ন্যাটো মহাসচিব ইয়েনস স্টল্টেনব্যার্গের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘নতুন পরিস্থিতিতে নতুন সমাধানের' ওপর গুরুত্ব দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ পাশাপাশি আহ্বান জানালেন ন্যাটো জোটসঙ্গীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ন্যায্য হিস্যা দেয়ার৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটোর উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প৷ বিশেষ করে অভিবাসন এবং সন্ত্রাসবাদের মতো আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক জোটটিকে প্রস্তুত করার দিকে গুরুত্ব দিতে চান তিনি৷
ওয়াশিংটনে স্টল্টেনব্যার্গের সঙ্গে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক জোটটির প্রতি অ্যামেরিকার দায়বদ্ধতাও পুর্নব্যক্ত করেন ট্রাম্প৷ সন্ত্রাস মোকাবিলায় ন্যাটোর নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময়কার এক বিবৃতির কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, ন্যাটো সেকেলে হয়ে গেছে৷ কিন্তু এটা আর সেকেলে নেই৷''
আসন্ন ব্রাসেলস সফর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ট্রাম্প প্রত্যেক প্রজন্মকে তাদের সময় অনুযায়ী ন্যাটোকে উপযোগী করে নেয়ার দিকে গুরুত্ব দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকের ক্লান্ত চিন্তার মধ্যে আটকে না থেকে বরং গোটা বিশ্বে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন সমাধান প্রয়োগের দিকে এগোতে হবে৷''
অন্যদিকে, ইয়েনস স্টল্টেনব্যার্গ ন্যাটোতে অ্যামেরিকার ভূমিকার প্রশংসা করেন৷ উত্তর ইউরোপে ন্যাটো মিশনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ন্যাটোর কর্মকাণ্ডেরও প্রশংসা করে তিনি বলেন, অন্য কোনো পরাশক্তির এমন সমর্থন নেই৷ ‘‘ন্যাটোকে ধন্যবাদ, বিশ্বের মধ্যে অ্যামেরিকার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং মিত্র রয়েছে'', বলেন তিনি৷
স্টল্টেনব্যার্গ এবং ট্রাম্প দু'জনই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে প্রতিরক্ষাখাতে তাদের বাজেটে সুপারিশকৃত মোট জিডিপির দুই শতাংশ পর্যন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প বলেন, সার্বজনীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যাটো সদস্যরা তাদের আর্থিক বাধ্যবাধ্যকতা মানছেন এবং তাদের ন্যায্য অংশটুকু দিচ্ছেন এটা আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷'' অনেকে এটা করছে না বলেও দাবি করেন ট্রাম্প৷
সংবাদসম্মেলনে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন হামলা পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক কী হবে সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলেননি ট্রাম্প৷ তিনি জানান, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মস্কো সফর শেষে দেশে ফেরার পর এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করা হবে৷
এআই/এসিবি (এপি, এএফপি)
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷