আইএস এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক৷ আত্মঘাতী হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর শুরু করা এ অভিযানের পাশাপাশি ন্যাটোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকেও বসছে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে উত্তর অ্যাটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ‘ন্যাটো’-র সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে তুরস্ক৷ সে দেশে এক সপ্তাহব্যাপী ভয়াবহ সহিংসতার পর প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভোতলু ন্যাটোর প্রতি জরুরি বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানান৷ সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সামরিক জোটটির ২৮টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবারই একত্র হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এক বিবৃতিতে ন্যাটো ইতিমধ্যে বলেছে, ‘‘(তুরস্কে) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি খুবই খারাপ’’আর তাই এমন বৈঠক হওয়াটা সত্যিই জরুরি৷
গত কয়েকদিনে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে তুরস্ক৷ সিরিয়া সীমান্তের কাছে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় সম্প্রতি ৩২ জন মারা যায়৷ হামলাটির জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী মনে করছে তুরস্ক সরকার৷ এছাড়া তুর্কি সেনাবাহিনীর ওপরও হামলা চালিয়েছে আইএস৷ সে হামলায় এক সেনাসদস্য মারা যান৷ এরপর শুক্রবার খেকে সিরিয়া সীমান্তে আইএস-এর ঘাঁটি এবং উত্তর ইরাকে কুর্দি বিদ্রোহীদের ঘাঁটির ওপর বিমান হামলা শুরু করে তুরস্ক৷ হামলা এখনো চলছে৷
কুর্দিদের ওপর হামলার ফলে ২০১৩ সাল থেকে তুরস্ক সরকার এবং কুর্দি বিদ্রোহী সংগঠন পিকেকে-র মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল৷ রবিবার পিকেকে জানিয়েছে, তুরস্ক হামলা শুরু করায় দু’বছর আগের শান্তি চুক্তিটির আর কোনো কার্যকারিতা নেই৷
বিমান হামলার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক ধরপাকড়ও শুরু করেছে তুরস্ক৷ শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৫১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা সরকারি সূত্রই নিশ্চিত করেছে৷ গ্রেপ্তারকৃতরা আইএস, পিকেকে অথবা মার্ক্সবাদী দল ‘ডিএইচকেপি-সি’-র সমর্থক বলে জানানো হয়েছে৷
এদিকে রবিবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী দাভোতলুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মানি তুরস্কের পাশে থাকবে৷ তবে পিকেকে-র প্রসঙ্গে ম্যার্কেলের প্রত্যাশা, তুরস্ক যেন ‘‘সব রকমের জটিলতা সত্ত্বেও কুর্দিদের সঙ্গে শান্তির প্রক্রিয়া’’ অব্যাহত রাখে৷
তুরস্ক জানিয়েছে, তিন হাজারের মতো শরণার্থী সপ্তাহান্তে সেদেশে প্রবেশ করেছে৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায় সিরীয়রা তাদের সবকিছু ফেলে রেখে দেশত্যাগ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
বাধ্য হয়ে পলায়ন
গত সপ্তাহে ১৩ হাজারের মতো সিরীয় সেদেশের তেল আবিয়াত শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে৷ আধুনিক ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংস প্রচারণার জন্য বিদেশে সেনা নিয়োগে শহরটি ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী৷ তুরস্ক অবশ্য শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি৷ ফলে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
জঙ্গি এবং বন্ধ সীমান্তের মাঝে
কুর্দি সেনারা ধীরে ধীরে তেল আবিয়াত শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে শহরটির কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম দখল করেছে তারা৷ কুর্দিদের ঠেকাতে দুটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট৷’ তবে, কিছু সিরীয় গোলাগুলির মাঝে আটকে পড়ে শহরটিতে রয়ে গেছে৷ আর যারা সেখান থেকে বের হতে পেরেছে, তারা বাধা পেয়েছে সীমান্তে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
‘ইসলামিক স্টেট’-এর থাবা থেকে রক্ষা
গত সপ্তাহান্তে তিন হাজারের মতো শরণার্থী সিরীয়-তুর্কি সীমান্ত অতিক্রম করেছে৷ ছবিতে কিছু সিরীয়কে দেখা যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ তেল আবিয়াত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নিয়োগ কেন্দ্র হলেও কুর্দি সেনারা সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছিল সিরীয়রা৷
ছবি: Reuters/K. Celikcan
‘সীমান্তের মধ্যে থাকুন’
সিরীয়রা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে গরম পানি এবং ‘পিপার স্প্রে’ করে তুর্কি বাহিনী৷ এক পর্যায়ে অবশ্য একটি সীমান্ত অনিচ্ছুকভাবে খুলে দেয়া হয়৷ তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুর্টুলমুস জানিয়েছেন, সিরীয়রা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ আমরা তাদের সীমান্তের মধ্যে রাখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইউএনএইচসিআর-এর কাছে নথিভুক্ত ৪০ লাখ সিরীয়
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মে মাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, চল্লিশ লাখের মতো শরণার্থী তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে৷ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন অবধি সতের লাখের মতো শরণার্থী গ্রহণ করেছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Gurgah
সবচেয়ে ‘বেশি ভুগছে’ শিশুরা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আন্থনিও গুটারেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে সিরীয় ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকহারে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তুরস্কে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
যথেষ্ট নয়
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পটি খুলে দিয়েছে৷ সুরুচ ক্যাম্পে ৩৫ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করে৷ আরো ৯০ হাজার শরণার্থীর অবস্থান দেশটির ২৫টি ক্যাম্পে৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর প্রশংসা সত্ত্বেও তুরস্ক রেকর্ড সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
পেছনে ফেলে আসা
তেল আবিয়াত শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে কোবানিতে এখনও কিছু সিরীয় রয়ে গেছেন৷ ইসলামিক স্টেট-এর গণহারে মানুষ হত্যা এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর হামলায় শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খাবার এবং বিদ্যুতের অভাব রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও অল্প কিছু মানুষ শহরটিতে টিকে থাকার লড়াই করছে৷