ন্যাটোর চেয়ে ইইউ প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ দরকার জার্মানির
১২ অক্টোবর ২০১৭
জার্মানির প্রতিরক্ষা বিষয়ক এক বইয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা এবং রাশিয়ার আগ্রাসন বার্লিনের চিন্তায় পরিবর্তন এনেছে৷ বইয়ের লেখক পল টেইলর মনে করেন, প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ এবং মনোভাবের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির প্রতিরক্ষা শিল্পের দু'শোর মতো ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মনে করছে না৷ আর বার্লিনের ন্যাটোর চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তাঁরা৷
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘‘ফ্রেন্ডস অব ইউরোপ'' সম্প্রতি একটি বইসহ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে৷ এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জার্মানিকে দেশটির মিত্ররা প্রতিরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা উন্নয়নে উদ্যোগের ইস্যুতে এক ‘ফ্রি রাইডার' হিসেবে বিবেচনা করে, যার অর্থ হচ্ছে, সুবিধা নিলেও এখাতে বিনিয়োগে অনীহা রয়েছে দেশটির৷
আটটি দেশ যাদের সামরিক বাহিনী নেই
বহু দেশ সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে ভালোবাসে, যেমন জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজে৷ মিছিলের সেই সব অস্ত্রশস্ত্র বাস্তবে ব্যবহারও করা হতে পারে৷ অপরদিকে এমন সব দেশ আছে, যাদের সামরিক বাহিনী বলে কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Kurtsikidze
কস্টা রিকা
মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির সংবিধানই বলে যে, দেশের কোনো সামরিক বাহিনী থাকবে না৷ এই পরিস্থিতি চলছে ১৯৪৯ সাল যাবৎ৷ জাতিসংঘের শান্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই কস্টা রিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিখস্টেনস্টাইন
ইউরোপের কেন্দ্রে এই ছোট্ট দেশটি তাদের সামরিক বাহিনী বাতিল করে দিয়েছে সুদূর ১৮৬৮ সালে, আর্থিক কারণে৷ যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠন করা চলে, তবে কোনোদিন তার প্রয়োজন পড়েনি৷ দেশটি ছোট হলেও সমৃদ্ধ: মাথাপিছু আয় বিশ্বে শুধুমাত্র কাতার-এর চেয়ে কম৷
ছবি: Fotolia/S.A.N.
সামোয়া
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাজ্যটি নিউজিল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৬২ সালে৷ সে’যাবৎ দেশটির কোনো সামরিক বাহিনী নেই৷ নিউজিল্যান্ড প্রয়োজনে দেশটির প্রতিরক্ষার জন্য সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv
অ্যান্ডোরা
ইউরোপের এই ছোট্ট দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৭৮ খ্রিষ্টাব্দে৷ আ্যান্ডোরার নিজস্ব সামরিক বাহিনী নেই, কিন্তু প্রয়োজনে স্পেন ও ফ্রান্স দেশটিকে সুরক্ষিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ অ্যান্ডোরার আয়তন মাত্র ৪৭৮ বর্গকিলোমিটার, যা কিনা জাকার্তার মতো কোনো বড় শহরের চেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
তুভালু
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপরাজ্যটির আয়তন মাত্র ২৬ বর্গ কিলোমিটার; জনসংখ্যা মাত্র দশ হাজার৷ তুভালু কমনওয়েল্থের সদস্য৷ এখানকার শাসনব্যবস্থা এক ধরণের সংসদীয় রাজতন্ত্র৷
ছবি: AP
ভ্যাটিকান
ইটালির রাজধানী রোম-এর একাংশ৷ ভ্যাটিকান হলো বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ, আয়তনে শূন্য দশমিক চার বর্গ কিলোমিটার৷ জনসংখ্যা ৮৪০৷ কাজেই জনসংখ্যার হিসেবেও ভ্যাটিকান বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ৷
ছবি: picture-alliance/Arco/Schoening
গ্রেনাডা
অতলান্তিক মহাসাগরের ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত দেশটি আসলে মাত্র একটিমাত্র দ্বীপ, যার আয়তন ৩৪৪ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা এক লক্ষ পাঁচ হাজার৷ দেশটি কমনওয়েল্থের সদস্য৷ শাসনব্যবস্থা: সাংবিধানিক রাজতন্ত্র৷
ছবি: shaggyshoo/nd
নাউরু
প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপরাজ্যটির আয়তন ২১ বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি; জনসংখ্যা দশ হাজার৷ নাউরু মাইক্রোনেশিয়ার অংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
লেখক পল টেইলর মনে করেন, গত কয়েক বছরে বিশ্বে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তার সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকেও খাপ খাওয়াতে হবে৷ বিশেষ করে, দু'টি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি, যা জার্মানির প্রতিরক্ষার সঙ্গেও সম্পৃক্ত হতে পারে৷ প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালে৷ সে বছর ক্রাইমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া৷ আর ২০১৫ সালে শরণার্থীদের স্রোত নামে ইউরোপের দিকে৷ টেইলর বলেন, ‘‘আপাত দৃষ্টিতে জার্মানিকে ইউরোপের মাঝখানে দেশটির ন্যাটো মিত্র এবং ইইউ সঙ্গী দ্বারা বেষ্টিত মনে হলেও ঘটনা দু'টি দেশটির উপর প্রভাব ফেলেছে৷''
তিনি মনে করেন, জার্মানির প্রকৃত সীমান্ত যাই হোক, কার্যত পুরো শেঙেন অঞ্চলের সুরক্ষায় দেশটির দায়িত্ব রয়েছে যা ম্যার্কেল দেরিতে হলেও অনুধাবন করছেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, গত কয়েকবছরে জার্মানির সামরিক বাহিনীর বাজেট কমিয়ে কমিয়ে সেটিকে দুর্বল করে ফেলেছেন তিনি৷
অবশ্য একটি দুর্বল বাহিনীকে সবল করতে যে বাজেট প্রয়োজন, তা জার্মানির জন্য কোন সমস্যা নয় বলে মনে করেন টেইলর৷ তাঁর মতে, এখানে মানসিকতাটা গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বলেন, ‘‘অতীত ইতিহাসের ছায়ার কারণে জার্মানদের জন্য কাজটা কঠিন৷''
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না বলে কয়েক মাস আগে স্বীকার করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জার্মানি প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ নেবে বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷