নিয়ে বৈঠকে বসবে বলে জানান তিনি৷ আর সেই বৈঠকেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন' অভিযোগ নিয়ে কী করণীয় তা ঠিক করা হবে৷
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে ১৩ই জুলাই সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশ থেকে আনা বৈধ আয়কে আয়করমুক্ত ঘোষণা করা হয়৷ ২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কারের অর্থকেও কর অব্যাহতি দেয়া হয়৷